Thank you for trying Sticky AMP!!

স্বল্প শিক্ষিত প্রার্থীর হার বেড়েছে: সুজন

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের তথ্য উপস্থাপন এবং অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষে গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময় সুজন সিলেট জেলা কমিটির। আজ সোমবার সিলেট নগরের ধোপাদিঘীরপাড়ের একটি রেস্তোঁরায়

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২০১৮ সালের তুলনায় এবার স্বল্প শিক্ষিত প্রার্থীর হার বেড়েছে। গত নির্বাচনে স্বল্প শিক্ষিতের হার ৬৬ দশমিক ১৫ শতাংশ ছিল। এবার সেটি বৃদ্ধি পেয়ে ৬৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ হয়েছে।

এদিকে কমেছে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী প্রার্থীর হারও। গত নির্বাচনে উচ্চ শিক্ষিতের হার ২১ দশমিক ৫৩ শতাংশ হলেও এবার কমে ২১ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ হয়েছে। মাধ্যমিকের গণ্ডি অতিক্রম করেননি এমন প্রার্থীর হার গতবারের তুলনায় ৩ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে ৫৫ দশমিক ১৯ শতাংশ হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার সিলেট নগরের একটি হোটেলের সম্মেলনকক্ষে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সিলেট জেলা কমিটির আয়োজিত অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের তথ্য উপস্থাপন উপলক্ষে গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
সুজন সিলেট জেলার সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে এসব তথ্য উপস্থাপন করেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ সরকার।

দিলীপ সরকার বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র, সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ৩৬৭ জনের মধ্যে ৩৬৬ জনের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সালেহা কবীরের হলফনামাস্থলে অন্য কাউন্সিলর প্রার্থীর তথ্য সন্নিবেশিত থাকায়, সেটি বিশ্লেষণ করা যায়নি।

সিলেট সিটি করপোরেশনের সাতজন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাহমুদুল হাসান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. শাহ জাহান মিয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক। একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবদুল হানিফ এইচএসসি পাস ও জহিরুল আলম অষ্টম শ্রেণি এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন ‘স্বশিক্ষিত’ (এসএসসির নিচে)।
এ ছাড়া ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৭৩ সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ১৪৩ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসির নিচে, ৩৯ জনের এসএসসি, ২৭ এইচএসসি, ৪২ স্নাতক ও ১৭ জন স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। পাঁচজন কাউন্সিলর প্রার্থী শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘর পূরণ করেননি।

এদিকে ৮৬ কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ৫০ প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসির নিচে, ১৪ জন এসএসসি, ৬ এইচএসসি, ৯ স্নাতক ও ৬ জন স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। একজন প্রার্থী শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘর পূরণ করেননি।

সুজন প্রার্থীদের তথ্য বিশ্লেষণে বলেছে, স্বল্প শিক্ষিত প্রার্থী বৃদ্ধি পাওয়া এবং উচ্চ শিক্ষিত প্রার্থীর হার হ্রাস পাওয়া নিঃসন্দেহে একটি নেতিবাচক বিষয়। তবে সম্প্রতি অন্যান্য সিটি করপোরেশনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে এর বিপরীত চিত্র দেখা গেছে।


বেড়েছে ব্যবসায়ী প্রার্থীর হার
নির্বাচনে গতবারের তুলনায় ব্যবসায়ীর হার ৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেড়ে ৫৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ হয়েছে। নির্বাচনে তথ্য বিশ্লেষণ করা ৩৬৬ প্রার্থীর মধ্যে ২০৭ জনের পেশা ব্যবসা। ২৪ জন চাকরিজীবী ও ১২ জন আইনজীবী। মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সাতজনই ব্যবসায়ী। এর মধ্যে এক প্রার্থী মো. শাহ জাহান মিয়া ব্যবসার পাশাপাশি শিক্ষকতাকেও তাঁর পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সাধারণ ওয়ার্ডের ২৭৩ কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ১৮৯ জনই ব্যবসায়ী। ২৫ জন কৃষিজীবী, ১৮ চাকরিজীবী ও ৯ জন আইনজীবী। পেশার ঘর পূরণ করেননি ২২ প্রার্থী। ৮৬ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ৪৭ গৃহিণী। ১১ জন ব্যবসায়ী ও ৩ জন আইনজীবী। এ ছাড়া ছয়জন পেশার ঘর পূরণ করেননি।

সুজনের বিশ্লেষণে বলা হয়, অন্যান্য নির্বাচনের মতো সিলেট সিটি করপোরেশনেও ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য লক্ষ করা যাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের আধিক্য ও অন্যান্য পেশার প্রতিনিধি হ্রাস পাওয়া ইতিবাচক নয়। একই সঙ্গে তা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্যেও মঙ্গলজনক নয়।

সুজনের বিশ্লেষণে আরও জানানো হয়, প্রার্থীদের মধ্যে ১৫৫ জন ৫ লাখ টাকার কম সম্পদের মালিক। ৫ থেকে ২৫ লাখ টাকার সম্পদের মালিক ১৩৬ জন। ২৫ থেকে ৫০ লাখ টাকার সম্পদের মালিক ২৯ জন, ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকার মালিক ১৩ জন। ১ থেকে ৫ কোটি টাকার মালিক ১৩ জন। এ ছাড়া ২০ প্রার্থী সম্পদের তথ্য দেননি। যদিও এ চিত্রটি কোনোভাবেই সম্পদের প্রকৃত চিত্র নয় বলে বিশ্লেষণে বলা হয়েছে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে প্রার্থীদের মধ্যে অধিকাংশই স্থাবর সম্পদের মূল্য উল্লেখ করেননি। আবার উল্লেখিত মূল্য বর্তমান বাজারমূল্য নয়, সেটি অর্জনকালীন মূল্য। অধিকাংশ প্রার্থীর সম্পদের পরিমাণ প্রকৃতপক্ষে আরও অনেক বেশি বলে মনে করে সুজন। এ জন্য সম্পদের চিত্র তুলে ধরতে তথ্যের ছকটি পরিবর্তন বলে মন্তব্য করে বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন থেকেই নির্বাচন কমিশনকে বলে আসছে সুজন।

এ ছাড়া গত নির্বাচনের তুলনায় সিলেটের প্রার্থীদের আয়কর প্রদানকারীদের হার হ্রাস, দায়-দেনাগ্রস্ত প্রার্থীর হার বৃদ্ধি এবং প্রার্থীদের মধ্যে বর্তমান ও অতীত মামলার হার কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।

সভায় বক্তব্য দেন সুজন সিলেটের যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান।