Thank you for trying Sticky AMP!!

মাটি কেটে নেওয়ার কারণে ঝুঁকিতে পড়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। গতকাল সকালে শরীয়তপুর সদর উপজেলার দাদপুর এলাকায়

নদীর তীর কেটে মাটি বিক্রি, ঝুঁকিতে বিদ্যুতের খুঁটি

মাটি কেটে নেওয়ায় চারটি বিদ্যুতের খুঁটি ঝুঁকিতে পড়েছে। স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগ আশঙ্কা করছে, খুঁটিগুলো যেকোনো সময় পড়ে যেতে পারে।

শরীয়তপুর সদর উপজেলার কীর্তিনাশা নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন স্থান থেকে মাটি কেটে বিক্রি করে দিচ্ছেন মালিকেরা। মাটি কেটে নেওয়ার কারণে ঝুঁকিতে পড়ছে বিদ্যুতের খুঁটি, সঞ্চালন লাইনসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এদিকে কীর্তিনাশা নদীর তীর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের কাজ চলছে। অপরিকল্পিতভাবে মাটি কেটে নেওয়ার কারণে তীর রক্ষা বাঁধ ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বলেন, বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ অনুযায়ী নদীর তীর থেকে মাটি কাটা বেআইনি। আইন অনুযায়ী, কোনো গ্যাসের লাইন, বিদ্যুৎ লাইন, পয়োনিষ্কাশন লাইন বা অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ লাইন বা তৎসংশ্লিষ্ট স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে বালু বা মাটি তোলা যাবে না। এ ছাড়া নদীর ভূপ্রাকৃতিক পরিবেশ, প্রতিবেশ, জীববৈচিত্র্য, মৎস্য, জলজ ও স্থলজ প্রাণী, ফসলি জমি বা উদ্ভিদ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও মাটি উত্তোলন করা যাবে না।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এবং সরেজমিনে দেখা গেছে, কীর্তিনাশা নদীর অন্তত ১০টি স্থানে নদীর তীরসহ আশপাশের জমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। কিছু স্থান থেকে রাতের আঁধারে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। এসব মাটি ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে বলে জমির মালিকেরা জানিয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে ভাটার শ্রমিকেরা এসেই মাটি কাটছেন। মাটি কেটে নেওয়ায় চারটি বিদ্যুতের খুঁটি ঝুঁকিতে পড়েছে। স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগ আশঙ্কা করছে, খুঁটিগুলো যেকোনো সময় পড়ে যেতে পারে।

■ কীর্তিনাশা নদীর অন্তত ১০টি স্থানে নদীর তীরসহ আশপাশের জমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছে।  ■ এসব মাটি ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ভাটার শ্রমিকেরা এসেই মাটি কাটছেন। 

দাদপুর এলাকার মহজেল মোড়ল তাঁর জমির মাটি বিক্রি করে দিয়েছেন। রাতের আঁধারে একটি ইটভাটার শ্রমিকেরা ওই মাটি কেটে নিয়ে গেছেন। সেখানে মাটি কাটার ফলে তিনটি বিদ্যুতের খুঁটি ঝুঁকিতে পড়েছে। মহজেল মোড়ল বলেন, নদীর তীরবর্তী জমি হওয়ায় কোনো ফসল হয় না। এখানে গরুর ঘাস আবাদ করেন তিনি। বর্ষা মৌসুমে এসব জমি পানিতে তলিয়ে যায়। তখন বালু জমে থাকে। এ কারণে মাটি বিক্রি করেছেন। মাটি কাটার কারণে বিদ্যুতের খুঁটি ঝুঁকিতে পড়েনি।

শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক আলতাফ হোসেন বলেন, বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনের খুঁটির আশপাশ থেকে কেউ মাটি কাটতে পারবেন না। এ কাজটা অন্যায়ভাবে করা হয়েছে। এভাবে মাটি কেটে নেওয়ার ফলে বিদ্যুতের খুঁটি ঝুঁকিতে পড়েছে। এখন তাঁরা খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন।

জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বলেন, জেলায় ৪০টির মতো ইটভাটা রয়েছে। ভাটাগুলোতে যে মাটি ব্যবহার করা হয়, তা বিভিন্ন স্থান থেকে প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে সংগ্রহ করা হয়। নদীর তীরের মাটি তাঁরা ব্যবহার করেন না।

পাউবো ও স্থানীয় সূত্র জানায়, পদ্মা নদীর শরীয়তপুরের নড়িয়া থেকে মাদারীপুরের আড়িয়াল খাঁ নদীতে গিয়ে কীর্তিনাশা নদী মিশেছে। ৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ নদীর ১৫ দশমিক ৩৩ কিলোমিটার অংশকে ভাঙনমুক্ত করার জন্য নদীর তীর রক্ষা বাঁধের কাজ চলছে। ৩৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৩টি স্থানে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার পালং ইউনিয়নের পূর্ব কোটাপাড়া এলাকায় কীর্তিনাশা নদীতে তীর রক্ষা বাঁধের কাজ চলছে। তার বিপরীত দিকে নদীর অপর প্রান্তে জপসা এলাকা থেকে একটি চক্র রাতের আঁধারে মাটি কেটে নিয়ে গেছে।

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব বলেন, নদীতীরবর্তী বিভিন্ন স্থান থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। পাশাপাশি নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। কীর্তিনাশা নদীর যে অংশ থেকে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে, সে অংশ ভাঙনের কবলে পড়বে। আর প্রকল্পের কিছু অংশও ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তাঁরা বিষয়টি মৌখিকভাবে স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছেন। মাটি কেটে নেওয়া বন্ধের জন্য তাঁদের চিঠি দিয়ে জানানো হবে।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাইনউদ্দিন বলেন, নদীতীরবর্তী এলাকা থেকে মাটি কেটে নেওয়ার কোনো তথ্য তাঁদের কাছে নেই। কাউকে মাটি কাটার অনুমতিও দেওয়া হয়নি। নদীর তীর থেকে মাটি কাটার বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হবে।