Thank you for trying Sticky AMP!!

‘মন চায় উৎসবে গ্রামে যাই, কিন্তু দায়িত্ব তা হতে দেয় না’

ঈদের দিন কাজ করছেন শরীয়তপুর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। আজ দুপুরে

ঈদের দিনে প্রিয়জনকে ছেড়ে সড়কে, কর্মস্থলে ও ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে দায়িত্ব পালন করছেন কয়েক শ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী। তাঁরা অনেকে চার-পাঁচ বছর ধরে ঈদে বাড়িতে যেতে পারেন না। মানুষের ঈদের আনন্দ নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করতে বুকে কষ্ট চেপে রেখে দায়িত্ব পালন করছেন। অনেকে ঈদের নামাজ আদায় করেই ছুটছেন নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে।

শরীয়তপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের লিডার আবদুল হাকিম খান সহকর্মীদের নিয়ে আজ সকাল আটটার দিকে শরীয়তপুর পৌর ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করছিলেন। এমন সময় খবর আসে, জাজিরার মঙ্গল মাঝির ঘাট এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তখন তিনি তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে এসে ১২ সদস্যর দল নিয়ে জাজিরার দিকে রওনা দেন। ১৫ কিলোমিটার যাওয়ার পর জানতে পারেন যে জাজিরা ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে।

আবদুল হাকিম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই বছর ধরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পারছি না। তিন শিশুসন্তান, মা–বাবা ও স্ত্রী বাড়িতে আমার অপেক্ষার প্রহর গুনছে। কিন্তু মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব কাঁধে থাকায় আমি পরিবারের কাছে নেই।’

ঈদের দিন সড়কে দায়িত্ব পালন করেছন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। আজ সকালে শরীয়তপুর–মাদারীপুর সড়কের ধানুকা এলাকায়

শরীয়তপুর জেলায় আটটি থানা, চারটি পুলিশ ফাঁড়ি ও দুটি ক্যাম্প রয়েছে। তাতে ১ হাজার ৮১ জন পুলিশ কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্য কর্মরত আছেন। এ বছর ঈদে ২৫১ জন কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্য ছুটি পেয়েছেন। বাকি ৮৩০ জন পুলিশ কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্য কর্মস্থলে রয়েছেন। শরীয়তপুরে ৬টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে ১২০ জন কর্মরত আছেন। তাঁদের মধ্যে ৩৫ জন ঈদের ছুটিতে বাড়িতে গেছেন।

পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সহকারী শহর উপপরিদর্শক মো. আছের উদ্দিন সকাল থেকে শরীয়তপুর-মাদারীপুর সড়কের ধানুকা এলাকায় দায়িত্ব পালন করছেন। ১৫ মিনিটের বিরতিতে পুলিশ লাইনস মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। আছের উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন বছর ধরে শরীয়তপুরে কর্মরত আছি। ঈদে ছুটিতে বাড়িতে যেতে পারি না। পরিবারের সদস্যরা মন খারাপ করে। আমারও তাদের কথা ভেবে কষ্ট হয়। শহরের বেশ কিছু জায়গায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে ঈদগাহে যেতে পারেন, তার জন্য সকাল থেকেই সড়কে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করছি।’

ঈদের দিন সকালে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন পুলিশ সুপার মাহবুবুল আলম। আজ শরীয়তপুর পুলিশ লাইনসে

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এক যুগ আগে পুলিশে যোগ দিয়েছেন। কখনো ঈদে ছুটি পাননি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘গ্রামে না গেলে শেকড় হালকা হয়ে যায়। শৈশব-কৈশোরের স্মৃতি ধূসর হয়ে যায়। মন চায় উৎসবে গ্রামে প্রিয়মুখের কাছে ফিরে যাই। কিন্তু দায়িত্ব তা হতে দেয় না।’

পুলিশ সদস্যদের মাঝে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিতে পুলিশ সুপার মাহবুবুল আলম ঈদের সকালে আসেন জেলা পুলিশ লাইনসে। সব সদস্যকে নিয়ে তিনি ঈদের নামাজ আদায় করেন। সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। তাঁদের পরিবারের খোঁজখবর নেন। পুলিশ লাইনসের খাবার ঘরে বসে মিষ্টিমুখ করেন, সকালের নাশতা করেন। দুপুরে সব পুলিশ সদস্যের জন্য রান্নার আয়োজন করা হয়।

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলা মঙ্গল মাঝিরঘাট বাজারে আগুন লেগে ২০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভস্মীভূত হয়েছে। আজ সকালে

শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মাহবুবুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মানুষের সেবা ও নিরাপত্তা দেওয়ার শপথ নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। মানুষ যাতে আনন্দে, নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে উৎসব উদযাপন করতে পারেন, তার সব দায়িত্ব আমাদের কাঁধে। আমাদের পুলিশ সদস্যরা অনেকে চার-পাঁচ বছর ধরে পরিবারের প্রিয় মানুষের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পারেন না। এটা অনেক কষ্টের। কর্মস্থলে সবাই মিলে আমরা একটা পরিবার। আমাদের এ পরিবারের সবাই যাতে নিজের পরিবারের সঙ্গে মিলিত হতে না পারার কষ্ট ভুলে ঈদের আনন্দ উদযাপন করতে পারেন, তার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একটা উৎসবমুখর ও নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখতে পারলেই আমাদের এ আত্মত্যাগ পরিপূর্ণতা পাবে।’