Thank you for trying Sticky AMP!!

পাহাড়ের অনলাইন বাজার ‘রেফ’ 

দুই বছর আগে ২০২০ সালে করোনার সময় ফোরামটির যাত্রা শুরু। সক্রিয় উদ্যোক্তা আছেন পাঁচ হাজার।

রাঙামাটিতে চলমান শিল্প ও বাণিজ্য মেলায় নিজেদের পণ্য প্রদর্শনীর প্রস্তুতি নিচ্ছেন রাঙামাটি ই–কমার্স ফোরামের সদস্যরা। সম্প্রতি শহরের কালিন্দীপুর এলাকায়

ছোটবেলা থেকে সংগ্রামের জীবন শিখা চাকমার। বাবার তেমন আয় নেই। সবজি বিক্রি করে সংসার চালাতেন মা। তিনিও অসুস্থ। দুই বোনের মধ্যে বড় শিখা রাঙামাটি সরকারি কলেজে স্নাতকে পড়ার পাশাপাশি হাল ধরেছেন সংসারের। গয়না তৈরি করে বিক্রি করছেন অনলাইনে। সেই আয় দিয়ে চলছে সংসার।

রাঙামাটি ই–কমার্স ফোরাম (রেফ) নামের একটি অনলাইন গ্রুপের মাধ্যমে শিখা অনলাইনে এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ রকম প্রায় পাঁচ হাজার সক্রিয় উদ্যোক্তা রয়েছেন ফেসবুক গ্রুপটির। যাঁদের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ও তরুণী। নিজেরা আয় করে নিজেদের পড়ালেখার খরচ জোগান তাঁরা। পাশাপাশি পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করে থাকেন। এভাবে প্রতি মাসে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকার ব্যবসা করেন তাঁরা। পোশাক, গয়না, শুঁটকি, সবজি, ফল—কী নেই তাঁদের এ অনলাইন বাজারে। সবকিছু পাওয়া যাচ্ছে নিমেষে। পাহাড়ি–বাঙালি মিলে গ্রুপটি গড়ে উঠেছে।

দুই বছর আগে ২০২০ সালে করোনার সময় ফোরামটির যাত্রা শুরু। রাঙামাটি সদরসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত তরুণ-তরুণীদের নিয়ে গড়ে ওঠে এই ফোরাম। এখন ফলোয়ারের সংখ্যা ৭০ হাজার। প্রতি ঘণ্টায় ৩০০–৪০০ জন নিজেদের পণ্য এখানে বিক্রির জন্য প্রদর্শন করে থাকেন। ফোরামের অন্যতম উদ্যোক্তা সানজিদা সাবরিন। এ গৃহবধূ সংসারের পাশাপাশি অনলাইন প্ল্যাটফর্মটি চালুর উদ্যোগ নেন। তিনি নিজে মডারেটর। এ ছাড়া ১১ জন অ্যাডমিন রয়েছেন প্ল্যাটফর্মটির।

সানজিদা বলেন, তাঁদের সক্রিয় উদ্যোক্তা পাঁচ হাজার। অনিয়মিত উদ্যোক্তা সমসংখ্যক। ৭০ হাজার ফলোয়ার এখানে বেচাকেনার সঙ্গে যুক্ত। মূলত তিন পার্বত্য জেলার তরুণ–তরুণী ও গৃহবধূরা এর সদস্য। ১০ হাজার উদ্যোক্তার বেশির ভাগ সদস্য পড়ালেখা করেন। কেউ উচ্চমাধ্যমিক, কেউবা স্নাতক, এমনকি দশম শ্রেণিপড়ুয়াও রয়েছে। সব ধরনের পণ্যের ব্যবসা হয়। বিদেশে তাঁদের গ্রাহক রয়েছেন। 

সানজিদা কাজ করেন পোশাক ও খাবার নিয়ে। তাঁর মাসে বিক্রি স্বাভাবিক সময়ে ৩০ হাজার টাকার বেশি। পূজা, পার্বণ, বিজু উৎসব, ঈদ কিংবা অন্য কোনো অনুষ্ঠানে তা বেড়ে যায়। 

এ ফোরামে শিশুদের পোশাক নিয়ে কাজ করে জান্নাতুল নূর। সে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। নিজের আয় দিয়ে সে তার পড়ালেখার খরচ জোগায়। রাঙামাটির বিভিন্ন উপজেলা থেকে এসে সদরে থেকে তাঁরা পড়াশোনা করেন। বেশির ভাগ বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন।

নিশিতা চাকমা স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে পড়েন রাঙামাটি সরকারি কলেজে। তিনি গয়না নিয়ে কাজ করেন। তাঁর বাড়ি জুরাছড়িতে। তাঁর আয় এখন মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকা। রাঙামাটি সদরে কথা হয় নিশিতাসহ কয়েকজনের সঙ্গে। নিশিতা বলেন, তাঁর বাবা স্ট্রোক করেছেন সম্প্রতি। জুরাছড়িতে রয়েছেন। বাবার চিকিৎসা, নিজের এবং ভাইয়ের পড়ালেখার খরচ তাঁকে বহন করতে হচ্ছে। এখন বিক্রি ৬০–৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয় তাঁর। 

এখানে যাঁরা যুক্ত আছেন, তাঁদের বেশির ভাগ নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত। প্রত্যেকের রয়েছে সংগ্রামের জীবন। ফেনসি তালুকদারের বাড়ি নানিয়ারচর উপজেলায়। রাঙামাটি সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রথম বর্ষের এই ছাত্রী তিন বছর ধরে পাঞ্জাবি নিয়ে কাজ করছেন। প্রথম দিকে নিজের ফেসবুকে আপলোড দিতেন। কিন্তু তখন সাড়া পেতেন না। দুই বছর আগে এ ফোরামে যুক্ত হওয়ার পর থেকে বেচাকেনা বেড়ে গেছে।

বান্দরবানের রোজী বম উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষে পড়েন। থাকেন বান্দরবানে। তিনিও পড়ালেখার খরচ জোগাচ্ছেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হয়ে। তিনি থ্রিপিস তৈরি করেন।

শিক্ষার্থীর পাশাপাশি গৃহবধূ, যাঁরা পরিবারের চাপে চাকরি করতে পারছেন না, এমন সদস্যও রয়েছেন। তেমনি একজন সুবর্ণা তনুকা। সংসারের ঝামেলায় চাকরি করতে পারছেন না। তাই তিনি এখন বেছে নিয়েছেন গ্রুপটিকে। তিনি ঘি–মধু নিয়ে কাজ করেন। 

রয়েছেন কিশোর–তরুণেরাও। তাদের একজন উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্র শান্তি আলো চাকমা। এ তরুণ নিজে সুতা কিনে পিনন ও পাঞ্জাবি তৈরি করেন। তাঁর বাড়ি সুবলং এলাকায়। থাকেন সদরে। তিনি বলেন, তাঁর মা তাঁত বুনতেন। কিন্তু তাতে খুব একটা লাভ হতো না। পরে তিনি ডিজাইন করে পিনন হাদি ও পাঞ্জাবি বানানো শুরু করেন। এখন স্বাবলম্বী তাঁরা। 

অ্যাডমিন এন কে এম মুন্না তালুকদার বলেন, তাঁদের এ গ্রুপে পাহাড়ি–বাঙালি কোনো ভেদাভেদ নেই। সবাই যুক্ত হয়ে কাজ করতে পারেন। তবে ছেলের সংখ্যা কম। বেশির ভাগ উদ্যোক্তা মেয়ে। উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকেন তাঁরা। এ ছাড়া স্বল্প পরিসরে ঋণদান কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয় ফোরামের উদ্যোগে।

রাঙামাটি চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মো. আবদুল ওয়াদুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাঙামাটিতে ই–কমার্স নারীদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সংগঠন। তাঁরা বেশির ভাগ পণ্য অনলাইনে বিক্রি করেন। সংগঠনের সদস্যরা অধিকাংশ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ই–কমার্স সংগঠনটি আমাদের সদস্য। তাঁরা ভালো কাজ করছেন।’