Thank you for trying Sticky AMP!!

সবার আগে জয়ী করতে হবে দেশকে

শিখো-প্রথম আলো জিপিএ–৫ কৃতী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট হাতে শিক্ষার্থীরা। গতকাল কক্সবাজার পৌরসভার বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমি স্কুল ও কলেজ মাঠে।

‘জীবনের একটি ধাপে তোমরা সফল হয়েছ, এ জন্য তোমাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। এখন তোমরা জীবনের কাছে ঋণী হয়ে গেছ। সুতরাং জীবনকে গড়তে ভালো মানুষ হতে হবে। ভবিষ্যৎ জীবনে সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। আর নিজের জয়ের মাধ্যমে জয়ী করতে হবে দেশকে।’

গতকাল শুক্রবার শিখো-প্রথম আলো আয়োজিত এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সচিব ও উত্তরণ মডেল কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম ফজলুল করিম চৌধুরী। অন্যান্য বক্তার কথাতেও ছিল ভালো লেখাপড়ার পাশাপাশি সাধনা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধের আহ্বান।

অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করেন বন্ধুসভার বন্ধু অজুফা ইয়াসমিন।

প্রথম আলোর আয়োজনে কক্সবাজার শহরের ঐতিহ্যবাহী বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমিতে (উচ্চবিদ্যালয়) এ অনুষ্ঠান হয়। এতে পৃষ্ঠপোষকতা করছে শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম শিখো। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নানা আয়োজনে উচ্ছ্বাসে মেতেছিল অন্তত দেড় হাজার কৃতী শিক্ষার্থী। সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আরও কয়েক শ অভিভাবক। তাঁদের অনেকে এসেছেন দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, টেকনাফ থেকে পাহাড়-নদী-সাগর পেরিয়ে।

শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছিল আগেই। সকাল ১০টায় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উৎসব। কক্সবাজার শহরসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে উৎসবে অংশ নেয় অনেক শিক্ষার্থী।

উৎসবে অংশ নিয়ে উচ্ছ্বসিত কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার শিলখালী উচ্চবিদ্যালয়ের জিপিএ-৫ পাওয়া আশরাফুল ইসলাম জানায়, উৎসবে এসে অনেক দিন পর দেখা হয়েছে বন্ধুদের সঙ্গে।

দল বেঁধে ৭০ কিলোমিটার দূরের চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ থেকে এসেছে ফারিহা তানজিন, উম্মে হাফছা, সূচনা দাশ, হুরাইয়া মাহনূর ও সুদীপ ধর। মেয়ে সারিকা ছেহেরীনকে নিয়ে উৎসবে যোগ দিয়েছেন হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সচিব সালাহউদ্দিন কাদের। তিনি বলেন, ‘অতিথিদের বক্তব্য থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছে তাঁর মেয়ে।’

উৎসবে শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন প্রথম আলোর কক্সবাজারের নিজস্ব প্রতিবেদক আব্দুল কুদ্দুস। তিনি মাদক, মুখস্থবিদ্যা ও মিথ্যাকে না বলতে শিক্ষার্থীদের অঙ্গীকার করান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো কক্সবাজার বন্ধুসভার সভাপতি উম্মে সাদিয়া হোসেন সিকদার।

অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর চিফ স্পোর্টস এডিটর উৎপল শুভ্র বলেন, এ উৎসবে সবচেয়ে ব্যতিক্রমী দিকটি হলো, সমাজের জন্য কাজ করে যাওয়া মানুষজনকে খুঁজে এনে স্বীকৃতি জানানো। এতে অন্যরাও এ কাজে উৎসাহিত হবে। কৃতীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, শুধু জিপিএ-৫ পেয়ে বসে থাকলে চলবে না। লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে কঠোর সাধনার বিকল্প নেই।

আত্মরক্ষা কৌশল প্রদর্শন করে পালস-বানী একাডেমির শিক্ষার্থীরা।

পাঁচ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা

উৎসবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়া ও শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান রাখায়, সুবিধাবঞ্চিত মেয়েদের সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করায় এবং মাদক নির্মূলে জনমত গঠনে ভূমিকা রাখায় পাঁচ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা জানানো হয়।

পাহাড়ের ঝুপড়িঘরে থেকে দিনমজুরির কাজ করে নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি সংসারের খরচ জুগিয়ে যাচ্ছে বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমি থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া তানবীর হোসাইন। ভবিষ্যতে সে প্রকৌশলী হতে চায়। অনুষ্ঠানে তাকে প্রথম আলো বন্ধুসভার পক্ষ থেকে ক্রেস্ট দিয়ে সম্মাননা জানানো হয়। তার হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সৈয়দ করিম।

দীর্ঘ ১৯ বছরের শিক্ষকজীবনে মাত্র তিন দিন ছুটি নিয়েছেন ঈদগাঁও আদর্শ শিক্ষা নিকেতনের জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক নুরুল ইসলাম। পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের পেছনে তিনি তাঁর জীবনের বেশির ভাগ সময় ব্যয় করেছেন। অনুষ্ঠানে তাঁকে করতালির মাধ্যমে অভিবাদন জানানো হয়। তাঁর হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন লোহাগাড়ার আলহাজ মোস্তাফিজুর রহমান কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুল হক।

কক্সবাজার জেলায় গত ১০ বছরে প্রায় ৯ হাজার মাদকাসক্তকে স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিয়েছে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী মাদকবিরোধী সংগঠন ‘নোঙর’। অনুষ্ঠানে নোঙরের নির্বাহী পরিচালক দিদারুল আলমের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ সোলাইমান।

গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় তায়কোয়ান্দো প্রতিযোগিতায় ৫টি স্বর্ণপদক, ১১টি তামা ও রৌপ্যপদক পেয়েছিল কক্সবাজারের সুবিধাবঞ্চিত ১১ কিশোরী। একসময় তারা সমুদ্রসৈকতে শামুক ও ঝিনুকের মালা বিক্রি করে সংসার চালাত। এখন তাদের পড়াশোনার পাশাপাশি আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে তায়কোয়ান্দো প্রশিক্ষণ দিচ্ছে কক্সবাজার শহরের বাইপাস সড়কের পালস-বানি একাডেমি। অনুষ্ঠানে স্বর্ণজয়ী পাঁচ কিশোরী ‘আত্মরক্ষার কৌশল’ প্রদর্শন করে উপস্থিত সবাইকে মুগ্ধ করে। স্বর্ণজয়ী পাঁচ কিশোরীকে সম্মাননা জানানো হয়। কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ গিয়াস উদ্দিনের হাত থেকে স্মারকটি গ্রহণ করেন পালস-বানি একাডেমির চেয়ারম্যান আবু মোরশেদ চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ার কারিগর হিসেবে সম্মানিত করা হয় শহরের প্রবীণ শিক্ষক এম সিরাজুল ইসলামকে। তিনি ৪০ বছর ধরে শিক্ষকতা করেছেন। এখনো একটি কলেজ, দুটি উচ্চবিদ্যালয়, একটি চক্ষু হাসপাতাল, চারটি এতিমখানাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে আছেন। তাঁর হাতে বন্ধুসভার সম্মাননা স্মারক তুলে দেন প্রথম আলোর চিফ স্পোর্টস এডিটর উৎপল শুভ্র।

‘আমরা করব জয়’

অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের করণীয় বিষয় নিয়ে আরও বক্তব্য দেন কক্সবাজার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিন, কক্সবাজার মডেল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. রমজান আলী, অভিভাবক ও টেকনাফ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ইউনুছ বাঙালি প্রমুখ।

অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে চলে শিক্ষার্থী ও বন্ধুসভার সদস্যদের পরিবেশিত গান, নৃত্য ও আবৃত্তি। সাংস্কৃতিক পর্ব পরিচালনা করেন বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম। ‘আমরা করব জয়’ গানের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটে উৎসবের।