Thank you for trying Sticky AMP!!

অতিচেনা দাঁড়কাক

দাঁড়কাক। ছবি: আ ন ম আমিনুর রহমান

পোষা হাঁস-মুরগিরা কখনো কখনো পুকুরপাড়ের ঝোপঝাড়ে কোনো রকমে বাসা করে ডিম পাড়ে। ওই ডিম একটা একটা করে এনে এক জায়গায় জড়ো করে দাঁড়কাকেরা। ঠোঁটের ফাঁকে চেপে ধরার সময় কোনো ডিম ভেঙে গেলে সুড়ুত করে খেয়ে নেয় কুসুম ও তৈলাক্ত পদার্থ। রাজহাঁসের ডিম ঠোঁটের ফাঁকে ধরতে গেলেই পিছলে যায়। ঠোকর দিয়ে ভাঙতেও পারে না সহজে। সে ক্ষেত্রে ডিম গড়িয়ে গড়িয়ে শক্ত কিছুতে আঘাত করে ভাঙে। অবশ্য দাঁড়কাকের মূল খাদ্য পাখির বাসার ডিম-ছানা, ইঁদুর, কাঠবিড়ালির ছানা-মাংস-মাছের নাড়িভুঁড়ি, বিভিন্ন রকম ফল ও গেরস্থ বাড়ির উঠানে ছড়ানো ভাত। সবচেয়ে বেশি লোভ এদের হাঁস-মুরগির ছানার দিকে। মুরগি মা-তো এমনিতে শরীর ফুলিয়ে রাগে গজর গজর করতে থাকে সারাক্ষণ। দু-তিন গন্ডা ছানা দিয়ে বুনো মুরগির মতো চরে বেড়ায় বাড়ি-পুকুর-মাঠে বা শস্যখেতে। কৌশলে দুটি কাক দুই পাশের মাটিতে নামে। মুরগি তেড়ে যায় একটির দিকে, অন্যটি এগিয়ে এসে মুহূর্তেই একটি ছানার মাথা ঠোঁটের ফাঁকে চেপে ধরে দেয় উড়াল। ছানার কান্না শুনে মুরগি ধেয়ে আসে। কখনো কখনো কিছুটা উড়ালও দেয়। এই সুযোগে দ্বিতীয় কাকটি এসে আরেকটির মাথা ধরে দেয় উড়াল।

চতুর-বুদ্ধিমান-কুশলী ও কৌতুকপ্রিয় এই দাঁড়কাকেরা দুঃসাহসীও হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের তিনখানা জঙ্গিবিমান আমাদের বাড়ির ওপর দিয়ে বাগেরহাটে যায় রাজাকার-আর্মি ক্যাম্পে বোম্বিং করতে। তাদের তিনটি নারকেলগাছের মাথা ছুঁয়ে গেল। ওদিকের পুকুরপাড়ের মেঘ-শিরীষগাছে ছিল দাঁড়কাকের বাসা। একটি দাঁড়কাক হাঁকডাক ছেড়ে বিমান তিনখানাকে যেন ধাওয়া করেছিল অনেকটা দূর পর্যন্ত। মিনিট ১৫ পরে বিমানগুলো যখন ফিরে আসছিল, তখনো কাকটি শত্রুকে (হয়তোবা বড়সড় শত্রু পাখি ভেবেছিল) হামলা করার হাস্যকর প্রয়াস চালিয়েছিল।

আমার কম বয়সে দেখেছি, এলাকায় গরু-মোষ মরলে কয়েকটি দাঁড়কাক মিলে মড়ির ওপরে উড়ে উড়ে আনন্দ-চিৎকার করত। আকাশে বৃত্তাকারে ঘুরপাক খাওয়া শকুনেরা বুঝে ফেলত ‘মড়ি’ আছে ওখানে। জেট বিমানের মতো নেমে আসত একে একে। কাকের মতো সাধারণ শকুনেরাও (White-rumped vulture) গরু-মোষের চামড়া ফুটো করতে পারত না। আসত একটি বা দুটি মোরগ শকুন (Red headed vulture)। ওরা চামড়া ফুটো করে খেত। তারপরই অন্য শকুন ও দাঁড়কাকের ভাগে হাড্ডি মাংস জুটত। গ্রামবাংলায় এখন আর এই দৃশ্য চোখে পড়ে না। প্রাণিচিকিৎসায় উন্নতি হওয়ায় গবাদিপশু খুবই কম মারা যায়। তারপরও অসুস্থ হলে গোপনে কসাইয়ের দোকানে চালান হয়। বাইচান্স দু-একটা মরলেও মাটিচাপা দেওয়া হয়। অতএব, শকুন উধাও। সেই কাকের কাব্যিক ওড়াউড়িও নেই।

দাঁড়কাক চকচকে কালো রঙের পাখি। পা ও ঠোঁট কালো। শক্ত-লম্বা-মোটা শক্তিশালী ঠোঁট। বড় বড় গাছে শুকনো-সরু ডাল-কঞ্চি ইত্যাদি দিয়ে বাসা বানিয়ে তাতে ডিম দেয় ৩-৫টি। ডিম ফুটে ছানা হয় ১৯-২২ দিনে। ছানারা উড়তে শেখে ২২-৩০ দিনে। যে কৌশলে এরা মুরগিছানা শিকার করে, অনেকটা সেই কৌশলেই মেয়ে কোকিল ডিম পাড়ে এদের বাসায়। অতি পরিচিত এই দাঁড়কাকের ইংরেজি নাম Large-billed crow বৈজ্ঞানিক নাম Corvus macrorhynchos. দৈর্ঘ্য ৫০ সেন্টিমিটার। ওজন ৫৮০ গ্রাম।