Thank you for trying Sticky AMP!!

টিলায় ফুটেছে বোরমালা। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নে।

অপরূপ বোরমালা

উদ্ভিদ ও বন্য প্রাণী নিয়ে যাঁরা গবেষণা করেন, তাঁদের প্রিয় স্থানগুলোর মধ্যে সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চল অন্যতম। বছরে অন্তত একবার হলেও সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করি আমরা। বৃষ্টিবাদলা না থাকলে প্রতিবারই টাঙ্গুয়ার হাওরের কাজ শেষে তাহিরপুরের বাদাঘাট থেকে বারেকটিলা হয়ে শহরে ফিরে আসি। এভাবেই ঘুরতে ঘুরতে একদিন সন্ধান পেয়েছিলাম উত্তর বড়দল ইউনিয়নের শিমুলবাগানটির। দেশের একমাত্র সুপরিসর এই শিমুলবাগান তৈরি করেছিলেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, যা এখন অন্যতম দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে।

বাগান থেকে খানিকটা এগোলেই বারেকটিলা। টিলাজুড়ে অসংখ্য কুরচিগাছের বিস্তার। কিন্তু সব গাছই ভূমির সমান্তরালে কেটে রাখা হয়েছে! টিলার গা-ঘেঁষে উজান থেকে নীলাভ জল বুকে নিয়ে নেমে এসেছে অপার্থিব এক নদী, নাম জাদুকাটা। জলের সৌন্দর্যে জাদুকাটা সত্যিই এক জাদুকরী নদী। অদূরে ভারতের মেঘালয়ের শৈলসারি। টিলায় বসে খুব সহজেই নদীর অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

এসবের সঙ্গে ভালো লাগার মতো আরও আছে নিস্তব্ধতা, নির্জনতা আর বিচিত্র পাখির সংলাপ। কিন্তু এত সব সৌন্দর্যের আয়োজন পাশ কাটিয়ে মন পুড়ছে কুরচিগাছগুলোর জন্য। টিলার ঠিক কতটা জুড়ে গাছগুলোর বিস্তার, তা বোঝার চেষ্টায় অন্য প্রান্তেও দৃষ্টি ফেরাই। তখনই বেগুনি রঙের মোহনীয় এক উৎসবে চোখ আটকে যায়। সমতলের কাছাকাছি ঢালুতে জন্মানো রংবাহারী এই ফুল পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ে অনেকবার দেখেছি। আছে শালবনেও। এ ছাড়া কক্সবাজারসহ দেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলোতেও দেখা যায়। স্থানীয় নাম বোরমালা, খোজা বা মাকাঞ্চি।

বোরমালা (Callicarpa tomentosa) মাঝারি আকৃতির গাছ, সাধারণত ৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। চিরহরিৎ এই গাছ অঞ্চলভেদে পত্রমোচীও হতে পারে। বাকল কখনো কর্কসদৃশ, বাদামি, ধূসর, অমসৃণ বা অগভীর খাঁজযুক্ত। শাখাগুলো চতুষ্কোণ, ঘন মখমলের মতো। পাতা পুরু, সরল ও ঊর্ধ্বমুখী, বিপরীত, সাড়ে ৭ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার লম্বা ও ঘনবদ্ধ সাদা ভেলভেটের মতো। পাতার কিনার বৃহত্তর থেকে উপবৃত্তকার বা ডিম্বাশয়ের থেকে উপবৃত্তকার। রক্তবেগুনি রঙের ছোট আকৃতির অজস্র ফুল গুচ্ছবদ্ধভাবে থাকে। দলমণ্ডল ছোট, প্রায় সাড়ে তিন মিলিমিটার লম্বা, নলাকার ও ৪টি ছড়ানো খাটো খণ্ডকবিশিষ্ট। ফুলের মৌসুম দীর্ঘ। মে থেকে প্রায় ডিসেম্বর পর্যন্ত বিস্তৃত। এ গাছের বাকল তেতো ও সুগন্ধি। বাকলের সেদ্ধ ক্বাথ চর্মরোগে ব্যবহার্য। গাছের নির্যাস শক্তিবর্ধক ও বায়ুরোধক। কাঠকয়লা তৈরিতে কাজে লাগে। ফল শিশুদের প্রিয়। আসামে গাছের পাতা মহিষের খাদ্য হিসেবে কাজে লাগে। আমাদের উদ্যান ও প্রকৃতিতে বেগুনি রঙের দৈন্য ঘোচাতে এই ফুল আদর্শ।