Thank you for trying Sticky AMP!!

অশোকের বর্ণশোভা

ছবিটি সম্প্রতি রমনা পার্ক থেকে তোলা l লেখক

প্রায় ২০ বছর আগে বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রথম অশোক ফুল দেখে অবাকই হয়েছিলাম। গাছের কাণ্ড ফুঁড়ে বেরিয়েছে থোকা থোকা ফুল। এর আগে কাণ্ড ফুঁড়ে শুধু ডুমুর বা কাঁঠাল দেখার অভিজ্ঞতা ছিল। অবাক হওয়ার আরও কারণ ফুলের বর্ণশোভা। কমলা আর লালে মেশানো ফুলগুলো ঝলমল করছিল। বোটানিক্যাল গার্ডেনের প্রধান সড়ক এবং পশ্চিম-উত্তর প্রান্তে একটি সুদর্শন অশোকবীথি আছে। কিন্তু গাছটি আমাদের চারপাশের অন্যান্য গাছের মতো ততটা সহজলভ্য নয়। আমাদের লোকালয় কিংবা যত্রতত্র কোনো সুদৃশ্য অশোকবীথিও পাওয়া যাবে না। তবে বিভিন্ন পার্ক ও উদ্যানে অনায়াসেই দেখা মিলবে। ঢাকায় রমনা পার্কে আছে নান্দনিক অশোককুঞ্জ। ধানমন্ডি এলাকায়ও একটি বিবর্ণ অশোকবীথি চোখে পড়ে। কোনো এক সময় হয়তো পরিকল্পিতভাবেই লাগানো হয়েছিল গাছগুলো। পরে সেগুলো নগরায়ণের বলি হয়।
অশোক এই অঞ্চলের নিজস্ব বৃক্ষ। মূলত ফুলের জন্যই গাছটি বিখ্যাত। কারণ, বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে এই ফুল কিছুটা আলাদা। কমসংখ্যক উদ্ভিদ প্রজাতির ক্ষেত্রেই কাণ্ড থেকে ডালপালাজুড়ে ফুল ফোটে। শুধু তাই নয়, এদের প্রস্ফুটনকালও অতি দীর্ঘ। অশোক সত্যিকার অর্থেই দুঃখহারী। রোগ নিরাময়ে ভেষজ গুণ, শীতল ছায়া, মধুরিমা সুবাস এবং পুষ্প-প্রাচুর্য ইত্যাদির জন্যই এমন নাম। আমাদের এই দেশি বৃক্ষটির খ্যাতি সুপ্রাচীন। কাব্যে বহুল ব্যবহার ছাড়াও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সঙ্গে অশোক যুক্ত। এই তরুতলেই মহামতি গৌতম বুদ্ধের জন্ম। এমন একটি ঘটনা অশোককে বাড়তি খ্যাতি দিয়েছে।
অশোক ফুল প্রেমের প্রতীক। কামদেবের পঞ্চশরের অন্যতম শর এই ফুলে সজ্জিত। রবীন্দ্রনাথের গানেও লেগেছে অশোকের রং।
‘তোমার অশোকে কিংশুকে
অলক্ষ্য রঙ লাগল আমার
অকারণের সুখে।’
অশোক মাঝারি আকৃতির ছায়াসুনিবিড় চিরসবুজ বৃক্ষ। গাঢ়-সবুজ পাতাগুলো দীর্ঘ, চওড়া ও বর্শাফলাকৃতির। কচিপাতা কোমল, নমনীয়, ঝুলন্ত ও তামাটে। ফুল ফোটার প্রধান মৌসুম বসন্তকাল। তবে হেমন্ত অবধি প্রস্ফুটন প্রাচুর্য চোখে পড়ে। শীতকালেও ফোটে। তবে সংখ্যায় কম।
ফুল ছোট, কিন্তু বহুপৌষ্পিক, ছত্রাকৃতি মঞ্জরি আকারে বড়। অজস্র ফুলে ঘনবদ্ধ অশোকমঞ্জরি বর্ণ ও গড়নে আকর্ষণীয়। তাজা ফুলের রং কমলা, কিন্তু বাসি ফুল লাল। পরাগকেশর দীর্ঘ। ফল বড়সড় শিমের মতো চ্যাপ্টা, পুরু এবং ঈষৎ বেগুনি। বীজ থেকে সহজে চারা জন্মালেও বৃদ্ধি মন্থর। হিন্দু ও বৌদ্ধদের কাছে এ তরু অত্যন্ত পবিত্র। অশোকের ঔষধি গুণ অনেক। কাঠ নরম ও মূল্যহীন। আলোচ্য অশোক ছাড়াও আমাদের দেশে রাজ অশোক এবং স্বর্ণ অশোক নামে আরও দুই রকম অশোক আছে। থাকতে পারে আরও দু-একটি রকমফেরও। সব অশোকের মিশেলে একটি পরিকল্পিত বীথি তৈরি করা যেতে পারে।