Thank you for trying Sticky AMP!!

আত্রাই নদে পানি বাড়লেই ভাঙে বাঁধ

আত্রাই নদের পানির চাপে ভেঙে গেছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। ছবিটি নওগাঁর মান্দা উপজেলার নুরুল্যাবাদ এলাকার

আত্রাই নদে পানি বাড়লেই বাঁধ ভাঙবে, এমন আশঙ্কায় রয়েছে নওগাঁর তিন উপজেলার মানুষ। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ থাকলেও তা কোনো কাজে লাগছে না। গত আট বছরে চারবার বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়েছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এলাকার মানুষের। এবারও বাঁধটির পাঁচ জায়গায় ভেঙে ৯ হাজার ২১৪ হেক্টর জমির আমন খেত তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ২টি উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মানুষ।
স্থানীয় ব্যক্তিরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, ৪০ বছর আগে নির্মিত বাঁধ সংস্কার না করার কারণে এই দুর্ভোগ হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, ১৫০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে আর দুর্ভোগ থাকবে না।

নওগাঁ পাউবো সূত্রে জানা গেছে, বন্যার হাত থেকে রক্ষার জন্য ১৯৮০-৮১ সালের দিকে আত্রাই নদের দক্ষিণ তীর দিয়ে মান্দা উপজেলা থেকে আত্রাই হয়ে রানিনগর উপজেলা পর্যন্ত ৫৮ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ১৯৮৫ সালে নির্মাণকাজ শেষ হয়। যানবাহন চলাচলের জন্য ২০০৭ সালে এর ওপরে কার্পেটিং করা হয়। বাঁধের সামনে দিয়ে একাত্তরের আগে মান্দা উপজেলার নুরুল্লাবাদ ইউনিয়নে প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। সেই বাঁধও জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, বেড়িবাঁধ ঠিক রাখতে পারলে অন্তত এক হাজার পরিবার দুর্ভোগ থেকে বাঁচতে পারবে। কিন্তু প্রতিবারই বেড়িবাঁধ ভাঙে আর সেই পানির তোড়ে পেছনের মূল বাঁধটিও ভেঙে যায়।
এবার বেড়িবাঁধের দুই জায়গায় ভেঙে নুরুল্লাবাদ ইউনিয়নের চার কিলোমিটার এলাকার তিন জায়গায় মূল বাঁধ ভেঙেছে। গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি প্রথম বাঁধ ভেঙে পানি ঢোকে। তারপর পানি কিছুটা কমে যায়। এরই মধ্যে পাউবো বাঁধ মেরামতের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেয়। কিন্তু ঠিকাদার কাজ শুরু করতে না–করতেই গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ফের নুরুল্লাবাদ উত্তরপাড়া এলাকায় আগের ভাঙনের জায়গায় ফেলা বালুর বস্তা ভাসিয়ে নিয়ে যায়। ভোরের দিকে আরেকটি জায়গা ভেঙে আবার পানি ঢুকে পড়ে।
গত রোববার নুরুল্লাবাদ উত্তরপাড়ার মূল বাঁধের ভাঙনের কাছে গিয়ে দেখা যায়, প্রথম ভাঙনের পর পারাপারের জন্য যে বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হয়েছিল, তা–ও ভেসে গেছে। স্থানীয় লোকজন জানান, বাঁধের উত্তর পাশের ভাঙনের জায়গায় তিনটি বাড়ি ছিল। এখন সেখানে বাড়ির কোনো চিহ্ন নেই। নদীতে পানি বাড়ার কথা শুনে বাড়ির শুধু চালা খুলে নেওয়া সম্ভব হয়েছে। আর সবকিছুই পানিতে বিলীন হয়ে গেছে।

দক্ষিণ পাশের মাঠে সাঁতরে উঠে আসেন মান্দা উপজেলার কদমতলী গ্রামের সাইদ মিস্ত্রি। তিনি বলেন, বাড়ি থেকে বাজার করতে যেতে হলে সাঁতার দিয়ে ছাড়া পার হওয়ার উপায় নেই। বাজার করে আবার পানির ভেতর দিয়ে সাঁতরে বাড়ি যেতে হবে।
নূরুল্লাবাদ গ্রামের কৃষক এনামুল হক বলেন, মাঠের ধানের কথা মনে হলে প্রাণ কেঁদে ওঠে। ১৯৯৫ সালে সবচেয়ে বড় বন্যা হয়েছিল। তারপর থেকে পানি বাড়লেই বাঁধ ভেঙে যায়। ফসল ডুবে যায়।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা কামরুল আহসান জানান, ইতিমধ্যে আত্রাই ও মান্দা উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের ৩ হাজার ৮৬০টি পরিবার জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ৯ হাজার ২১৪ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান তলিয়ে গেছে। রানিনগর উপজেলার কোনো বাড়িঘর এখনো ডুবে যায়নি। তবে মান্দার উজানে সাপাহার উপজেলার দুটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। গতকাল সোমবার আত্রাই নদীর পানি বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৩৮ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
নওগাঁ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফউজ্জামান খান বলেন, বেড়িবাঁধ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নয়। তবু ভাঙলে তাদের মেরামত করতে হয়। তাদের তৈরি বাঁধ, যেটা এখন রাস্তা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, সেটাও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হিসেবে মানসম্মত ছিল, তা বলা যায় না। মান্দা, আত্রাই ও রানিনগর উপজেলার ভেতরে দিয়ে আত্রাই নদের দক্ষিণ তীর দিয়ে ১৫০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। এতে ব্যয় হবে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে মানুষের দীর্ঘদিনের এই দুর্ভোগের অবসান হবে।