Thank you for trying Sticky AMP!!

আন্তর্জাতিক শব্দ সচেতনতা দিবস পালিত হচ্ছে আজ

আন্তর্জাতিক শব্দ সচেতনতা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ধানমন্ডির সাতমসজিদ সড়কে শিশু সমাবেশের আয়োজন করা হয়। ছবি: প্রথম আলো

চড়া রোদে ধানমন্ডির আবাহনী মাঠের পাশে ফুটপাতে শিশুরা দাঁড়িয়ে। হাতে কাগজে লেখা ‘স্টপ নয়েজ’। সেই সমাবেশের সামনেই একটি যন্ত্রে মাপা হচ্ছে শব্দের তীব্রতা। এতে সর্বোচ্চ পর্যবেক্ষণ এসেছে ১১২ ডেসিবেল, আর সর্বনিম্ন ৮২ ডেসিবেল। অথচ শব্দদূষণ বিধি অনুযায়ী, নীরব এলাকা ধানমন্ডির শব্দের মান মাত্রা থাকার কথা ৫০ ডেসিবেল। 

এই উচ্চ শব্দের মধ্য দিয়ে ঢাকায় আজ বুধবার পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক শব্দ সচেতনতা দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘শিশুর সঠিক বিকাশে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা হোক’। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা সেন্টার ফর হেয়ারিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন ১৯৯৬ সাল থেকে উচ্চ শব্দ নিয়ে বৈশ্বিক প্রচারণার শুরু করে। এই প্রচারণার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ওয়ার্ক ফর আ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টসহ (ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট) ১১টি প্রতিষ্ঠান মিলে ধানমন্ডির সাতমসজিদ সড়কে এক শিশু সমাবেশের আয়োজন করে।

সমাবেশে রায়েরবাজার উচ্চবিদ্যালয়, ধানমন্ডি কচিকণ্ঠ উচ্চবিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। সেখানে ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী শারমিন লিজা প্রথম আলোকে বলেন, ‘শব্দের কারণে আমাদের পড়ালেখার সমস্যা হয়। বাসার পাশে অনেক সময় রাজনৈতিক, পারিবারিক অনুষ্ঠান থেকে আওয়াজ হয়। তখন পড়তে পারি না। আওয়াজ কমাতে বললে আবার খারাপ কথা বলে।’

সমাবেশে ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা মারুফ রহমান বলেন, ‘শব্দদূষণ রোধে যে নিয়ম-নীতিমালা আছে, সেটি দিয়ে হবে না। আমাদের সংস্কৃতিগত পরিবর্তন দরকার, যার মধ্য দিয়ে আমরা শব্দ-সন্ত্রাসকে রুখে দিতে পারব। আমরা মনে করি, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে যৌথ উদ্যোগে এলাকাভিত্তিক দল গঠন করে শব্দদূষণ হ্রাসে পদক্ষেপ নিতে হবে।’

স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘এই যে সমাবেশ করছি শব্দ নিয়ে, এই সমাবেশের সামনেই একটি সাউন্ড প্রেশার লেভেল মিটার (এসপিএল) দিয়ে শব্দ মাপা হচ্ছে। এখানে শব্দের মাত্রা কখনোই ৮০ ডেসিবেলের নিচে নামেনি। সর্বোচ্চ উচ্চ শব্দ হয়েছে ১১২ ডেসিবেল। এমনকি যেসব গাড়ি বা বাহন উল্টো পথে যাচ্ছে, তারা আরও বেশি শব্দ করছে।’

আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার আরও বলেন, উচ্চ শব্দ নিয়ন্ত্রণে সরকারের আন্তরিকতা ছিল। এই নিয়ে আইনও আছে। তবে তা বাস্তবায়নে ঢিলেমিও আছে। শব্দদূষণের ক্ষতির কথা বলে শেষ করা যাবে না। শুধু সচেতন হতে হবে। অহেতুক উচ্চ শব্দ করা এড়াতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর আইন করছে, সংশোধন ও পরিমার্জন করছে। কিন্তু সত্যিকার অর্থেই মাঠপর্যায়ে এই আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে একটি চুলও নড়ছে না। সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মনে করছে, শুধু আইনশৃঙ্খলাতেই তাদের দায়িত্ব, কিন্তু এই যে দূষণের মাধ্যমে যে ‘শব্দ-সন্ত্রাস’ চলছে, তার বিরুদ্ধে তারা কার্যকর ভূমিকা নিচ্ছে না।

উচ্চ শব্দ নিয়ন্ত্রণে সমাবেশ থেকে কিছু সুপারিশ করা হয়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অনুমতি ব্যতীত সভা-সমাবেশ-সামাজিক অনুষ্ঠানে মাইক বাজানো নিষিদ্ধ করা, জেনারেটর ও সকল প্রকার যন্ত্রের মানমাত্রা নির্ধারণ করা, শব্দদূষণ বিধিমালা, ২০০৬ বাস্তবায়ন করা, বিধিমালা অনুযায়ী (নীরব, আবাসিক, বাণিজ্যিক, মিশ্র ও শিল্প) এলাকা চিহ্নিত করা, উচ্চ শব্দের হর্ন বাজানোর শাস্তি ও চালকদের সচেতনতা যাচাই করে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া।