Thank you for trying Sticky AMP!!

এত পানি আছে তবু খাওয়ার পানি নেই

পদ্মার পানি বাড়ছে। ডুবে যাচ্ছে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার একের পর এক জনবসতি। গতকাল দক্ষিণ মেদিনীমণ্ডল এলাকায়। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার আলগাপাড়া গ্রামের বেশির ভাগ এলাকা পানির নিচে। বাসিন্দারা পাশের একটি গুচ্ছগ্রামের জন্য উঁচু করা জমিতে গাদাগাদি করে আছেন। সরকারি ত্রাণ টুকটাক যা আসছে, তা দিয়ে ক্ষুধা মিটছে, কিন্তু খাওয়ার পানি নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে যে চারটি টিউবওয়েল বসানো হয়েছে, তা থেকে গ্রামের সবাই পালা করে পানি নিচ্ছে। কোনোমতে খাওয়ার পানি পেলেও রান্না ও গোসলের পানির জন্য নদীই এখন ভরসা।

গুচ্ছগ্রামে আশ্রয় নেওয়া আলগাপাড়া গ্রামের ফরহাদ হোসেন দুঃখ করে বললেন, ‘আমাদের চারদিকে পানি আর পানি। তবু পানির কষ্টে ভুগতেছি।’

বন্যায় বেশির ভাগ অংশ ডুবে যাওয়া সুনামগঞ্জ জেলার অবস্থাও আলগাপাড়া গ্রামের মতোই। জেলার ১ লাখ ৮০ হাজার টিউবওয়েলের মধ্যে
৩৬ হাজারই পানির নিচে চলে গেছে। জেলার বন্যার্ত মানুষের মধ্যে যাঁরা সরকার থেকে পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি পেয়েছেন তাঁরা কোনোমতে খাওয়ার পানি বিশুদ্ধ করে খাচ্ছেন। কিন্তু টয়লেট, গোসল ও খাওয়ার পানি পেতে হাওরের ওই জনপদে কষ্ট বাড়ছে।

পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্যার্ত এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে অস্থায়ী টিউবওয়েলের সংখ্যা বাড়ানো উচিত। কারণ, বন্যা যেভাবে দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে তাতে খাওয়ার পানির সংকট বাড়লে নানা রোগবালাই ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশুদ্ধ পানি না পেলে বন্যায় আসা জীবাণুযুক্ত নদীর পানির ওপরই ভরসা করতে হবে মানুষকে।

এ ব্যাপারে ওয়াটার এইড দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের প্রধান খায়রুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘমেয়াদি বন্যায় সবচেয়ে বড় সমস্যা হতে পারে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি নিয়ে। ফলে দ্রুত বন্যাদুর্গত এলাকায় পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ বাড়ানো উচিত। একই সঙ্গে বন্যার পানি যেখান থেকে নামবে সেখানে দ্রুত পুকুরগুলো জীবাণুমুক্ত করার জন্য ব্লিচিং পাউডারসহ অন্যান্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া উচিত।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৭ লাখ ৩১ হাজার পরিবার অর্থাৎ প্রায় ৩৭ লাখ মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় আছে। এসব মানুষের মধ্যে মাত্র ৭০ হাজার সরকারের স্থাপন করা অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে।

রংপুর, বগুড়া, কুড়িগ্রাম ও সুনামগঞ্জে প্রথম আলোর প্রতিবেদকেরা জানিয়েছেন, এসব জেলার আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষ নিয়মিত ত্রাণ ও খাওয়ার পানি পাচ্ছে। কিন্তু বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন সড়ক, উঁচু স্থান ও বাঁধে আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলো পানির তীব্র সংকটের মধ্যে পড়েছে। বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার বন্যার পানি দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী হওয়ায় পানিতে নানা ধরনের দূষণ ও জীবাণুর পরিমাণ বাড়বে।

তবে ওই চার জেলার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে বলেছেন, প্রতিটি বন্যার্ত মানুষের কাছে পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি অথবা অস্থায়ী টিউবওয়েল বসিয়ে বিশুদ্ধ পানি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন তাঁরা। কোথাও পানির সংকট নেই। তবে বন্যার কারণে আগের মতো বিশুদ্ধ পানি পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

সুনামগঞ্জ জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কাশেম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ১০টি টিউবওয়েল ও ১০ লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।

এদিকে সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে আগামী ১০ দিনের জন্য বন্যার আরেকটি পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, আগামী তিন দিন ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা অর্থাৎ কুড়িগ্রাম থেকে সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল হয়ে মানিকগঞ্জ পর্যন্ত বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হবে। পদ্মা অববাহিকার পানি স্থিতিশীল থাকবে। তবে সিলেট–সুনামগঞ্জের পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে।

ঢাকা ও তার চারপাশের এলাকাগুলো সম্পর্কে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ঢাকার তুরাগ ও বালু নদের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে প্রবেশ করবে। এখন ঢাকার নিম্নাঞ্চলে মূলত খাল দিয়ে পানি এসেছে। নদী উপচে পানি এলে ঢাকার বন্যা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিতে পারে।