Thank you for trying Sticky AMP!!

গাইবান্ধায় পানি কমছে

গাইবান্ধায় সুপেয় পানির জন্য বন্যার্তদের লাইন। শহর লাগোয়া পাউবোর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কঞ্চিপাড়া এলাকা গতকালের তোলা। ছবি: প্রথম আলো

গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদের পানি গত শুক্রবার থেকে কমতে শুরু করেছে। আজ রোববারও পানি কমার এ প্রবণতা অব্যাহত ছিল। কিন্তু মানুষের দুর্ভোগের মাত্রা বাড়ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তামুখ ঘাট পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ২৬ সেন্টিমিটার, নতুন ব্রিজ পয়েন্টে ঘাঘটের পানি ১২ সেন্টিমিটার এবং করতোয়ার পানি ১ সেন্টিমিটার কমেছে। তবে ব্রহ্মপুত্রে বিপৎসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার, ঘাঘটে বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার ও করতোয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পানি কমার পর মানুষের দুর্ভোগের মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখনো পানিবন্দী হয়ে আছে জেলার পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ। বাঁধ, সড়ক, নৌকা, উঁচু স্থানসহ ১৮০টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশনের সমস্যা আছে। এর পাশাপাশি গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে বন্যাদুর্গত মানুষ।

পাঁচ দিন ধরে রেল যোগাযোগ বন্ধ। সান্তাহার-লালমনিরহাট রেলরুটের গাইবান্ধা সদরের বাদিয়াখালী থেকে ত্রিমোহিনী পর্যন্ত রেলপথের প্রায় ছয় কিলোমিটার অংশ ডুবে গিয়ে কিছু স্থানে স্লিপার, পাথর ও মাটি সরে যাওয়ায় গত বুধবার থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়। গাইবান্ধা রেলস্টেশনের মাস্টার আবুল কাশেম জানান, গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গাইবান্ধার বোনারপাড়া রেলস্টেশন থেকে সান্তাহার এবং গাইবান্ধা রেলস্টেশন থেকে লালমনিরহাট ও দিনাজপুরের মধ্যে ট্রেন চলাচল করছে। পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত এভাবে ট্রেন চলাচল করবে। অন্যদিকে, গাইবান্ধা জেলা শহরের সঙ্গে সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। গাইবান্ধা-বালাসি সড়কেও যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

গাইবান্ধা-বালাসী সড়কের চিত্র। আজ তোলা। ছবি: প্রথম আলো

গাইবান্ধা শহরের অধিকাংশ রাস্তাঘাট, প্রধান দুটি কাঁচাবাজার, সরকারি বেসরকারি অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো পানিতে তলিয়ে আছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বন্যায় এ পর্যন্ত জেলার সাতটি উপজেলার দুটি পৌরসভাসহ ৫১টি ইউনিয়নের ৩৯০টি গ্রামের লাখো মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে। ৪৫ হাজার ৪৯৫টি বসতবাড়ি পানির নিচে। তার মধ্যে পানিবন্দী ৭৪ হাজার ১৬৯ লোক জেলার ১৮০টি সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়া বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৭৫ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক এবং ২৩৫ কিলোমিটার পাকা সড়ক। ৬৩ কিলোমিটার বাঁধ ও ২১টি কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত। বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ১১ হাজার ৯২৮ হেক্টর বিভিন্ন ফসলি জমি। পানিতে নিমজ্জিত ৪০৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কার্যক্রম বন্ধ। ভেসে গেছে ৬ হাজার ৬৫৮টি পুকুরের মাছ। পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ৯ হাজার ২২৪টি টিউবওয়েল। বন্যাকবলিত এলাকায় কাজ করছে ৭৫টি মেডিকেল টিম।

গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক আবদুল মতিন জানান, বন্যাকবলিত উপজেলাগুলো জেলা ত্রাণভান্ডার থেকে এক হাজার মেট্রিক টন চাল ও ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ছয় হাজার কার্টন শুকনা খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এখন পর্যন্ত ৫৮৫ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৯ লাখ টাকা ও ৩ হাজার ৫৫০ কার্টন শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।