Thank you for trying Sticky AMP!!

চোখজুড়ানো কমলা বউয়ের কথা

ছানাকে খাওয়াচ্ছে কমলা বউ। ছবি: বাংলাদেশ ওয়াইল্ড লাইফ ক্লাব

ভয়ংকর করোনাকালকে উপেক্ষা করে চরম ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে যেতে হয়েছিল গেল এপ্রিলে। জরুরি কাজ দুদিনেই শেষ হলো। তৃতীয় দিনে ওয়াইল্ড লাইফ ক্লাবের দুজন কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে আমার বাগানটিসহ চার-পাঁচটি বাগানে ঘুরলাম পাখি দেখতে। পাখিগুলোর বাসা বাঁধার ভরা মৌসুম শুরু হয়েছে আগেই। দেখতে পেলাম দিনেকানা, হালতি, রাঙা হালতিসহ ৩০ প্রজাতির পাখি।

আমার নিরিবিলি বাড়িটার পেছনের বাগানে পেলাম কমলা বউয়ের বাসা। সে বাসায় চারটি উড়ুউড়ু ছানা। মা-বাবা পাখি-ছানাগুলোর উদরপূর্তি করতে মহাব্যস্ত। বাসাটি আট ফুট উঁচুতে, একটি সুপারি গাছের পাতার গোড়ায়।

কমলা বউ পাখি বাসা করে দ্বি–স্তরবিশিষ্ট। প্রথমে শিকড়, লতা, ঘাস ইত্যাদি দিয়ে চায়ের পিরিচের মতো বানায়। সেই পিরিচের মাঝখানে বাটির মতো খাসা বাসা বানিয়ে তার সঙ্গে ফুটখানেক লম্বা চামচের হাতার মতো হাতা বানিয়ে জুড়ে দেয় সুপারি পাতার সঙ্গে। যাতে ঝড়ে উড়ে না যায় সহজে।

মেয়ে পাখিটি ডিম পাড়ে চারটি। গোলাপি রঙের চমৎকার ডিম ফুটে ছানা বের হতে সপ্তাহ দুয়েক লাগে। ছানারা উড়তে শেখার আগেই লাফিয়ে নামে মাটিতে। মা-বাবার সঙ্গে বাগানের ছায়া ছায়া মাটিতে চরে বেড়ায়।

কমলা বউ বলতে গেলে শতভাগ খাদ্য সংগ্রহ করে মাটি থেকেই। এগুলোর মূল খাদ্য নানা রকম পোকামাকড় ও কেঁচো। উইপোকা ও উইপোকার ডিম এগুলোর পোলাও ভাত। চরতে চরতে পাখিগুলো অনেক সময় গেরস্থ বাড়ির উঠানেও চলে আসে।

খুবই নিরীহ পাখি কমলা বউ। শত্রুর হাত থেকে ডিম বা ছানা রক্ষা করার কোনো প্রতিরোধ ব্যবস্থাই এগুলোর নেই। এগুলোর চাহনিতেও সব সময় একটা ভয় ভয় ভাব। বাঁশের কঞ্চিতে বা অন্য কোনো গাছের সরু ডালে রাতে মা-বাবা যখন চারটি ছানাকে নিয়ে পাশাপাশি বসে ঘুমায়, তখন দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়, মন ভরে যায়। শরীর ফুলিয়ে এগুলো যেন তখন টেনিস বল হয়ে থাকে, ঘাড় বাঁকিয়ে ঠোঁটটি গুঁজে রাখে পিঠে। টর্চ বা মোবাইলের আলো ফেললেও পাখিগুলোর ঘুম ভাঙে না।

সুন্দর পাখি কমলা বউয়ের মাথা, চিবুক, ঘাড়, গলা, বুক ও পেট চকচকে কমলা-লাল। গলায় এক টিপ সাদা রং। ঘাড়ের কাছে ডানার প্রান্তে পাঁচ-ছয়টি গোল গোল সাদা ফোঁটা। লেজের তলদেশের গোড়ার দিকটাও সাদা। পিঠ ও লেজের উপরিভাগ গাঢ় নীলচে ধূসর। ঠোঁট কালচে। গোলাপি রঙের পা। বাগেরহাটে আমার গ্রামে প্রতি মৌসুমে গড়ে এগুলোর প্রায় ৬০টির মতো বাসা পাওয়া যায়।

কমলা বউয়ের ইংরেজি নাম Orange-headed Thrush. বৈজ্ঞানিক নাম Geokichla citrina। ওজন ৬০ গ্রাম। দামা বা মেটে দোয়েল নামেও এগুলো পরিচিত।