Thank you for trying Sticky AMP!!

রাজশাহীর পদ্মা নদীর চরে উড়ন্ত সাইক্সের রাতচরা

ছদ্মবেশী এক রাতচরা

চীনা বটেরার সন্ধানে পাখিবিষয়ক আলোকচিত্রী আফজাল হোসেন খান, নুরু মাঝিসহ অন্যদের সঙ্গে দুই দিন ধরে রাজশাহীর পদ্মার চর মাজারদিয়ার চষে বেড়াচ্ছি। দুই দিনে অন্তত ১০ থেকে ১২ বার চীনা বটেরার দেখা পেয়েছি। কিন্তু ওদের গেরিলার মতো চলাফেরা ও আচমকা খুব কাছ থেকে উড়ে যাওয়ার কারণে কেউই ছবি তুলতে পারল না। দ্বিতীয় দিন যখন চীনা বটেরা খোঁজায় ব্যস্ত, তখন অনীক মাঝি চুপি চুপি আমাকে ডাকল। তার কাছাকাছি যেতেই ইশারায় ক্যামেরা তাক করে একটি জায়গায় দাঁড়াতে বলল। ক্যামেরার ভিউ ফাইন্ডারে চোখ রেখে টান টান হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই পাশের এক ঝোপ থেকে ছদ্মবেশী নিশাচর পাখিটি উড়ল। কিন্তু বেশ নিচ দিয়ে উড়ে যাওয়ায় পাখিটি ফোকাস না হয়ে সামনের ঘাসের ডগাগুলো ফোকাস হলো। সে কারণে ওর ছবি তোলা গেল না। এরপর সে আরেকটি ঝোপের কাছে গিয়ে নামল। কিন্তু ছদ্মবেশী চেহারার কারণে বহুক্ষণ খুঁজেও পাখিটির দেখা পেলাম না। আসলে পাখিটি না উড়লে ওকে দেখা সম্ভব নয়। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও ওকে উড়তে দেখলাম না। স্পষ্টভাবে দেখেও পাখিটির ছবি তুলতে না পারায় নিজের ওপর বেশ রাগ হলো। তবে অনীক মাঝি ওর একটি ছবি তুলতে পারল।

ছদ্মবেশী নিশাচর পাখিটির কোনো প্রচলিত বাংলা নাম নেই। ইংরেজি নাম সাইক্স নাইটজার। এর বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়ায় সাইক্সের রাতচরা। ওর অন্য ইংরেজি নাম হলো সিন্ধ নাইটজার। ক্যাপ্রিমুলজিডি গোত্রের পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Caprimulgus mahrattensis। বিরল ও পরিযায়ী পাখিটিকে রাজশাহীর পদ্মার চরে প্রথমবারের মতো ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দেখা যায়। বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় দেশগুলোয় দেখা মেলে।

সাইক্সের রাতচরার দেহ ছিপছিপে। দৈর্ঘ্য ২৩ থেকে ২৪ সেন্টিমিটার। অন্যান্য রাতচরার চেয়ে তুলনামূলকভাবে লেজ খাটো। একনজরে পালকের রং ধূসর; তার ওপর বিভিন্ন আকার ও আকৃতির হালকা হলদে ও কালচে ছোপ থাকে। গলার দুপাশে সাদা ছোপ রয়েছে। উড়ন্ত অবস্থায় পুরুষ পাখির ডানা ও লেজের কোনায় গোলাকার সাদা ও স্ত্রীর ক্ষেত্রে হলদে ছোপ দেখা যায়। ঘাড়ে কোনো দাগ নেই। চঞ্চু বাদামি, যার আগা কালো। পা, পায়ের পাতা ও আঙুল ফ্যাকাশে।

পাখিটিকে এ দেশের শুষ্ক ও উন্মুক্ত এলাকায়, বিশেষ করে রাজশাহীর পদ্মার চরে দেখা যায়। নিশাচর ও ভূচারী পাখিটি দিনভর মাটিতে ঝরা পাতার ওপর বসে থাকে। অবশ্য অনেক সময় গাছেও বসে থাকতে দেখা যায়। মূলত উড়ন্ত পোকামাকড়, মথ ও গুবরে পোকা ধরে খায়। সন্ধ্যা বা রাতে দ্রুততার সঙ্গে নরম সুরে ‘চুক চুক চুক’ স্বরে ডাকে।

মার্চ থেকে মে প্রজননকাল। এ সময় ওরা পাকিস্তান ও উত্তর-পশ্চিম ভারতের শুষ্ক ও আধা মরুভূমি অঞ্চলে উন্মুক্ত মাঠে ডিম পাড়ে। ডিমের সংখ্যা ২, রং কালচে ছিটছোপসহ ধূসরাভ। আয়ুষ্কাল পাঁচ থেকে ছয় বছর।