Thank you for trying Sticky AMP!!

ঝলমলে রোদ আর কালবৈশাখীর পয়লা বৈশাখ

বৈশাখের প্রথম দিন সকালে রাজধানীর আকাশে ছিল ঝলমলে রৌদ্র। বিকেল থেকে আকাশ কালো করে বৃষ্টি শুরু হয়। কারওয়ান বাজার, ঢাকা, ১৪ এপ্রিল। ছবি: আবদুস সালাম

ঘড়ির কাঁটা তখন চারটা ছুঁই ছুঁই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী এলাকায় পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপন করছেন লাখো মানুষ। এর মধ্যেই মাইকে ভেসে আসছে, একটি ঘোষণা। ঘোষণায় এক নারী আগতদের অনুরোধ করছেন বিকেল পাঁচটার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ত্যাগ করতে। কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আর ওই এলাকায় বসবাসরত ব্যক্তিদের জন্য এই ঘোষণা প্রযোজ্য নয়। বারবার মাইকে ভেসে আসা ঘোষণার কারণে রমনা ও সোহরাওয়ার্দীতে থাকা অনেকেই তখন সেখান থেকে বেরোনোর জন্য গেটের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। কঠোর নিয়নকানুনের কারণে চাইলেই এ দুটি জায়গা থেকে সুবিধাজনক গেট দিয়ে বের হওয়া সম্ভব হচ্ছিল না।

যখন এমন ঘোষণায় ওই এলাকা ছাড়তে বা ঘরে ফিরতে ব্যস্ত নগরবাসী ঠিক তখন আকাশে কালো মেঘ ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিছুটা ঠান্ডা বাতাসও বয়ে যাচ্ছিল তখন। গরমে বৈশাখ উদ্‌যাপনরত মানুষগুলোর কাছে এই আবহাওয়া ছিল স্বস্তির। কিন্তু সোয়া চারটার কিছু পরে এক ফোঁটা-দুই ফোঁটা বৃষ্টি পড়তে শুরু করে। প্রকৃতির রূপ কিছুটা আঁচ করতে পেরে মানুষগুলোর হাঁটার গতি বেড়ে যায়। কিন্তু কোথাও আশ্রয় নেওয়ার মতো অবস্থা তখন সেই। লাখো মানুষ বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাবে এমন কোনো স্থাপনা ওই এলাকায় নেই। টিএসসি, চারুকলা এবং কিছু শেডের নিচে দাঁড়িয়ে কেউ কেউ নিজেকে রক্ষা করতে পেরেছেন। কিন্তু অন্যরা ভিজে জবুথবু। অবশ্য অনেকেই আবার ইচ্ছা করেই বৃষ্টিতে ভিজে বৈশাখ ও বৃষ্টি উৎসব একসঙ্গেই করেছেন।

বিকেল পাঁচটার দিকে শুরু হয় ভারী বৃষ্টি। পুলিশের ঘোষণা ছিল পাঁচটার মধ্যে ওই তিনটি এলাকা ও হাতিরঝিলে বৈশাখী উৎসব শেষ করার। তবে রবীন্দ্রসরোবরে বৈশাখ উদ্‌যাপনের শেষ সময় সন্ধ্যা সাতটা। ভারী বৃষ্টি সেখানকার প্রস্তুতি অনেকটাই নষ্ট করে দিয়েছে। তা ছাড়া আবহাওয়া দপ্তর বলছে, আরও ঘণ্টা দুয়েক ঢাকায় এভাবে থেমে থেমে বৃষ্টি হতে পারে।

দিনের বেলা ঝলমলে রোদ। বিকেল গড়াতেই আকাশ কালো করে নামল কালবৈশাখী। বাদল হাওয়ায় এভাবেই বাংলার ১৪২৫ সনকে বরণ করে নিল প্রকৃতি। কালবৈশাখীর মেজাজও মন্দ ছিল না। আজ শনিবার বিকেলে ঝোড়ো বাতাসের গতি ছিল ঘণ্টায় ৪৪ কিলোমিটার। এর সঙ্গে রাজধানীর আগারগাঁওসহ বেশ কিছু এলাকায় শিলাবৃষ্টিও হয়েছে।

শনিবার ভোরে ঝলমলে আলোয় ছায়ানটের শিক্ষার্থীদের সংগীত পরিবেশন। রমনা পার্ক, ঢাকা, ১৪ এপ্রিল। ছবি: সুমন ইউসুফ

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ঢাকা বিভাগের ঢাকা, নরসিংদী গাজীপুর, টাঙ্গাইল, মাদারীপুর, ফরিদপুর; কুমিল্লা ও সিলেট জেলার ওপর দিয়ে বিকেলে ঝড় বয়ে গেছে। নোয়াখালী ও বরিশালের ওপরও কালবৈশাখীর ঝাপটা সন্ধ্যা নাগাদ লাগতে পারে। শনিবার সবেচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে ঢাকায়—৩০ মিলিমিটার। এ ছাড়া সিলেটে ২৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

এসব এলাকার নৌবন্দরগুলোকে ২ নম্বর সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, আরও ঘণ্টা দুয়েক ঢাকায় এভাবে কালবৈশাখী হতে পারে। এরপর দেশের আরও অনেক জায়গায় ঝড় বয়ে যেতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের এপ্রিল মাসের পূর্বাভাস থেকে জানা গেছে, গত ৩০ বছরের হিসাবে এপ্রিল মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টি হয়ে থাকে ১৩০ দশমিক ২ মিলিমিটার। তবে এবারের এপ্রিলে এর চেয়ে কিছুটা বেশি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এই বৃষ্টির সঙ্গে কালবৈশাখীও বয়ে যেতে পারে। দেশের উত্তর থেকে মধ্যাঞ্চলে প্রায় আট দিন কালবৈশাখী দেখা দিতে পারে। এর সঙ্গে শিলাবৃষ্টিও হতে পারে।