Thank you for trying Sticky AMP!!

ত্রাণ বিতরণে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ

রাঙামাটি শহরের তবলছড়ি এলাকার আনন্দ বিহার সড়কটি এখনো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ছবিটি আজ সকালে তোলা। ছবি: সুপ্রিয় চাকমা

ভয়াবহ পাহাড়ধসের পাঁচ দিনেও রাঙামাটি জেলার ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ কোনো তালিকা পাওয়া যায়নি। আবার উপদ্রুত এ এলাকায় ত্রাণ বিতরণের কাজে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ উঠছে।

কর্তৃপক্ষ বলছে, ধসের কারণে ক্ষতির ব্যাপকতা এবং মাঠপর্যায় থেকে তথ্য আসতে দেরির কারণে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ তালিকা করা সম্ভব হয়নি। তবে এ জন্য ত্রাণ কার্যক্রমে কোনো ব্যাঘাত ঘটছে না বলে দাবি তাদের।
গত মঙ্গলবার ভোর রাত থেকে রাঙামাটির সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। পাহাড়ধসে ১১২ জন নিহত ব্যক্তির তথ্য ছাড়া, বাড়িঘর, গাছপালা, ফসল কিংবা গবাদিপশুর ক্ষয়ক্ষতির কোনো হিসাব দিতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।
এই দুর্যোগের পর এখন ত্রাণ বিতরণ নিয়ে নানা অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে ত্রাণ বিতরণে সমন্বয়হীনতার অভিযোগও রয়েছে। সদরে তো বটে, অন্যান্য উপজেলায়ও ত্রাণ কার্যক্রম জোরদার করা যায়নি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদেরও সবকিছু ঠিকমতো অবহিত করা হচ্ছে না।
জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক সাংসদ উষাতন তালুকদার বলেন, ‘আমাকে কোনো কিছুতে ডাকা হচ্ছে না। আজ পাঁচ দিন হয়ে গেল দুর্যোগের। কেবল আজ (শনিবার) মন্ত্রী বীর বাহদুর আসার পর আমাকে একসঙ্গে ভাত খাওয়ার জন্য ডাকা হয়েছে। কী ক্ষতি, কী ত্রাণ বিতরণ করা হবে, এসব বিষয়ে জেলা প্রশাসক আমাকে অবহিত করেননি।’
তবে জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান সমন্বয় করে কাজ করছেন বলে দাবি করেছেন।
জানতে চাইলে মো. মানজারুল মান্নান আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখনো ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন করা যায়নি। আগামীকালের মধ্যে হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আসলে ক্ষয়ক্ষতি এত বেশি যে গাছপালা, গবাদিপশু, ঘরবাড়ি সব সঠিক খোঁজখবর নিয়ে করতে হচ্ছে।
ক্ষয়ক্ষতির তালিকা ছাড়া ত্রাণ বিতরণের পরিকল্পনা কীভাবে করা হচ্ছে, জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘যারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বিশেষ করে স্বজন হারিয়েছে, তাদের ত্রাণ দিচ্ছি। আর যারা আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে, তাদের শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছে।’
পার্বত্যবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উ শৈ সিং আজ শনিবার দুপুরে রাঙামাটির ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও বিভিন্ন পাড়ায় যান। তিনি কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রে ত্রাণ হিসেবে শুকনা খাবার বিতরণ করেন।
এদিকে আজ সকালে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকা ও বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন রাঙামাটি চাকমা সার্কেলের প্রধান দেবাশীষ রায় এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তাঁর স্ত্রী ইয়েন ইয়েন সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা প্রথমে টেলিভিশন উপকেন্দ্রের আশ্রয়শিবির ও পরে কয়েকটি পাড়া ঘুরে দেখেন। এ দুজনকে পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা তাঁদের দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরেন। দেবাশীষ রায় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এসব বিষয়ে আলাপ করবেন বলে আশ্বাস দেন।
দেবাশীষ রায়ও ত্রাণ ও তালিকা তৈরি নিয়ে সমন্বয়হীনতার বিষয়টি উল্লেখ করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এখনো তালিকা তৈরি করা যায়নি। চেয়ারম্যান, হেডম্যান, কার্বারি কিংবা প্রশাসন—কারও কাছে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সঠিক তথ্য নেই। এ জন্য সমন্বয় খুব দরকার।
মঙ্গলবারের ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামের সঙ্গে রাঙামাটির সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সড়ক যোগাযোগ পুনঃস্থাপন করতে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ এবং সেনাবাহিনী যৌথভাবে কাজ করছে। তবে আজ সকাল থেকে রাঙামাটি-সাপছড়ি পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার অংশে ছোট যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। ওই ভাঙা অংশ হেঁটে পার হয়ে ঘাগড়া বাজার থেকে আবার লোকজন চট্টগ্রামের গন্তব্যের গাড়ি ধরছে।