Thank you for trying Sticky AMP!!

নগরায়ণে সাবধান হতে হবে

বিশ্বের বৃহত্তম বদ্বীপ বাংলাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব বিশ্বের সবচেয়ে বেশি। প্রায় ৭০০ ছোট-বড় নদী এই দেশের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে। এসব নদীর পানির ৯৩ শতাংশের উৎস বাংলাদেশের বাইরে। এসব নদী দিয়ে বছরে ১৪০ কোটি টন পলি বাংলাদেশের উপকূলে এসে জমা হয়। নগরায়ণ ও উন্নয়ন করতে হলে এসব বাস্তবতা মাথায় রাখতে হবে। অনেক সাবধানী হতে হবে। এমন কোনো কাজ করা যাবে না, যাতে এখানকার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের কোনো ক্ষতি হয়।

আজ সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বিশ্বের বদ্বীপগুলোতে নগরায়ণ: ব্যবস্থাপনার উদ্ভাবনী গবেষণা ও বাস্তবায়ন’ শীর্ষক এক কর্মশালায় দেশের শীর্ষস্থানীয় নদী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেছেন। পানি উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিইউএম) ও নেদারল্যান্ডস অর্গানাইজেশন ফর সায়েন্টিফিক রিসার্চের যৌথ উদ্যোগে তিন দিনের এই কর্মশালার আজ ছিল দ্বিতীয় দিন।

কর্মশালায় বাংলাদেশের উপকূলে ভূমি গঠন বা বদ্বীপ ব্যবস্থাপনা নিয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞরা বক্তব্য দেন। তাঁরা বদ্বীপ ব্যবস্থাপনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা ও দেশের গবেষকদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার ওপর জোর দেন। এসব পরিকল্পনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন তাঁরা। একই সঙ্গে স্থানীয় জ্ঞানকে বিবেচনায় আনার পক্ষে মত দেন তাঁরা।

কর্মশালায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, ঐতিহাসিকভাবে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের নদী ও বদ্বীপ অঞ্চল ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়। ষাট ও আশির দশকে এখানে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। ওই বাঁধগুলো দিয়ে যাতে পানি যেতে পারে, সে জন্য স্লুইসগেট বা জলকপাট নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে সেগুলোর ৯০ শতাংশই অকার্যকর। এভাবে একটি প্রকল্প নেওয়ার পর তা যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ না হয়, তাহলে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। এ ধরনের প্রকল্পের ক্ষেত্রে দেশে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ঘাটতি রয়েছে।

আইনুন নিশাত আরও বলেন, পানি নিয়ে সরকারের পাঁচ-ছয়টি মন্ত্রণালয় কাজ করে। কিন্তু তাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব আছে।

ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালক সালিমুল হক বলেন, যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়ার আগে তা যথার্থ হয়েছে কি না, তা বোঝার জন্য গবেষণা প্রয়োজন। তবে সেসব গবেষণা হতে হবে মানসম্পন্ন।

বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক আতিক রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের নদী-মাটি ও প্রাকৃতিক পরিবেশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বদলে যাচ্ছে। এই বদল সামনে আরও দৃশ্যমান হবে। ফলে ওই পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার মতো কার্যকর কৌশল আমাদের নিতে হবে।’

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব জাফর আহমেদ খান বলেন, ‘আমরা প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়ার আগে সমীক্ষা ও সম্ভাবনা যাচাই করে থাকি। বদ্বীপ পরিকল্পনার ক্ষেত্রেও আমরা গবেষণাকে গুরুত্ব দিয়েছি।’

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনৈতিক বিভাগের সদস্য অধ্যাপক শামসুল আলম, ঢাকায় নিযুক্ত নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত লিওন মার্গারেথা কুয়লেনায়ের, আইডব্লিইউএমের নির্বাহী পরিচালক মনোয়ার হোসেনসহ দেশের শীর্ষ স্থানীয় গবেষক এবং নেদারল্যান্ডসের গবেষকেরা এতে অংশ নেন।