Thank you for trying Sticky AMP!!

পথভোলা এক হনুমান

পথভোলা সেই হনুমান

গত ১৪ জুলাই একটি পথভোলা হনুমান আমাদের পাশের গ্রাম পাগলায় আসে। লোকজন ওটাকে কলা-পাউরুটি-বিস্কুট খেতে দেয়। প্রায় ১৫ বছর ধরে দু-একটা হনুমান বাগেরহাটের বিভিন্ন গ্রামে আসে। গ্রাম থেকে গ্রামে ঘুরে বেড়ায়। বড়রা খেতে দেয়, ছেলেপুলেরা ঢিল ছোড়ে, ভয় দেখায়। ২০০৮ সালের মার্চ মাসে একটি হনুমান আমাদের গ্রাম সাতশৈয়ায় আসে। তারপর চলে যায় খলসী গ্রামে। রাতে একটা পুজোখোলার বটগাছের নিচু ডালে লম্বা লেজটি ঝুলিয়ে যখন ঘুমাচ্ছিল, তখন দু-তিনটি কিশোর-যুবক গাছি–দা দিয়ে ওটার লেজের প্রায় পুরোটা কেটে ফেলেছিল। যন্ত্রণায় হনুমানটা লেজ চেপে ধরে চেঁচাচ্ছিল ভয়ংকরভাবে, বলা যায় কাঁদছিল।

ঢাকা থেকে ফোন করি আমি ফকিরহাট সদর ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান জাহিদ খান ও তৎকালীন ইউএনওকে। পরদিন তাঁরা যখন ঘটনাস্থলে যান, তখন হনুমানটি এসে আশ্রয় নিয়েছে সিংগাতি গ্রামের মুচিবাড়ির একটা গাছে। অনেক চেষ্টা করেও নামানো গেল না। বাংলাদেশ ওয়াইল্ড লাইফ ক্লাবের সদস্যরা অপরাধী তিনজনকে ধরার চেষ্টা করলেন, পলাতক তারা। ব্যথিত বহু নারী-পুরুষ হনুমানটিকে দেখতে এলেন।

মুচিবাড়ির লোকজন কত যে চেষ্টা করল মাটিতে খাবার রেখে ও জলের বাটি রেখে ওটাকে নামাতে! না, হনুমানটি টানা তিন দিন কিছুই খেল না, নামল না নিচেও। লেজ এক হাতে চেপে রেখে সেটি টানা তিন দিন ধরে কাছের পেঁপেগাছের কচি কচি পেঁপে খেল।
খেল পেঁপেপাতাও। ব্যস! তিন দিন পরে সে নামল নিচে, প্রাণ ভরে পান করল জল। অবাক কাণ্ড এই যে তার লেজের খত একেবারেই শুকিয়ে গেছে।

এ ঘটনা আমি দু–তিনটি জাতীয় পত্রিকাকে জানাই, লেজকাটা হনুমানের ছবিও পাঠাই। ছাপা হয়েছিল। আবার পিরোজপুর জেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রামে ঘুমন্ত হনুমানের লেজে মোটা সুতা বেঁধে তার এমাথায় কুটোর কুণ্ডলী বেঁধে আগুন দেওয়ার পর হনুমানটি ধানখেত ও ধানখেতের পাহারা ঘরগুলোর মাথায় মাথায় লম্বা লম্বা লাফ দিয়ে লঙ্কাকাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছিল।

এ হনুমানগুলো এখন শুধু টিকে আছে যশোর জেলার কেশবপুরে। দুই-আড়াই শ হবে সংখ্যায়। শরীরের দৈর্ঘ্য গড়পড়তা ৬৫ সেন্টিমিটার। শুধু লেজটি ৮৩ সেন্টিমিটার। ওজন ৮-২০ কেজি। এদের মাথা-মুখভরা যেন সুবিন্যস্ত ছাই-ধূসররঙা চুল-দাড়ি। মুখখানা কালো। পিঠ ও পা ধূসর বা হালকা বাদামি। কান, হাত ও পায়ের পাতা কালো বা কালচে-বাদামি। এগুলো দিবাচর। গাছে অথবা মাটিতে হেঁটে হেঁটে খাবার সংগ্রহ করে।

কেশবপুরের এ হনুমানরা মানুষের হাত থেকে কলা, ফলমূল খেতে অভ্যস্ত। মূল খাদ্য গাছের কচিপাতা, কুঁড়ি, ফুল-ফল ও শস্যদানা। দুই বছর অন্তর জানুয়ারি-মে মাসে একবার বাচ্চা দেয়। গর্ভধারণকাল ১৮০ থেকে ২০০ দিন। পুরুষ বাচ্চা ৫-৬ ও মেয়ে বাচ্চা তিন–চার বছরে বয়ঃপ্রাপ্ত হয়। বেঁচে থাকে ১৮ থেকে ৩০ বছর।

একাধিক পুরুষের নেতৃত্বে দলে ১৫-২০টি বাস করে। কেশবপুরের এ হনুমানরা মানুষের হাত থেকে কলা, ফলমূল খেতে অভ্যস্ত। মূল খাদ্য গাছের কচিপাতা, কুঁড়ি, ফুল-ফল ও শস্যদানা। দুই বছর অন্তর জানুয়ারি-মে মাসে একবার বাচ্চা দেয়। গর্ভধারণকাল ১৮০ থেকে ২০০ দিন। পুরুষ বাচ্চা ৫-৬ ও মেয়ে বাচ্চা তিন–চার বছরে বয়ঃপ্রাপ্ত হয়। বেঁচে থাকে ১৮ থেকে ৩০ বছর।

কেশবপুরের হনুমানরা দু-একটা করে কলাভর্তি ট্রাকে চড়ে বহুদূরে কোথাও এসে নেমে পড়েই চরম বিড়ম্বনায় পড়ে। কিন্তু আসে কেন? এমনিতেই এরা মহাবিপন্ন। যেগুলো আসে, ওগুলো একসময় বেঘোরে মারাই পড়ে। এ বছর অবশ্য ছেলেপুলেদের ভয় দেখানো হয়েছে। মানুষবর্গের বলে ওদেরও করোনা হতে পারে। হয়তো এ কারণে তারা আর পথভোলা হনুমানকে বিরক্ত করবে না।