Thank you for trying Sticky AMP!!

পদ্মাপারের কালোবুক বাবুই

রাজশাহীর পদ্মাপারে ধানখেতে পুরুষ কালোবুক বাবুই l ছবি: লেখক

নৌকা থেকে নেমেই চরের বিশাল নলখাগড়া ও ঘাসবনের ভেতর ঢুকলাম। একটা ভরত পাখি মাটি থেকে খাড়া আকাশে উঠে ডাকতে লাগল। ওর উড়ন্ত ছবি তুলতে দ্রুত ক্যামেরা তাক করলাম। কিন্তু প্রখর রোদে চোখ ধাঁধিয়ে গেল, অন্ধকার দেখলাম। ধীরে ধীরে নলখাগড়া ঠেলে এগোচ্ছি। হঠাৎ কিছু একটা নলখাগড়ার ওপর এসে বসল। নিঃশব্দে রেঞ্জের মধ্যে চলে এলাম। আলতোভাবে ক্যামেরার ভিউ ফাইন্ডারে চোখ রাখলাম। পটাপট কয়েকটা ক্লিক করে ভালোভাবে পাখিটা পর্যবেক্ষণ করলাম। না, আগে কখনো দেখিনি! কিছুটা ফিঞ্চের মতো লাগছে। আবার ক্যামেরায় চোখ রাখলাম, পাখি উড়াল দিল।
চর থেকে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছি, এমন সময় একঝাঁক পাখিকে নদীর পাড়ের ধানখেতে নামতে দেখলাম। ওরা আনন্দে পাকা ধানে ঠোঁট চালাচ্ছে। কাছাকাছি যেতেই ঝাঁকটা উড়ে গেল। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর আবার এল। এভাবে বেশ কয়েকবার আসা-যাওয়া করল। ঝাঁকে ১২-১৪টি পাখি ছিল। ছবি তুললাম। গেস্টহাউসে ফিরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ছবিগুলো দেখলাম। পাখির পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হলাম।
ঘটনাটি গত মে মাসের মাঝামাঝি রাজশাহী শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদীর পাড়ে।
এতক্ষণ ফিঞ্চের মতো দেখতে যে পাখিটির কথা বলছিলাম, সে এ দেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি ‘কালোবুক বাবুই’ (Black-breasted Weaver, Bengal weaver or Black-throated Weaver)। ‘বাংলা বাবুই’ বা ‘বুক-কালো বাউই’ নামেও পরিচিত। পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Ploceous benghalensis (প্লোসিয়াস ব্যাঙ্গালেনসিস)।
কালোবুক বাবুই লম্বায় ১৪-১৫ সেন্টিমিটার। ওজন ১৮-২২ গ্রাম। পুরুষ ও স্ত্রীর দেহের রঙে বেশ পার্থক্য। প্রজনন মৌসুমে পুরুষের দেহে রঙের মেলা বসে যেন! পুরুষের মাথার চাঁদি সোনালি-হলুদ হয়ে যায়। কান-ঢাকনি ও গাল হালকা বাদামি থেকে সাদা। ঘাড় ধূসর-কালো ও গলা সাদা। বুকে চওড়া কালো ফিতা। পেট ফিকে সাদা, যাতে হালকা বাদামি বা হলদের ছোঁয়া। পিঠে কালচে লম্বালম্বি দাগ। প্রজননকালের স্ত্রী অন্য সময়ের চেয়ে কিছুটা উজ্জ্বল, অনেকটা শীতের পুরুষের মতো। স্ত্রী ও প্রজননহীন পুরুষ মাথা ও ঘাড়ের ওপর কালচে ডোরা, যার মাঝখানে হলুদ। দেহের ওপরটায় লম্বালম্বি হলুদ ও কালচে দাগ। ভ্রু ও গলা হলুদ, কান-ঢাকনি বাদামি ও পেট পীতাভ। বুকের ওপরের কালো ফিতা অসম্পূর্ণ। স্ত্রী-পুরুষনির্বিশেষে চোখ হালকা বাদামি, ঠোঁট কালচে। পা, আঙুল ও নখ হালকা গোলাপি। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি দেখতে হুবহু মায়ের মতো, তবে দেহের নিচটা ফিকে।
এরা নলখাগড়া বন ও লম্বা ঘাসবনের বাসিন্দা। মূলত সিলেট, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে দেখা মেলে। তবে বেশ দুর্লভ। ঘাসবীচি, শস্যদানা, পোকামাকড় ইত্যাদি খায়। মৃদু স্বরে ‘চিট-চিট-চিট-চিট’ ডাকে।
মে থেকে সেপ্টেম্বর প্রজননকালে নদীর তীরে বা জলার ধারে নলখাগড়া বা উঁচু ঘাসে ২০-২৫ সেন্টিমিটার লম্বা কিছুটা ডিম্বাকার বাসা বানায়, যা বাবুইয়ের বাসার তুলনায় ছোট। একই জায়গায় সচরাচর দুই থেকে পাঁচটি বাসার কলোনি দেখা যায়। পুরুষ পাখি বাসা বানায়, অর্ধসমাপ্ত বাসা স্ত্রী পরখ করে। পছন্দ হলে জোড় বাঁধে। স্ত্রী দুই থেকে চারটি সাদা ডিম পাড়ে। প্রায় দুই সপ্তাহে ডিম ফোটে। বাচ্চারা এক মাসের মধ্যে উড়তে শেখে এবং নীল আকাশে স্বপ্নের ডানা মেলে।