Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রত্যাবাসনে তাগিদ কম জাতিসংঘের

প্রথম আলো ফাইল ছবি
>
  • রোহিঙ্গাদের জন্য প্রায় ৭ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা সহায়তার পরিকল্পনা জাতিসংঘের
  • ভারতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারাও বাংলাদেশে আসছে
  • জাতিসংঘ কিছু বলছে না

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। অথচ রোহিঙ্গা সংকটের শুরু যে দেশে এবং প্রত্যাবাসন যেখানে হবে অর্থাৎ মিয়ানমারের রাখাইনে এখন কাজ করতেই পারছে না জাতিসংঘ। এ ছাড়া ভারতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারাও বাংলাদেশে আসছে। এ নিয়েও জাতিসংঘ কিছু বলছে না।

এমন এক প্রেক্ষাপটে গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রোহিঙ্গাবিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের সভায় জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা। কারণ, রোহিঙ্গাদের রাখাইনে প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরির স্বার্থে মিয়ানমারের রাজ্যটিতে নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়াটা জরুরি। তা না হলে রোহিঙ্গারা রাখাইনে ফিরে যেতে উৎসাহিত হবে না। তাঁরা বলছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘের তাগিদ কম।

পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক জাতীয় টাস্কফোর্সের সভায় সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার কর্মকর্তাদের পাশাপাশি জাতিসংঘের একাধিক সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। প্রায় দুই মাসের বিরতিতে অনুষ্ঠিত টাস্কফোর্সের সভায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যালোচনার পাশাপাশি পরবর্তী সময়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

জাতিসংঘের বিরুদ্ধে ক্ষোভ
টাস্কফোর্সের বৈঠকে জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়ে কেন প্রশ্ন উঠল, এ নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশের অন্তত চারজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জোর দিলেই বাংলাদেশ নিয়ে জাতিসংঘ প্রশ্ন তুলেছে। অথচ নভেম্বরের শেষ দিক থেকে উত্তর রাখাইনে জাতিসংঘের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে বললেই চলে। মিয়ানমারের ওই রাজ্যটিতে জাতিসংঘের কোনো কর্মকর্তার উপস্থিতি নেই। জাতিসংঘের বিদেশি বিশেষজ্ঞরাও সেখানে যেতে পারছেন না।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, গত দেড় মাসে কয়েক শ রোহিঙ্গা ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছে। সংখ্যায় খুব কম হলেও রাখাইন থেকেও অব্যাহত আছে রোহিঙ্গাদের আসা। এ বিষয়গুলো নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলেনি জাতিসংঘ।

আলোচনার একপর্যায়ে রাখাইনের সর্বশেষ পরিস্থিতি অর্থাৎ দেশটির বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সংঘাতের বিষয়টি এসেছে। এ সময় জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা মন্তব্য করেছেন, নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতিতে তাঁরাও উদ্বিগ্ন।

এদিকে টাস্কফোর্সের বৈঠকের পর শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল কালাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা এবং কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য জাতিসংঘ এ বছর ৯২১ মিলিয়ন ডলারের (প্রায় ৭ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা) সহায়তা দেওয়ার খসড়া পরিকল্পনা করছে। এটি সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে, যা যাচাই-বাছাই শেষে ফেব্রুয়ারিতে ঘোষণা করা হতে পারে। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে কক্সবাজারের পরিবেশগত ক্ষতি ও জ্বালানি ব্যবস্থাপনায় সহায়তার জন্য বিশেষায়িত একটি প্রকল্পে তিন বছরের জন্য ১১৭ মিলিয়ন ডলার দেবে উন্নয়ন সহযোগীরা। এ নিয়েও সভায় আলোচনা হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ মাসের জন্য ৯৫১ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা দিয়েছিল জাতিসংঘ। ওই তহবিলের ৮০ শতাংশ সরবরাহ করা হয়েছে। ফলে এ বছরের খসড়া পরিকল্পনার ৯২১ মিলিয়ন ডলারের সঙ্গে গত বছরের অবশিষ্ট তহবিলও যুক্ত হবে।

নতুন আসা রোহিঙ্গারা
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রাবার বাগানের কাছের অন্তর্বর্তীকালীন শিবিরে এ মুহূর্তে ১৭০টি রোহিঙ্গা পরিবারের প্রায় ৭৫০ সদস্য আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যে এ মাসের প্রথম ১০ দিনে এসেছে ১১১টি রোহিঙ্গা পরিবারের ৪৬৮ সদস্য। তারা সবাই ভারত থেকে এসেছে। এই রোহিঙ্গারা জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার তত্ত্বাবধানে রয়েছে।