Thank you for trying Sticky AMP!!

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় গতকাল সারা দিন বৃষ্টি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন কর্মমুখী মানুষ। গতকাল বেলা একটায় চট্টগ্রাম নগরের কর্ণফুলী নদীর ফিশারিঘাট এলাকায়

বঙ্গোপসাগর অস্বাভাবিক উষ্ণ, ভারী বৃষ্টির ভয়

  • আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা কম।

  • গভীর নিম্নচাপটি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটা থেকে প্রচুর বৃষ্টি ঝরিয়ে খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলায় প্রবেশ শুরু করবে।

ঘন মেঘে ঢেকে রয়েছে রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকার আকাশ। থেমে থেমে বৃষ্টিও শুরু হয়েছে। হেমন্তের এই সময়ে হালকা হিম হিম আবহাওয়ার বদলে প্রকৃতির এই রুদ্রমূর্তি দেখে অনেকেই অবাক হয়েছেন।

তবে দেশ-বিদেশের আবহাওয়াবিষয়ক সংস্থাগুলো বলছে, বঙ্গোপসাগর অস্বাভাবিকভাবে উত্তপ্ত হয়ে গেছে। গত ৩০ বছরের মধ্যে বঙ্গোপসাগরের তাপমাত্রা এখন সবচেয়ে বেশি। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে তা ৩২ থেকে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠা–নামা করছিল। অথচ এই সময়ে সেখানকার তাপমাত্রা ২৭ থেকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকার কথা। বাড়তি এই উত্তাপের কারণেই সেখানে চলতি মাসে পরপর তিনটি লঘুচাপ তৈরি হয়েছে। এ কারণেই বর্তমান লঘুচাপটি দ্রুত গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। তবে নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা কম।

বঙ্গোপসাগর উত্তপ্ত হওয়ার কারণে প্রচুর মেঘমালাও তৈরি হয়েছে। অক্টোবরের শেষ সময়ে এ ধরনের আবহাওয়াকে অস্বাভাবিক হিসেবে তুলে ধরে আবহাওয়া ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও প্রশান্ত মহাসাগর থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় ‘লা নিনা’ নামের এক বিশেষ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবেই আবহাওয়া দ্রুত এমন দুর্যোগপূর্ণ হচ্ছে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর রংপুরে অতিবৃষ্টি এ রকম আবহাওয়ার উদাহরণ।

রাজধানীসহ দেশের মধ্যাঞ্চলে ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা। এ মাসে একাধিক ঘূর্ণিঝড় ও সামনের মাসগুলোতে তিন থেকে চারটি লঘুচাপ হতে পারে।

জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়াবিষয়ক গবেষণা সংস্থা এনসো প্রেডিকশন সেন্টারের প্রধান বিজ্ঞানী রাশেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এমনিতেই বিশ্বের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার প্রভাব বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। কিন্তু এর মধ্যে আবার লা নিনার কারণেও তাপমাত্রা আরও বেড়ে গেছে। ফলে এই দুই পরিস্থিতি মিলে এ বছর বঙ্গোপসাগর থেকে ঘন ঘন ঝড়, মেঘমালা ও জলোচ্ছ্বাস আসছে। এ বছরের বাকি সময়জুড়ে এ ধরনের বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করতে পারে।

এনসো প্রেডিকশন সেন্টারের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এবারের শীত হবে ভেজা অর্থাৎ বৃষ্টিবহুল। উত্তপ্ত বঙ্গোপসাগরের কারণে চলতি মাসে একটি ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস আগে থেকেই ছিল। তবে বছরের বাকি সময়ে একাধিক ঘূর্ণিঝড় ও প্রতি মাসে তিন থেকে চারটি লঘুচাপের আশঙ্কা করছে আবহাওয়াবিষয়ক ওই সংস্থা। এর প্রভাবে বঙ্গোপসাগর থেকে এই শীতের মধ্যেও ঘন ঘন মেঘ ও বৃষ্টি বাংলাদেশে হানা দিতে পারে।

আজ দুপুর থেকে ঢাকায় ভারী বৃষ্টি

যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাইমেট প্রেডিকশন সেন্টারের পূর্বাভাস অনুযায়ী, গভীর নিম্নচাপটি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটা থেকে প্রচুর বৃষ্টি ঝরিয়ে খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলায় প্রবেশ শুরু করবে। সকাল ৭টা থেকে ১০টার মধ্যে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতে; বেলা ১১টা থেকে ১টার মধ্যে বৃহত্তর ফরিদপুর-মাদারীপুর-গোপালগঞ্জ জেলার ওপরে; বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোতে; রাত ১০টা থেকে শনিবার রাত ২টা পর্যন্ত নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং রাত ৩টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত সিলেট বিভাগের জেলাগুলোতে গভীর নিম্নচাপের ভারী বৃষ্টিপাতের অংশ অতিক্রম করতে পারে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর, ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর ও বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ আবহাওয়াবিষয়ক সংস্থাগুলো বলছে, দেশের উপকূলীয় দ্বীপ ও চরগুলোতে রেকর্ড বৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে সন্দ্বীপ, হাতিয়া, ভাসানচরে শনিবার ৩০০ থেকে ৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। উপকূলীয় জেলাগুলোর মধ্যে খুলনা ও বরিশালে ২০০ থেকে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে। আর রাজধানীসহ দেশের মধ্যাঞ্চলে ১০০ থেকে ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে। এই ভারী বৃষ্টি শহরে জলাবদ্ধতা, গ্রামে ফসলের ক্ষতি এবং নদীতীরবর্তী এলাকায় বন্যা নিয়ে আসতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা কম। আবহাওয়া অধিদপ্তর অবশ্য বলছে, শেষ সময়ে এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলেও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কিছুটা কমে আসবে। আর পূর্বঘোষণা অনুযায়ী এর নাম হতে পারে ‘গতি’। জাতিসংঘের আবহাওয়াবিষয়ক সংস্থার কাছে এই ঝড়ের আগাম নাম প্রস্তাব করেছেন ভারতের আবহাওয়াবিদেরা।

বঙ্গোপসাগরের তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি বেশি

যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়াবিষয়ক সংস্থা ক্লাইমেট প্রেডিকশন সেন্টার বলছে, বছরের এই সময়ে বঙ্গোপসাগরে তাপমাত্রা থাকার কথা ২৭ থেকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ছয় মাস ধরে সেখানে তাপমাত্রা ২৯ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ছিল। এ কারণে গত এপ্রিলে ঘূর্ণিঝড় আম্পান ভয়ানক শক্তি নিয়ে বাংলাদেশে আঘাত করে। মৌসুমি বায়ু শক্তিশালী থাকায় জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টানা দুই মাস চলে বন্যা। এক মাস ধরে তা বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ অংশের তাপমাত্রা বেড়ে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠেছে। এ জন্য সেখানে একের পর এক লঘুচাপ তৈরি হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরে তাপমাত্রা বাড়ার কারণে এ বছর স্বাভাবিকের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে।

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কথা বিবেচনা করে চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর এবং উপকূলকে ৪ নম্বর সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত নৌযানগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি এসে নিরাপদ স্থানে অবস্থান করতে বলা হয়েছে।

সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে উপকূলীয় নিম্নচাপ সম্পর্কে প্রকাশিত বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিম্নচাপের প্রভাবে ২২ থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের উপকূল থেকে মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত এবং ভারতের ত্রিপুরা, আসাম, মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও অতিভারী বৃষ্টির আশঙ্কা আছে। নিম্নচাপের প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি জোয়ার হতে পারে।

জানতে চাইলে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে দেশের বেশির ভাগ নদ-নদীর পানি বেড়ে যেতে পারে। উজান থেকেও অতিবৃষ্টির ঢল বাংলাদেশের দিকে আসতে পারে। ফলে আগামী তিন-চার দিনের মাথায় দেশের কয়েকটি এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের কৃষি আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বৃষ্টি থেকে শীতকালীন ফসল রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে সবজির জমিতে যাতে পানি জমতে না পারে, সে জন্য পানিনিষ্কাশনের নালা পরিষ্কার রাখতে হবে। আমনের জমিতেও যাতে পানি না জমতে পারে, সে ব্যবস্থা করতে হবে।