Thank you for trying Sticky AMP!!

বটগাছের ফলভুক পাখিরা

বটগাছে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় হলদে পা সবুজ হরিয়াল। ঢাকার বিমানবন্দর এলাকায় সম্প্রতি

করোনাকালে শীতের পাখি দেখার আশায় ঢাকার বিমানবন্দর এলাকায় গিয়েছিলাম। জলাশয়গুলোয় পাখি না পেলেও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরের একটি ছোট্ট বটগাছে বেশ কিছু পাখির দেখা পেলাম। একসঙ্গে পাঁচ শতাধিক হরিয়াল! ঢাকা শহরটা পোকাভুক আর ময়লাভুক পাখিদের দখলে থাকলেও বটগাছের ফল পাকলে বিভিন্ন এলাকা থেকে ফলভুক পাখিগুলো এ শহরে ভিড় জমায়।

বটগাছ চেনেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। বনে ও লোকালয়ে এ দেশে এখনো বেশ ভালো সংখ্যায় টিকে আছে অনেক শতবর্ষী বটগাছ। নওগাঁ জেলায় আমার নিজ গ্রামের বাজারের নাম বটতলা। বটগাছকে ঘিরেই এই বাজার গড়ে উঠেছে প্রায় ৫০ বছর আগে। গাছটির বয়স প্রায় দুই শ বছর। এলাকায় যখন বিদ্যুৎ ছিল না তখন মানুষের বিশ্রামের প্রধান জায়গা ছিল এই বটগাছ। এখনো সারা দেশে এ রকম বটতলার সংখ্যা অনেক। বট আমাদের একেবারে দেশীয় প্রজাতির বৃক্ষ। বট পরিবারে প্রায় অর্ধশতের বেশি প্রজাতি টিকে আছে। তবে ফাইকাস বেঙ্গালেনসিস প্রজাতির বটগাছটির বৈজ্ঞানিক নামকরণই হয়েছে বাংলার নামে। এ প্রজাতিটি পৃথিবীর বুকে আমাদের দেশটাকে প্রতিনিধিত্ব করে।

ভারতীয় উপমহাদেশে এ গাছের সাংস্কৃতিক কদরও অনেক বেশি। ভারতের জাতীয় গাছ হলো বটগাছ। বটগাছের পাকা ফলের খাদ্যমান খুব ভালো। পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন, শর্করা ও মিনারেল থাকে। তাই ফলটি পাখিদের দারুণ পছন্দ।

বটগাছে ৪০ প্রজাতির বেশি পাখি খাবার খেতে আসে বলে তথ্য পাওয়া যায়। ছোট্ট একটি গাছেও এত বেশি ফল থাকে যে শত শত পাখি থাকলেও পাখিদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব হয় না। গান গেয়ে খাবার খায় আর পুরো এলাকাটা মুখরিত করে রাখে। পাখিদের কোন কোনো প্রজাতি গাছের নিচের শাখায় আবার কোনোটি ওপরের ডালে খাবার খোঁজে। কেউবা পাকা ফল আবার কেউ কেউ আধা পাকা ফল পছন্দ করে। প্রজাতিভেদে বটগাছে সারা বছরই ফল দেখা যায়।

একটি বটগাছে কত জাতের পাখি খাবারের জন্য আসে আর কোন জাতের পাখিরা বট ফল বেশি পছন্দ করে, তার একটি গবেষণা হয়েছে। গবেষণাটিতে অংশ নিয়েছে দেশের প্রায় ১৩৪ জন ‘ই-বার্ডার’। সম্প্রতি বটগাছের জনপ্রিয় ১০টি প্রজাতির একটি পাখির তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে। পাখি গবেষক সায়েম ইউ চৌধুরীর এই সংকলনে দেখা যাচ্ছে বটগাছে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় দেখা যায় হরিয়ালের বিভিন্ন প্রজাতি। হরিয়ালের আটটি প্রজাতির মধ্যে হলদে পা সবুজ হরিয়াল সবচেয়ে বেশি দেখা যায় বটগাছে। গবেষণায় ফলাফলে দ্বিতীয় স্থানে আছে ছোট বসন্তবাউরির জাতটি। এ পরিবারের দাগি বসন্তবাউরি নামের প্রজাতিটি লোকালয়ের বাইরে বনের বটগাছগুলোয় বেশি দেখা যায়।

তৃতীয় প্রজাতি হলো এশীয় কোকিল। সারা বছরই এদের উপস্থিতি থাকলেও বসন্তে এদের ডাকে মুখরিত থাকে প্রায় সব এলাকা। ঢাকা শহরে কোকিলের আধিক্য বসন্তে বেড়ে যায়। এরা কাকের বাসায় ডিম পেড়ে বাচ্চা ফোটায় বলে ঢাকায় কোকিল দেখা যায় সহজেই।

হলদে পাখিও বেশ ভালোই দেখা যায়। এরা বটগাছের ফল ও পোকা দুটিই পছন্দ করে। এ প্রজাতির পর শালিকের দুটি প্রজাতি বটগাছের পাখির তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। এগুলো হলো ভাতশালিক আর খয়রা লেজ কাঠশালিক। পুরো গাছে এরা খাবার খোঁজে। এ ছাড়া দেখা মেলে কাঠঠোকরা আর দামার কয়েকটি প্রজাতি। বিরল প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় উদয়ী পাকড়া ধনেশ। কেবল গভীর বনের বটগাছগুলোতে এদের বসবাস বেশি।

বটগাছে পাখির পাশাপাশি বিভিন্ন জাতের কাঠবিড়ালি, গিরগিটি ও এমনকি গাছের কোটরে সাপও দেখা যায়। সব মিলিয়ে বটগাছ একটি অতিপ্রাকৃতিক গাছ। বটগাছের মতো মূল্যবান একটি প্রজাতির গাছ কিন্তু সাধারণ মানুষ বা কৃষকদের কাছে অজনপ্রিয়। বাণিজ্যিকভাবে এর ব্যবহার কম বলেই হয়তো গাছটির প্রতি অবহেলা আছে। বাংলার প্রতিটি রাস্তার মোড়ে একটি করে বটগাছ থাকলে লোকালয়ের সৌন্দর্য যেমন বাড়বে তেমনি প্রাকৃতিক ভারসাম্যও ফিরে আসবে।

সীমান্ত দীপু : বন্য প্রাণী গবেষক