Thank you for trying Sticky AMP!!

বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন গবেষণায় একটি দিক এসেছে, অন্য দিকটাও ভয়াবহ

বুয়েটের অধ্যাপক এ কে এম সাইফুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

জলবায়ু পরিবর্তনে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির আশঙ্কার মধ্যে বাংলাদেশের জন্য পাঁচটি ঝুঁকি অপেক্ষা করছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস বাড়ার পাশাপাশি বিশাল ভূখণ্ড পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের এ ঝুঁকিতে কেবল দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর বাসিন্দারাই নয়, উত্তরা ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোও রয়েছে। দেশের দুই অঞ্চলের মানুষের ঝুঁকির মধ্যে ভিন্নতা আছে।

বিভিন্ন গবেষণা বলছে, বিশ্বে উষ্ণতা বাড়লে বাংলাদেশের দুই অঞ্চলে যে সমস্যার সৃষ্টি হবে, তার প্রভাব সারা দেশেই পড়বে।

বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি নিয়ে বিবিসি গত সোমবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির কৃষি, পরিবেশ এবং উন্নয়ন অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জয়েস জে চেনের বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণালব্ধ মত তুলে ধরা হয়। জয়েস জে চেন জলবায়ু পরিবর্তন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের মধ্যকার জটিল সম্পর্কের ওপর গবেষণা করছেন।

অধ্যাপক জয়েস জে চেনের এই গবেষণাকে যৌক্তিক ও বাস্তব অবস্থার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ বলে মনে করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এবং জাতিসংঘের জলবায়ুসংক্রান্ত প্যানেলে (আইপিসিসি) বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি এ কে এম সাইফুল ইসলাম। তবে তিনি এও বলেছেন, চেনের গবেষণায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঝুঁকির বিষয়ের একটি দিক তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু এর কারণে নদীর পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় উত্তরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাপনেও প্রভাব ফেলবে। তিনি বলেন, ‘চেনের গবেষণায় এটি না আসায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ যে কতটা ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে আছে, তা বোঝা যায় না। তাই বাংলাদেশ নিয়ে এই গবেষণাকে একটি দিকের বলা যেতে পারে। অন্য দিকটাও ভয়াবহ।’

জয়েস জে চেন তাঁর গবেষণায় বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি বাংলাদেশের গ্রামের মানুষের ওপর পর্বতসমান চাপ সৃষ্টি করেছে। স্থানচ্যুত হচ্ছে উপকূলীয় এলাকার মানুষ। চলতি শতাব্দীর শেষে বাংলাদেশের উপকূল বরাবর সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১ দশমিক ৫ মিটার বাড়বে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন। এই সময়ে উপকূলে অস্থিরতা চরম আকার ধারণ করবে। ভয়ংকর ঝড় এবং অস্বাভাবিক উচ্চতার জোয়ার, তথা জলোচ্ছ্বাস এখন বাংলাদেশে প্রতি দশকে একবার করে আঘাত হানছে। ২১০০ সালের দিকে সেটা প্রতিবছর ৩ থেকে ১৫ বার নিয়মিত আঘাত হানতে পারে। বাংলাদেশে উপকূলীয় এলাকার বড় শহরে অনেক অভিবাসন ঘটছে। চেন সতর্ক করেছেন, এখনো অনেক মানুষ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। অস্বাভাবিক উচ্চতার জোয়ারের কারণে ওই শহরগুলো ভবিষ্যতে বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠতে পারে। এর কারণে লাখ লাখ মানুষকে নতুন আশ্রয়ের সন্ধান করতে হতে পারে। জমিতে লবণাক্ততার কারণে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হবে। এ কারণে মানুষ শহরমুখী হবে।

বাংলাদেশের জন্য ৫ ঝুঁকি অপেক্ষা করছে
অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মার্কিন গবেষক চেন তাঁর গবেষণায় দেড় মিটার পানির উচ্চতা বৃদ্ধির কথা বলেছেন। কিন্তু এটা আমাদের হিসাবে এক মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। যেটাই বাড়ুক, দক্ষিণাঞ্চলের জন্য মূলত পাঁচটি ঝুঁকি অপেক্ষা করছে। এগুলো হলো ১. লবণাক্ততা বেড়ে ফসল উৎপাদন কমবে, সুপেয় পানির অভাব দেখা দেবে, ২. বিশাল ভূখণ্ড পানির নিচে তলিয়ে যাবে, ৩. সুন্দরবনের ৪২ শতাংশ বিলুপ্ত হবে, তলিয়ে যাবে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ৪. ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস বাড়বে এবং ৫. ঝড়ে বাতাসের গতিবেগ (ইনটেনসিটি) বাড়বে।’

জয়েস জে চেন আরও বলেন, উত্তরে নদ–নদীর পানি বেড়ে যাওয়া ও একটা সময় আবার কমে যাওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষ বন্যা, খরা, নদীভাঙন, কীটপতঙ্গবাহী রোগবালাই এবং এ অঞ্চলগুলোয় ড্রেনেজ সুবিধা নষ্ট করবে।

বুয়েটের এই অধ্যাপক বলেন, বাংলাদেশ ছোট দেশ। এখানে জনসংখ্যা অনেক বেশি। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অভিবাসন ও জমি পানির নিচে তলিয়ে গেলে তা ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি করবে। দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কাঙ্ক্ষিত মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হবে না। শহর এলাকায় জনবসতি হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেও হিমশিম খেতে হবে।

আইপিসিসিতে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শিল্পবিপ্লবের পর থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বের তাপমাত্রা এক ডিগ্রি বেড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি এড়াতে ভবিষ্যতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় থেকে দুই ডিগ্রি রাখতে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে জোর দিতে হবে। তাহলে আমাদের ক্ষতি অনেকটা কম হবে। বিশেষ করে দেড় ডিগ্রি বৃদ্ধির মধ্যে রাখতে পারলে সবচেয়ে ভালো হবে। তাহলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা অন্তত ১০ সেন্টিমিটার কম হবে।’

সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ কার্বন নির্গমন ততটা করে না। তারপরও ব্যক্তি ও রাষ্ট্রকে এ ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। নিজ নিজ অবস্থান থেকে কার্বন নির্গমন কমাতে হবে। সুপেয় পানি ধরে রাখতে হবে। লবণাক্ততা কমাতে সরকারকে জমিতে লোনাপানির মাছ চাষ বন্ধ করতে হবে।

এই অধ্যাপক বলেন, বেশি ভূমিকা রাখতে হবে যেসব দেশ বেশি মাত্রায় কার্বন নিঃসরণ করে, তাদের। যদিও সেখানে সমস্যা হয়েছে; যুক্তরাষ্ট্র প্যারিস চুক্তি থেকে সরে যেতে চাইছে। এতে কার্বন নিঃসরণ এবং অভিযোজনের জন্য গঠিত গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডে ১০০ বিলিয়ন ডলার কম হতে পারে। ফলে, এই তহবিল ব্যবহার করে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলার আওতাও কমে যাবে।