Thank you for trying Sticky AMP!!

ভোলায় দিনে দুবার করে ভাসছে মানুষ

গতকাল ভোরে জোয়ারের উচ্চতা ছিল ৪ দশমিক ২ মিটার, যা বিপৎসীমার প্রায় ৭০ সেন্টিমিটার ওপরে। ঘরের মাচায় দিন ও রাত যাপন করছে অনেক মানুষ।

ভোলার নদীগুলোতে জোয়ারের পানি ফুলে–ফেঁপে উঠেছে। সঙ্গে আছে টানা বৃষ্টি ও বাতাস। এর মধ্যেই নৌকায় করে উঁচু জায়গায় যাচ্ছে একটি পরিবার। গতকাল সদর উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুর এলাকায়

ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের রূপাপুর গ্রামের মুদিব্যবসায়ী মিলন মিয়া (৫৫) গত দুই মাসে চারবার জোয়ারের প্রভাবে ক্ষতির শিকার হয়েছেন। রোববার থেকে দিনে দুবার করে প্লাবিত হচ্ছে তাঁর ঘরবাড়ি। গতকাল মঙ্গলবার মিলনের বাড়ির সামনের এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনে মিলনের মুদিদোকান মেঘনা নদীর দিকে হেলে পড়েছে। কিন্তু দোকানঘর সরিয়ে গ্রামের অন্য কোথাও নিতে পারছেন না তিনি। পুরো গ্রামই জোয়ারের পানিতে প্লাবিত। দেখা দিয়েছে ভাঙনের শঙ্কা।

সমুদ্রে সৃষ্ট লঘুচাপ ও অমাবস্যার প্রভাবে ভোলার নদীগুলোতে জোয়ারের পানি ফুলে–ফেঁপে উঠেছে। সঙ্গে আছে টানা বৃষ্টি ও বাতাস। এতে চরাঞ্চল ও উপকূলের জোয়ার-জলোচ্ছ্বাস নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরের পরিবারগুলো প্লাবিত হচ্ছে। এতে মিলন মিয়ার মতো জেলার প্রায় দেড় লাখ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। দিনে ৫ ঘণ্টা করে বন্ধ থাকছে নৌ চলাচল।
ভোলার ইলিশা ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মো. ইমরান খান বলেন, রোববার থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ইলিশার দুটি ফেরিঘাট সকাল-সন্ধ্যায় জোয়ারের পানিতে ডুবে যাচ্ছে। তিনটি ফেরির স্থলে একটি ফেরি চলছে। ভোলা ও লক্ষ্মীপুর ঘাটে দুই শতাধিক মালবাহী ট্রাক আটকে আছে।

ভোলা আবহাওয়া কার্যালয় সূত্র জানায়, সমুদ্রে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত চলছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৩৮ দশমিক ৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এমন অবস্থা আরও তিন দিন ধরে চলতে পারে। এদিকে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান জানিয়েছেন, রোববার থেকে জোয়ারের উচ্চতা বাড়লেও মঙ্গলবার ভোরে জোয়ারের উচ্চতা ছিল সবচেয়ে বেশি। ৪ দশমিক ২ মিটার, যা বিপৎসীমার প্রায় ৭০ সেন্টিমিটার ওপরে।
গতকাল খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন উপজেলার ৭০টির মতো চরাঞ্চল ও বাঁধের বাইরের জনবসতি জোয়ারের সময় দিনে দুবার করে প্লাবিত হচ্ছে। পাঁচ থেকে সাত হাত উচ্চতার পানি নামতে না নামতেই আবার জোয়ার আসছে। সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের নাছিরমাঝি এলাকার বাসিন্দা ও স্কুলশিক্ষক হেলাল উদ্দিন বলেন, জোয়ারের পানিতে তাঁদের উঁচু ঘরবাড়িও ডুবে গেছে। তাঁদের মতো নাছিরমাঝি ও কোড়ারহাটের দুই শতাধিক পরিবারও দিনে দুবার করে প্লাবিত হচ্ছে।

দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, তাঁদের ইউনিয়নের সব মাছের পুকুর ডুবে গেছে। জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে হাঁস-মুরগি। গবাদিপশুর খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে।
এদিকে চরফ্যাশন উপজেলার চর কুকরি-মুকরির বাসিন্দা আনিছ হাওলাদার জানান, কুকরি-মুকরি ইউনিয়নের চারপাশে বাঁধ আছে। কিন্তু স্লুইসগেট (জলকপাট) নেই। তাই পানি ঢুকে লোকালয় প্লাবিত হচ্ছে। একই উপজেলার ঢালচরের শাহে আলম ফরাজি জানান, কয়েক দিন ধরে জোয়ারের পানিতে লোকজন ঘরের মাচায় উঠে বসে বসবাস করছে। অনেকের ঘর ভেসে যাওয়ায় তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
ভোলা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক বলেন, সিপিসির স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে সভা করে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হকের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা পেলে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।