Thank you for trying Sticky AMP!!

মধ্য আগস্টে আরেকটি বন্যার আশঙ্কা

ব্রহ্মপুত্রের বাঁধ ভেঙে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে বাড়িঘরে। এতে দিশাহারা গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার সিংড়িয়া গ্রামের এক গৃহবধূ। গতকাল সকালে তোলা ছবি l শাহাবুল শাহীন

আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে আরেকটি বন্যার আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদ ও বন্যা বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশের উজানে ভারত, নেপাল, চীনে যে বৃষ্টি ও বন্যা হচ্ছে, সেই পানি আগস্টে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়বে। ফলে ওই সময় থেকে প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বাড়বে। সে সময় যদি গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি একযোগে বাড়ে, তাহলে দেশের অর্ধেকেরও বেশি এলাকা বন্যায় প্লাবিত হতে পারে। তবে উত্তরাঞ্চলে বর্তমানে চলমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে।
ভারতের আবহাওয়াবিষয়ক সংস্থা আইএমডি, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর, বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এসব তথ্য দিয়েছে। তবে বন্যা নিয়ে নতুন এক আশঙ্কার কথা বলছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস। ওই পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী আট দিনের মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হতে পারে। একই সঙ্গে রাজধানীর চারপাশের নদীর পানিও বাড়তে পারে। এতে রাজধানীর নিম্নাঞ্চলও প্লাবিত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা, দক্ষিণ এশিয়ার পাহাড়বিষয়ক সংস্থা ইসিমুড এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড সম্মিলিতভাবে এই পূর্বাভাস দিয়েছে।
দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার আবহাওয়াবিষয়ক সংস্থাগুলোর জোট মনসুন ফোরাম গত এপ্রিলে জুলাই ও আগস্ট মাসের যে পূর্বাভাস দিয়েছিল, তাতে আগস্টে মাঝারি থেকে ভারী বন্যার পূর্বাভাস দেওয়া হয়। ওই পূর্বাভাস অনুযায়ী আগস্টে দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে ৫ থেকে ১০ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হবে। ইতিমধ্যে ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানে এবার স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ থেকে ২০ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্যা ও পানি ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এ কে এম সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ভারত ও নেপালে এখন যে অতিবৃষ্টি ও বন্যা হচ্ছে, তার প্রভাব বাংলাদেশের ওপর দ্রুত পড়বে। ওই দেশগুলো থেকে নেমে আসা পানি বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে পড়বে বঙ্গোপসাগরে। ফলে আগস্টে বাংলাদেশে বড় বন্যার আশঙ্কা আছে।
রাজধানীর চারপাশের বেশির ভাগ নদীর পানি দূষিত। সেই পানিতে রাজধানীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হলে তা বড় ধরনের পরিবেশ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে ঢাকার পূর্বাঞ্চল, সাভার, টঙ্গী, মানিকগঞ্জ ও সাভারের বেশির ভাগ এলাকা এখন ঘনবসতিপূর্ণ। এসব এলাকা প্লাবিত হওয়া রোধে সরকারের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ‘আমরা আগস্টের সম্ভাব্য বন্যা নিয়ে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও সমন্বয় করার উদ্যোগ নিয়েছি।’
বন্যা বিশেষজ্ঞদের হিসাব অনুযায়ী সাধারণত ভারতের অরুণাচল, আসাম, পশ্চিমবঙ্গের হিমালয়-সংলগ্ন অংশ এবং সিকিমের বৃষ্টিপাতের পরিমাণের ওপরে বাংলাদেশের বন্যা নির্ভর করে। বন্যার পানির ৮০ শতাংশ ওই এলাকা দিয়ে নেমে আসে।
ভারতের আবহাওয়াবিষয়ক সংস্থা আইএমডির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী অরুণাচল ও আসামে এবার স্বাভাবিক বন্যা হয়েছে। এতেই ওই দুই জেলা-সংলগ্ন বাংলাদেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চল এবং পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে বন্যা হয়েছে। আর পশ্চিমবঙ্গের হিমালয়-সংলগ্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেশি হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহ ওই এলাকাগুলোতে বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হতে পারে বলে আইএমডির পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।
এসব পূর্বাভাস দেখে বন্যা ও আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, এবার আগস্টের শেষের দিকে বাংলাদেশের উজান থেকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পানি নেমে আসতে পারে। ফলে এবার দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বন্যা হতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আগস্টের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গা অববাহিকায় প্রতিবছর বন্যা হয়ে থাকে। এ বছরও সেই স্বাভাবিক বন্যাই হয়েছে। তবে আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে আরেকটি বন্যা হতে পারে।
সংস্থাটির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, জামালপুর জেলার বন্যার পানি ১৯৮৮ সালের সীমা অতিক্রম করে গেছে। ১৯৮৮ সালে এই জেলায় নদীর পানি বিপৎসীমার ২০ দশমিক ৬২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছিল। শুক্রবার ওই জেলার বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২০ দশমিক ৭১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে। গত সপ্তাহে কুড়িগ্রাম জেলায় নদীর পানি বিপৎসীমার ২৪ দশমিক ৯৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বয়ে যায়, ১৯৮৮ সালে যেটা ২৫ দশমিক ৭ সেন্টিমিটার ছুঁয়েছিল।
আবহাওয়া বিভাগের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, গতকাল ঢাকা-টাঙ্গাইল, টেকনাফসহ কয়েকটি এলাকা বাদে দেশের বেশির ভাগ এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে। আগামী দুই দিন বৃষ্টিপাতের এই ধারা অব্যাহত থাকতে পারে।