Thank you for trying Sticky AMP!!

বিমান পাখির ছবি রাজশাহী থেকে তুলেছেন আ ন ম আমিনুর রহমান

লাটোরা বা বিমান পাখি

পাতাঝরা ন্যাড়া অশ্বত্থগাছের তিনখানা সরু ডালে বসা মোট ১১টি পাখি। গত ফেব্রুয়ারির ২৮ তারিখের শেষ বেলা। পিরোজপুর থেকে মোটরসাইকেলে চড়ে আমরা মোট পাঁচজন ফিরছি বাগেরহাটের দিকে। রোডের পাশে হেঁটে-দাঁড়িয়ে চা পান করার সময় পাখিগুলোকে দেখলাম আমরা। এখনো ভোর-সন্ধ্যায় ‘শীত শীতে’ লাগে। রাতভর ঝরে শিশিরও। তাই এই শীতবিকেলে পাখিগুলো ন্যাড়া ডালে বসেছে একেবারে গায়ে গা মিশিয়ে; পাশাপাশি বসা পাখিগুলোর স্বভাবই এমন। ইলেকট্রিকের তারেও এরা শরীরে শরীর মিশিয়ে একেবারে মাখামাখি করে বসে। অশ্বত্থগাছটির চারপাশজুড়ে ফুল ফোটা শিমুলগাছ, বেশ কয়েকটি তালগাছ ও ঝাউগাছ। এ রকম পরিবেশ খুব পছন্দ ওদের।

ধানের মাঠ পাড়ি দিয়ে দ্রুত বেগে উড়ে আসতে দেখলাম একটি তুখোড় শিকারি পাখি তুরমতি বাজকে (রেড নেকড ফ্যালকন), উড়ছে সরলরেখা ধরে নয়—ইচ্ছে করেই একটু ডান-বাম যেমন করছে, তেমনি সামান্য উঁচুতে-নিচুতে উঠছে, লেজটাও দোলাচ্ছে ডানে বাঁয়ে, শ্যেনদৃষ্টি ওটার নিচের দিকে। অমনি কর্কশ-ধাতব গলায় জোরে জোরে ‘চেক্ চেক্’ ডাকতে ডাকতে উড়াল দিয়ে শিকারির দিকে চলল ওই ১১টি পাখি। যেনবা ১১ খানা জঙ্গিবিমান শত্রুবিমানটিকে চেজ বা বাধা দিতে চলল। পাখিগুলোর ডানা-লেজ তথা শরীরের গড়ন-ধরন অনেকটাই বিমানের মতো। দেখলাম, নিরাপদ দূরত্ব থেকে শত্রুকে ওরা সুপরিকল্পিতভাবে ও সুকৌশলে ঘিরে ফেলে সাবধানি আক্রমণ করতে চাইছে। ওটার নামও তুরমতি! ইচ্ছে করেই যেন ১১টি পাখির যেকোনো একটিকে নখরে বা পায়ে গাঁথতে চাইছেÑ প্রতিরোধযুদ্ধ চালাতে চালাতে। ওগুলোর নামও ‘বিমান পাখি’! জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাল্টা আক্রমণ চালাচ্ছে, শত্রুবিমানকে হটিয়ে দিতে চাইছে নিজেদের আকাশসীমা থেকে। প্রায় দেড় মিনিটজুড়ে আমরা দেখলাম যেন যুদ্ধবিমানের ‘ডগফাইট’।

তুরমতি অন্যদিকে উড়ে চলে গেল। পাখিগুলো ডাকতে ডাকতে খুশিতে নেমে এসে গাছপালার মাথায় উড়ে-ঘুরে যেন টহল দিতে লাগল। এখন যে এদের বাসা তৈরি, ডিম-ছানার মৌসুম! ঝাউগাছের ডাল, তালপাতার গোড়া ও ন্যাড়া অশ্বত্থগাছের ডালে যে ওদের বাসা রয়েছে, ডিম-ছানা রয়েছে! এ রকম সময়ে এরা আকাশ সীমান্ত কড়া পাহারায় রাখে। কাক-চিল-বাজ-ইগল-শকুনকেও আকাশ সীমান্ত অতিক্রম করতে দেয় না। আক্রমণে যায়। তুরমতি বাজের শিকার তালিকায় আবাবিল-বাতাসি-চড়ুই-বাবুই-ভরতসহ এই পাখিগুলোও রয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ওরা শত্রুকে হটিয়ে দিয়েছে ডিম-ছানার নিরাপত্তার কারণে। পিরোজপুর থেকে মোটরসাইকেলে চেপে আমরা বাগেরহাটে ফেরার পথে চা-নাশতা করছিলাম পথের পাশের একটি দোকানে। মন ভরে দৃশ্যটা উপভোগ করি আমরা।

বুকভরা সাহস আর চোখভরা রোষের এই পাখিগুলো বাগেরহাট-ফকিরহাটে পরিচিত বিমান পাখি, তালচোট ও তালচড়ুই নামে। এ ছাড়া লাটোরা, মুড়া শিং, ধূসর আবাবিল, কানকাটা নামে বহুল পরিচিত। উড়লে এদের ত্রিকোণাকৃতি লম্বা-প্রশস্ত দুটি পাখা অনেকটাই বিমানের পাখার মতো দেখায়। ডানা বেশ কিছুক্ষণ না নাড়িয়েও বাতাসে ভেসে থাকতে পারে। শরীরের তুলনায় বড় মাথাটার রং ঘন ছাই–ধূসর এবং একই রং গলা ও পিঠের।

লাটোরা বা বিমান পাখির ইংরেজি নাম অ্যাশি উড সোয়ালো। বৈজ্ঞানিক নাম Artamus fuscus। দৈর্ঘ্য ১৯ সেন্টিমিটার। ওজন ৪০ গ্রাম। বাসা তৈরি করে বসন্ত থেকে বর্ষাকাল পর্যন্ত।