Thank you for trying Sticky AMP!!

শীতে রোগের প্রকোপ

>

নওগাঁ সদর আধুনিক হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড। গতকাল দুপুরে। ছবি: প্রথম আলো

নওগাঁয় গত শুক্রবার এ বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি সপ্তাহে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রয়েছে।

উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা নওগাঁতেও জেঁকে বসেছে শীত। এ কারণে জনদুর্ভোগ বেড়েছে। বয়স্ক ও শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। গত এক সপ্তাহে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২৮৫ জন ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৭৫৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের বেশির ভাগই শিশু।

নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রোববার নওগাঁয় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার নওগাঁয় এ বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি সপ্তাহে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রয়েছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরে নওগাঁর বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২ হাজার ৬৪০ জন রোগী ভর্তি হয়। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ৭৩৪ জন। তাদের মধ্যে শিশু ও বয়োবৃদ্ধের সংখ্যাই বেশি। গত সাত দিনে (৩০ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত) ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৭৫৫ জন এবং নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৮৫ জন।

সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত সপ্তাহে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২১৬ জন রোগী এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ১৩৬ জনই শিশু। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত সপ্তাহে সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৮৫ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫ জনই শিশু।

সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে কর্মরত জ্যেষ্ঠ নার্স মর্জিনা খাতুন বলেন, ১০-১২ দিন ধরে শিশু ওয়ার্ডে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। অন্য সময়ে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে যেখানে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ জন শিশু ভর্তি হতো, এখন সেখানে ৫০ থেকে ৬০ জন করে শিশু ভর্তি হচ্ছে। আক্রান্ত শিশুদের বেশির ভাগই পাঁচ বছরের নিচে।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক রওশন আরা খানম বলেন, ঠান্ডার কারণে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। তীব্র শীতে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত এসব রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। শিশুদের সব সময় গরম পরিবেশে রাখতে হবে। ডায়রিয়া প্রতিরোধের জন্য সব সময় গরম খাবার খেতে হবে।

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ রতন কুমার বলেন, শীতের সময় মায়েদের সচেতন থাকতে হবে। শিশুদের নরম ও গরম কাপড় পরাতে হবে। কুয়াশা থেকে দূরে রাখতে হবে আর খাবার কুসুম গরম করে খাওয়াতে হবে।

সিভিল সার্জন মোমিনুল হক বলেন, হিসাব অনুযায়ী চলতি সপ্তাহে জেলার ১১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও নওগাঁ সদর হাসপাতাল মিলে প্রতিদিন ১৩০ থেকে ১৪০ জন ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। এটাকে ঠিক প্রকোপ বলা যাবে না। তবে অন্যান্য স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এই সংখ্যা বেশি। তীব্র শীতের কারণেই মূলত ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। তবে ঠান্ডাজনিত রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত ওষুধ ও কম্বলের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।

তীব্র শীতের কারণে জেলার খেটে খাওয়া মানুষেরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। পর্যাপ্ত গরম কাপড় না থাকলেও শীতের মধ্যেই দিনমজুরেরা কাজ করছেন। দিনমজুর আবদুস সাত্তার বলেন, ‘হামরা দিনমজুর মানুষ। দিন অ্যানে দিন খাই। অ্যাক দিন না খাটলে হামাগের বউ-ছাউলের মুখত ভাত জুটবে না।’