Thank you for trying Sticky AMP!!

সবার জন্য নিরাপদ পানি জোগাতে হবে

আইনুন নিশাত

নিরাপদ ও সুপেয় পানি নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করার সময় এসেছে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের (এসডিজি) ১৭টির মধ্যে ৬ নম্বর লক্ষ্যমাত্রায় নিরাপদ পানি ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার কথা বলা আছে। এতে সব নাগরিকের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিরাপদ পানির নিশ্চয়তা বিধান করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

২০১১ সালে জাতিসংঘের পানিবিষয়ক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকেও নিরাপদ পানির বিষয়টি মানবাধিকারের অংশ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। বাংলাদেশের ২০১৩ সালের পানি আইনে প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপদ পানির অধিকারের কথা বলা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিরাপদ পানির নিশ্চয়তা বিধানে বাংলাদেশকে দিশারি রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। এসডিজির ৬ নম্বর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বিষয়ে তদারক করতে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে উচ্চপর্যায়ের প্ল্যাটফর্ম গঠন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তাতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সুতরাং এসডিজি অভীষ্টের ৬/১ ও ৬/২ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের দিকে বাংলাদেশের বিশেষ নজর আছে।

দেশের একেক এলাকায় পানির সমস্যা একেক ধরনের। বাংলাদেশের প্রায় শতভাগ মানুষের হাতের নাগালে পানি আছে। কিন্তু নিরাপদ পানির ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে আছে আর্সেনিক। এই সমস্যা চলছে প্রায় আড়াই দশক ধরে। গত ১৫-২০ বছরে দেশের দক্ষিণের জেলাগুলোতে লবণাক্ততা বেড়েছে। সুন্দরবন লাগোয়া উপজেলাগুলোতে সুপেয় পানি দুর্লভ হয়ে পড়েছে। কিছু পকেট এলাকায় সুপেয় পানি পাওয়া যায়। ক্রমাগত লবণাক্ততা বৃদ্ধি এসব পকেটের সংখ্যাও কমিয়ে দিচ্ছে। এই এলাকায় বৃষ্টির পানি মটকায় ধরে রেখে ব্যবহার করার চর্চা আছে। তবে এই পানি ব্যবস্থাপনায় জটিলতা আছে। পন্ড স্যান্ড ফিল্টার (পিএসএফ) কীভাবে কার্যকর করা যায়, তা নতুন করে ভাবতে হবে। পাতনপ্রক্রিয়া (রিভার্স অসমোসিস) বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখতে হবে।

চারটি সিটি করপোরেশন এলাকার নাগরিকদের পানি সরবরাহ করছে ওয়াসা। ওয়াসার পানির মান নিয়ে নিয়মিতভাবে নানা অভিযোগ শোনা যায়। ওয়াসার পাইপ নেটওয়ার্ক খতিয়ে দেখার দরকার হয়ে পড়েছে। বস্তিবাসীসহ সব ধরনের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে পর্যাপ্ত নিরাপদ পানির ব্যবস্থা ওয়াসাকেই করতে হবে।

জীববৈচিত্র্য ও বন ধ্বংস হওয়ার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় ছড়া ও ঝরনা শুকিয়ে গেছে। বনায়ন করে ছড়া ও ঝরনায় পানির ধারা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে মনে হয়। অন্যদিকে কাপ্তাই হ্রদের পানি পাইপের মাধ্যমে ব্যবহারের প্রস্তাবও গ্রহণযোগ্য। পাম্পের মাধ্যমে হ্রদের পানি পাহাড়ের চূড়ায় তুলে তা দিনের নির্দিষ্ট সময় পাহাড়িদের মধ্যে সরবরাহ করা যেতে পারে। এই অঞ্চলে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য গ্রামবাসীর মধ্যে ট্যাংক সরবরাহ করা যেতে পারে।

বরেন্দ্র এলাকায় দেখেছি, কতটা পথ পাড়ি দিয়ে গ্রামের নারীরা খাওয়ার পানি সংগ্রহ করছেন। এই অঞ্চলে সবজি চাষের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় গ্রামে গ্রামে পাতকুয়া খুঁড়ে দিয়েছে। এসব কুয়ার পানি খাওয়ার জন্যও নিরাপদ। নিরাপদ খাওয়ার পানির সরবরাহের দায়িত্ব স্থানীয় সরকারের হলেও বরেন্দ্র অঞ্চলের কিছু এলাকায় এই দায়িত্ব হাতে নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

ভিন্ন ধরনের পানি সমস্যা দেখা গেছে দেশের হাওর অঞ্চলে। হাওর বলতে চোখে ভাসে থইথই পানির দৃশ্য। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে একটি–দুটি বিলে পানি থাকে। ছোট ছোট টিলার ওপরে থাকা বাসিন্দাদের বহু পথ পাড়ি দিয়ে সেই পানি আনতে হয়।

দেশের ৯০ শতাংশ মানুষের নিরাপদ পানির চাহিদা মিটলে সেটা ভালো কথা। কিন্তু বাকি ১০ শতাংশের কথা ভুললে চলবে না। উপকূল, পাহাড়, বস্তি, হাওর—এসব এলাকার জন্য বিশেষভাবে ভাবতে হবে, বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে হবে। এসডিজির মূল কথা কাউকে পেছনে ফেলে উন্নয়ন নয়, কাউকে বাদ দেওয়া যাবে না।

মনে রাখতে হবে, পানি নিরাপদ না হলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে না। স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে উন্নয়ন টেকসই হয় না।