Thank you for trying Sticky AMP!!

হারিয়ে যাওয়া আমাদের ভাদি হাঁস

লন্ডন চিড়িয়াখানায় ভাদি হাঁস। ছবিটি গত ২ মার্চ তোলা l লেখক

সারাটা দিন লন্ডন চিড়িয়াখানা ঘুরে শেষ বিকেলে গরিলার খাঁচার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। গরিলার খাঁচা পার হয়েই সুন্দর একটি কাচঘেরা ঘরের সামনে এসে দাঁড়ালাম। কাচের ভেতর দিয়ে ভেতরে তাকাতেই চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল! এ কী দেখছি! স্বপ্ন নয়তো? কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট প্রাকৃতিক পরিবেশে কী সুন্দরভাবে চরে বেড়াচ্ছে আমার স্বপ্নের একজোড়া হাঁস। অভিভূত হয়ে কতক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম জানি না। পটাপট কয়েকটা ছবি তুললাম। এ বছরের ২ মার্চের ঘটনা এটি।
চিড়িয়াখানা থেকে বের হওয়ার পর থেকেই কেন যেন ওই হাঁসজোড়ার কথাই মনে হচ্ছিল। ১৯৮৭ সালের পর থেকে গত ২৩ বছরে একবারও দেখা যায়নি এই পাহাড়ি হাঁসগুলোকে। আর এ কারণেই আইইউসিএন বাংলাদেশ ২০১৫ সালে এদের এ দেশে স্থানীয়ভাবে বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে। তবে আমি এখনো স্বপ্ন দেখি একদিন হয়তো কোনো এক গহিন অরণ্যের জলাধারে আবারও ওদের দেখা মিলবে।
স্থানীয়ভাবে বিলুপ্ত একসময়ের আবাসিক এই হাঁসের নাম ভাদি বা বাদি হাঁস। ইংরেজি নাম White-winged Duck বা White-winged Wood Duck। Anatidae পরিবারের এই হাঁসের বৈজ্ঞানিক নাম Asarcornis scutulata।
ভাদি হাঁস আকারে বেশ বড়। লম্বায় ৬৬-৮১ সেন্টিমিটার এবং প্রসারিত ডানা ১১৬-১৫৩ সেন্টিমিটার। একনজরে দেহ কালো বা কালচে-খয়েরি ও মাথা-ঘাড় সাদা। এই সাদা মাথা-গলার পুরোটা জুড়ে থাকে কালো কালো ফোঁটা। ডানায় সুস্পষ্ট সাদা দাগ, যা শুধু উড়লেই ভালোভাবে চোখে পড়ে। চোখ লালচে বা কমলা। ঠোঁট ফ্যাকাশে কমলা-হলুদ যার আগা ও গোড়া কালো। আকার ছাড়া হাঁসা ও হাঁসি দেখতে প্রায় একই রকম। পা ও পায়ের পাতা কমলা-হলুদ ও নখ ধূসর-সাদা। তবে হাঁসার দেহের পালকগুলো বেশি চকচকে এবং হাঁসির মাথা-ঘাড়ের কালো ফোঁটাগুলো বেশি ঘন। বাচ্চাগুলো তুলনামূলকভাবে ফ্যাকাশে ও খয়েরি।
ভাদি হাঁস এশিয়ার পাখি। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় পাহাড়ি বনের বদ্ধ জলাভূমি ও ক্ষীণ স্রোতোধারাসম্পন্ন নদী-জলায় বাস করে। একসময় চট্টগ্রাম বিভাগের চিরসবুজ বনের বদ্ধ জলাশয়ে বসবাস করলেও বর্তমানে বিলুপ্ত। পৃথিবীতে এরা বর্তমানে বিপন্ন পাখি হিসেবে চিহ্নিত। সচরাচর জোড়ায় বা পাঁচ-ছয়টির দলে বিচরণ করে। দিনের বেলা বনের নির্জন ছায়াঘেরা স্থানে থাকে, মাঝেমধ্যে গাছের ডালে বসে ঘুমায়। সন্ধ্যার ঠিক আগে পানির ওপর দিয়ে উড়ে উড়ে খাবার খোঁজে। সর্বভুক এই হাঁস উদ্ভিদ ও প্রাণিজ দ্রব্য, জলজ উদ্ভিদ, বিচি, শস্য, জলজ কীটপতঙ্গ, শামুক, কাঁকড়াজাতীয় প্রাণী, ব্যাঙ, সাপ, মাছ ইত্যাদি খায়।
ভারত, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডে এরা এপ্রিল-জুলাই এবং অন্যান্য স্থানে জুলাই-সেপ্টেম্বরে প্রজনন করে। হাঁসি ৬-১৬টি সবুজাভ-হলুদ রঙের ডিম পাড়ে। ৩০-৩৩ দিন পর ডিম ফোটে। বাচ্চারা প্রায় ১৪ সপ্তাহ বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকে। বুনো অবস্থায় প্রায় আট বছর বাঁচে।