Thank you for trying Sticky AMP!!

'বুলবুল' মোকাবিলায় প্রস্তুত হচ্ছে উপকূল

ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’-এর কারণে সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। উপকূলীয় অঞ্চলে ঝরছে বৃষ্টি। সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় আজ শুক্রবার ছুটির দিনটিতেও দুর্যোগ মোকাবিলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলো জরুরি সভা করেছে। দুর্যোগ–পরবর্তী চিকিৎসাসেবার জন্য মেডিকেল টিম গঠনসহ দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ–পরবর্তী সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছে জেলা প্রশাসনগুলো। 


প্রস্তুত করা হচ্ছে দুর্যোগপ্রবণ এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলো।

দেশের তিনটি সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজারকে আজ শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে ৪ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত নৌযানগুলোকে সাগরে চলাচল না করে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ শুক্রবার সকালে দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৪ নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি করেছে।

ব‌রিশালে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মো‌কাবিলায় জেলা প্রশাসন ২৩২টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছে। খোলা হয়েছে একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান বলেছেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজন হলে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমনকি সরকারি-বেসরকারি বহুতল ভবন আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করার প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।
আজ দুপুরে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ক‌মি‌টি জরুরি সভায় জেলা প্রশাসক এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান। জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে দুপুর ১২টার দিকে এই সভা হয়। সভায় বি‌ভিন্ন সরকা‌রি ও বেসরকা‌রি দপ্তরের কর্মকর্তা এবং উন্নয়ন সংগঠনের প্রতি‌নি‌ধিরা উপ‌স্থিত ছিলেন।

সভায় জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান বলেন, ব‌রিশা‌ল জেলায় ২৩২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া প্রয়োজনে বি‌ভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য বহুতল ভবন নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ব্যবহার করা হবে। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি), রে‌ড‌ ক্রিসেন্টসহ বি‌ভিন্ন বেসরকা‌রি প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বা‌হিনী, ফায়ার সা‌র্ভিস ও রোভার স্কাউটের সদস্যরাও যেকোনো ধরনের সহায়তার জন্য প্রস্তুত আছেন।‌

‌অজিয়র রহমান বলেন, ‘জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় ২০০ মে‌ট্রিক টন চাল, শুকনা খাবারসহ প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী মজুত আছে। আমরা ঘূ‌র্ণিঝড়ের সতর্কবার্তা দেখে সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করব। তবে সবার জন্য বলব, কেউ যেন ঝুঁকি নিয়ে অনিরাপদ আশ্রয়ে না থাকেন।’

এ ছাড়া ঘূ‌র্ণিঝড় বুলবুল মোকা‌বিলায় প্রস্তু‌তির জন্য যেকোনো সময় জরুরি সভা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপা‌শি সভায় সং‌শ্লিষ্ট সরকা‌রি সব কর্মকর্তার ছু‌টি বা‌তিলের সিদ্ধান্ত হয়।

বরিশাল আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষক আবদুল হালিম আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-পশ্চিম উপকূলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এটি আরেকটু ডান দিকে ঘুরতে পারে। মনে হচ্ছে, ঘূর্ণিঝড়টি খুলনা-বরিশাল উপকূলীয় অঞ্চলের ওপর আঘাত হানবে। কাল শনিবার মধ্যরাতে অথবা রোববার সকালে এটি আঘাত হানতে পারে।’

বরগুনায় জেলা প্রশাসক কার্যালয় আজ সকাল ১০টায় এক সভায ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবিলায় প্রশাসন সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। জেলা প্রশাসক মোস্তাইম বিল্লাহর সভাপতিত্বে দুর্যোগ ব্যবস্থা কমিটির সভায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত হয়। এতে জানানো হয়, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫০৯টি স্থায়ী ও অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সব উপজেলা প্রশাসনকে সতর্ক রাখা হয়েছে। সিভিল সার্জন, ফায়ার সাভিস, রেড ক্রিসেন্টসহ সব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকেও প্রস্তুত করা হয়েছে। নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সাগরে মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত সব ট্রলারকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনার জন্য জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবিলায় উপজেলা পর্যায়েও প্রস্তুতি সভা হয়েছে। সব সরকারি কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবিলায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে নগরের ডিসি ঘাট এলাকায় মাইকিং করা হয়। বরিশাল, ০৮ নভেম্বর। ছবি: সাইয়ান

বরগুনার ট্রলার মালিক সভাপতি গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকাল থেকে সাগর উত্তাল হতে শুরু করেছে। এখন ১০০ ট্রলার নিরাপদ আশ্রায়ের জন্য তীরে আসতে শুরু করেছে। আবহাওয়া বেশি খারাপ হলে ট্রলারগুলো সুন্দরবনের ভেতরে আশ্রয় নেবে।

উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীতে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করছে সকাল থেকেই। দুর্যোগ মোকাবিলায় আজ সকালে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি জরুরি সভা করেছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে জেলার ৪০৩টি ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র। এ ছাড়া দুর্যোগ–পরবর্তী চিকিৎসাসেবার জন্য মেডিকেল টিম গঠনসহ দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ–পরবর্তী সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

এদিকে নিম্নচাপের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। মাছ ধরার ট্রলার ও জেলে নৌকাগুলো উপকূলে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে আসছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে জেলার সব নদীপথে যাত্রীবাহী লঞ্চসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতে মাঝে মাঝে দমকা হাওয়া ও বৃষ্টি হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের দরবার হলে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে এই সভায় জরুরি প্রস্তুতি হিসেবে দুর্যোগকালে মানুষের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য জেলার ৪০৩টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া সাগর উপকূলীয় উপজেলাগুলোর অদূরবর্তী দ্বীপ ও নিম্নাঞ্চলের জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। দুর্যোগকালীন ও পরবর্তী সময়ে মানুষের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য মেডিকেল টিম গঠনসহ দুর্যোগ–পরবর্তী সময়ে শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানিসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জেলার সব উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে দুর্যোগ মোকাবিলায় জরুরি প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে সভায় জানানো হয়েছে। সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রাসাসক (সার্বিক) মো. হেমায়েত উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সজরুল ইসলাম, র‌্যব-৮, ফায়ার সার্ভিস, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
পটুয়াখালী নদীবন্দরের পরিবহন পরিদর্শক মো. জহিরুল ইসলাম জানান, সমুদ্রবন্দরে ৪ এবং নদীবন্দরে ২ নম্বর সংকেত দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া জেলায় অভ্যন্তরীণ সব নদীপথে যাত্রীবাহী ছোট-বড় লঞ্চসহ সব ধরনের নৌযান পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। মাছ ধরার ট্রলারগুলো গভীর সাগরে টিকতে না পেরে উপকূলে নিরাপদ আশ্রয় নিচ্ছে। কুয়াকাটা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আনছার উদ্দিন মোল্লা জানান, ইতিমধ্যে সহস্রাধিক মাছ ধরার ট্রলার উপকূলের গঙ্গামতি, ফাতরার চর, কাউয়ার চর, মৌডুবি, শিববাড়ীয়া চ্যানেল, আন্ধারমানিক নদীর চ্যানেলে আশ্রয় নিয়েছে। এখনো গভীর সাগর থেকে ট্রলার উপকূলে আশ্রয়ে আসছে বলে জানান তিনি।