Thank you for trying Sticky AMP!!

বায়ুদূষণ

ঈদের ছুটিতে ফাঁকা ঢাকাতেও বায়ুদূষণ ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ

ঈদুল ফিতরের ছুটির সময় রাজধানী ঢাকা ছিল অনেকটাই ফাঁকা। যান চলাচল তেমন ছিল না। কলকারখানা বন্ধ ছিল। প্রতিবছরের মতো এবারের ঈদে ঢাকা ছেড়েছিলেন অনেক মানুষ। তারপরও এবার ঈদুল ফিতরের ছুটির পাঁচ দিনে রাজধানীর বায়ুদূষণ ছিল গত ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। ক্যাপস প্রতিদিন বায়ুদূষণের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে।

বিশ্বের বায়ুদূষণ পর্যবেক্ষণকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের পর্যবেক্ষণের (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) গত ৯ বছরের (২০১৬ থেকে ২০২৪) মোট ৭৫ দিনের (দুই ঈদের মোট ১৫ দিন এবং ঈদের আগের এবং পরের মোট ৬০ দিন) উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছে ক্যাপস।

ক্যাপসের গবেষণা অনুযায়ী, গত ৯ বছর ঈদের দিনগুলোতে গড় বায়ুমান সূচক ছিল ১০১। এর মধ্যে গত ৯ বছরের মধ্যে এবারের ঈদুল ফিতরের সময় (৫ দিনের) গড় বায়ুমান সূচক সবচেয়ে বেশি ছিল। এ সময় গড় বায়ুমান সূচক ছিল ১৯০। আর সবচেয়ে কম ছিল ২০১৬ সালে—৬৭। ২০২৩ সালের ১০ দিনের বায়ুমান সূচক ছিল ১১৪। গত বছরেও এপ্রিলে ঈদ হয়েছিল। কিন্তু গতবারের তুলনায় এবারের বায়ুদূষণ পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে।

এ গবেষণা থেকে দেখা যায়, ৭৫ দিনের মধ্যে ঢাকার মানুষ মাত্র ৬ দিন (০-৫০ বায়ুমান সূচক) বিশুদ্ধ বায়ু পেয়েছে। এর মধ্যে ৪১ দিন মাঝারি ধরনের (৫১-১০০ বায়ুমান সূচক) বায়ু পেয়েছে। ঈদের ছুটিকালীন ৭৫ দিনের মধ্যে ঢাকার বায়ুমান সূচক ২১ দিন সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় ছিল। আর দুই দিন খুব অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় ছিল। ২০১৬ সালে ৫ দিনের গড় বায়ুমান ছিল ৬৭, অর্থাৎ ওই সময় বায়ুমান ভালো ছিল।

ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছরই ঈদের দিন ও ঈদের পরের দিন ঢাকা শহরের বিভিন্ন রুটের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকে। যাতায়াতের জন্য বেশির ভাগ মানুষ রিকশা কিংবা নিজস্ব পরিবহন ব্যবহার করে। নির্মাণকাজ ও কলকারখানা বন্ধ থাকে। ফলে পরিবহন থেকে সৃষ্ট বায়ুদূষণের পরিমাণ কিছুটা কমে আসে। অন্যদিকে এ সময় ঢাকার আশপাশের বৈধ ও অবৈধ বেশির ভাগ ইটভাটা ও শিল্পকারখানা বন্ধ থাকায় ঢাকার বায়ুমানের কিছুটা উন্নতি হয়। তবে এবার ২০২৪ সালে ঈদুল ফিতরের দিন ও এর আগের দিনের বায়ুমান অন্যান্য বছরের তুলনায় খারাপ ছিল।

আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার আরও বলেন, গত সপ্তাহে ঢাকাসহ সারা দেশের আবহাওয়া ছিল চরমভাবাপন্ন, অর্থাৎ বাতাসের উচ্চচাপ ও মন্থর গতিবেগের সঙ্গে উচ্চ মাত্রার আর্দ্রতা ও তীব্র দাবদাহ ছিল। এ সময় বৃষ্টি হয়নি। ফলে বায়ুদূষণ পরিস্থিতিও ভালো ছিল না। অন্যবারের চেয়ে লোকজন ঢাকার বাইরে কম গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে নির্মাণকাজ চলছিল। এসব নির্মাণকাজের সামগ্রী না ঢেকেই কর্মীরা এলাকা ছেড়েছেন। ফলে বাতাসের সঙ্গে এসব সামগ্রী দূষণ ছড়িয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (বায়ুমান ব্যবস্থাপনা) মোহাম্মাদ আবদুল মোতালিব বলেন, ‘কলকারখানার ধোঁয়া বা যানবাহনের মতো স্থানীয় উৎসগুলো নিঃসন্দেহে দূষণে ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি উপমহাদেশীয় আন্তসীমান্ত বায়ুপ্রবাহের ভূমিকা এবার সবচেয়ে বেশি ছিল বলে আমাদের ধারণা।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মো. আব্দুস সালাম এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বায়ুদূষণ পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আন্তসীমান্ত বায়ুর ভূমিকা আমাদের দূষণে নেই তা বলছি না। কিন্তু নিজেদের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ উৎস নিয়ন্ত্রণ না করে আন্তসীমান্ত বায়ুর অবদান মুখ্য করে তোলাটা কোনো কাজের কথা নয়।’

গত মার্চ মাসে সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার এবং বিশ্বব্যাংক পৃথক দুটি প্রতিবেদনে ঢাকার বায়ুদূষণ পরিস্থিতির করুণ হাল তুলে ধরেছে। আইকিউ এয়ার বলেছে, দেশের নিরিখে ২০২৩ সালে বাংলাদেশে বায়ুদূষণ ছিল সবচেয়ে বেশি আর শহরের নিরিখে ঢাকা ছিল দ্বিতীয় দূষিত শহর। আর বিশ্বব্যাংক বলেছে ২০১৯ সালে পরিবেশ দূষণের ফলে বাংলাদেশে প্রায় পৌনে তিন লাখ মানুষ মারা যায়। এর ৫৫ শতাংশই মারা যায় বায়ুদূষণের কারণে।