Thank you for trying Sticky AMP!!

ছোটমণি নিবাসে যেমন আছে ফাতেমা

রাজধানীর আজিমপুরের ছোটমণি নিবাসে ময়মনসিংহে সড়কে জন্ম নেওয়া শিশু ফাতেমা। গত শুক্রবার থেকে এই নিবাসের বাসিন্দা সে

আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফাতেমার দোলনার সামনে গিয়ে দেখা গেল সে ঘুমাচ্ছে। এক কর্মী জানালেন, ফাতেমা ১০ মিনিট আগে ঘুমিয়েছে। তবে গতকাল শনিবার বিকেল থেকে থেমে থেমে কাঁদছে। ময়মনসিংহে সড়কে জন্ম নেওয়া শিশু ফাতেমা গত শুক্রবার থেকে রাজধানীর আজিমপুরে অবস্থিত ছোটমণি নিবাসের বাসিন্দা। জন্মের সময় সড়ক দুর্ঘটনায় মা–বাবা ও এক বোনকে হারানো শিশুটি মাত্র ১৫ দিন বয়সে পুরো পরিবার থেকে এখন আলাদা রয়েছে।

সকালে ছোটমণি নিবাসের উপতত্ত্বাবধায়ক মোছা. জুবলী বেগম রানুর অফিস কক্ষে গিয়ে কথা বলার সময় তাঁর মুঠোফোনে কল করে নাতনির খোঁজখবর নেন ফাতেমার দাদা মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি ভিডিও কলে নাতনিকে দেখতে চান।

এর আগে গত শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ফাতেমা দাদা মোস্তাফিজুর রহমান ও আট বছর বয়সী বড় বোন জান্নাতের সঙ্গে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত ছোটমণি নিবাসে আসে। পাঁচ বছর বয়সী ভাই এবাদুল্লাহ সঙ্গে আসেনি। ১৬ জুলাই ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ট্রাকচাপায় মারা যান ফাতেমার বাবা জাহাঙ্গীর আলম (৪২), মা অন্তঃসত্ত্বা রহিমা আক্তার ওরফে রত্না (৩২) ও বোন সানজিদা (৩)। সে সময় সড়কে জন্ম হয়েছিল ফাতেমার।

ছোটমণি নিবাসে গিয়ে দেখা গেল, তিনতলার একটি লম্বা হলরুমে শিশুদের থাকার ব্যবস্থা। সেখানে এখন নবজাতক (ভূমিষ্ঠের পর থেকে ২৮ দিন পর্যন্ত) থেকে ৭ বছর বয়স পর্যন্ত ২৮টি শিশু রয়েছে। একদম ছোট শিশুদের দোলনায় রাখা হয়। দোলনায় থাকা চারটি শিশুর মধ্যে ফাতেমাসহ দুটি শিশু নবজাতক। অপর দুটি শিশুর একটির বয়স এক মাস, অপরটির বয়স দুই মাসের কিছু বেশি।

ছোটমণি নিবাসের মেট্রন কাম নার্স তানিয়া সুলতানা বলেন, গতকাল বিকেলে ফাতেমাকে একটু অস্থির অস্থির করতে দেখা গেছে। রাতে ভালো ঘুমিয়েছে। দুই ঘণ্টা পরপর কৌটার দুধ খাওয়ানো হচ্ছে।

ফাতেমার ডান হাতে আঘাত ছাড়া এখন আর কোনো সমস্যা নেই বলে জানালেন ছোটমণি নিবাসের উপতত্ত্বাবধায়ক মোছা. জুবলী বেগম। তিনি বলেন, ফাতেমা থেমে থেমে কাঁদছে। হাতে প্লাস্টার করা। হাতের ব্যথার কারণেও কাঁদতে পারে। সে হাতটি নাড়াচ্ছে না। কাল সোমবার ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হবে ফলোআপ করার জন্য। হাতের প্লাস্টার ঠিক আছে কি না দেখাতে হবে। হাতের বিষয়ে চিকিৎসকেরা কী বলছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাল হাসপাতালে গেলে বোঝা যাবে।

বিকেলে দাদা মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ফাতেমার বাবাসহ তাঁর দুই ছেলে ও তিন মেয়ে ছিল। আরেক ছেলে ১৩ বছর বয়সে মারা যায়। এখন তাঁর তিন মেয়ে বেঁচে আছে। তিনি গ্রামে একটি চায়ের দোকান চালান। টানাটানির সংসার আর ফাতেমার চিকিৎসার কথা বিবেচনা করে ছোটমণি নিবাসে দিয়েছেন। নাতনির বয়স ছয় বছর হলে নিয়ে আসবেন। কাউকে দত্তক দেবেন না।

নাতনিকে ভিডিও কলে দেখেছেন কি না জানতে চাইলে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ওনারা (ছোটমণি নিবাসের কর্মীরা) ব্যস্ত থাকতে পারেন ভেবে পরে আর ফোন দিইনি। মঙ্গলবার ফাতেমাকে দেখার জন্য ঢাকায় আসতে পারি।’ বোন জান্নাত সামাজিক যোগযোগমাধ্যম ফেসবুকে বোনের সব খবর দেখছে বলে জানান তিনি।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুসারে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা ও বরিশালে একটি করে মোট ছয়টি শিশুমণি নিবাস রয়েছে। আসন সংখ্যা ১০০ করে। ৬০০ আসনে এখন শিশু রয়েছে ১৪৬টি। আজিমপুরের ছোটমণি নিবাসে সরকারি আয়া ৩ জন, খালাম্মা পদে ৮ জন এবং আউটসোর্সিং আয়া রয়েছেন ৮ জন। চারটি পালায় ভাগ করে কর্মীরা শিশুদের দেখভাল করেন।

ছোটমণি নিবাস থেকে জানানো হয়, বেশির ভাগ শিশুকে দত্তক নেওয়া হয়। এখন ২৮ শিশুর মধ্যে দুই মাস বয়সী এক শিশুকে একটি পরিবার এবং চার শিশুকে দুটি যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী পরিবার আদালতের মাধ্যমে দত্তক নেওয়ার অনুমতি পেয়েছে। যে শিশুদের কেউ দত্তক নেন না, সেই সব শিশুকে ৭ বছর বয়সের পর সরকারি শিশু পরিবারে স্থানান্তর করা হয়। শিশু পরিবার ওই শিশুদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করে দেয়। শিশু পরিবারে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত থাকার সুযোগ রয়েছে। সারা দেশে শিশু পরিবারের সংখ্যা ৮৫টি। একেকটিতে আসন ১০০ থেকে ২০০–এর মধ্যে।

ফাতেমার দাদা আইনি অভিভাবক হওয়ায় দত্তকের বিষয়ে শুধু তিনি সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন বলে জানান জুবলী বেগম। তিনি বলেন, অন্য শিশুদের আইনি অভিভাবক ছোটমণি নিবাস।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, পিতৃ-মাতৃ পরিচয়হীন ০-৭ বছর বয়সী পরিত্যক্ত বা পাচার থেকে উদ্ধারকৃত শিশুদের ছোটমণি নিবাসে লালন–পালন করা হয়। ফাতেমা প্রশাসনের সিদ্ধান্তে নিবাসে স্থান পেয়েছে।

এ ব্যাপারে সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) কামরুল ইসলাম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, শিশুটির মা–বাবা নেই এবং সে দুস্থ শিশু। জেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের সভাপতি হচ্ছেন জেলা প্রশাসক। ময়মনসিংহ জেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের সভাপতি শিশুটির দাদার সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন, শিশুটিকে পালনে তাঁর আর্থিক সক্ষমতা নেই। ছোটমণি নিবাসে প্রশিক্ষিত জনবলের কাছে শিশুটি ভালো থাকবে। এই সব বিবেচনায় শিশুটিকে ছোটমণি নিবাসে পাঠানো হয়েছে। তবে শিশুটির দাদা যখন নিয়ে যেতে চাইবেন, তখনই তাঁর কাছে শিশুটিকে দিয়ে দেওয়া হবে।