Thank you for trying Sticky AMP!!

বেতন তুলে স্ত্রী–সন্তানের কাছে আর ফেরা হলো না আসাদুজ্জামানের

নিহত আসাদুজ্জামান তোরাব

স্বামী–স্ত্রী সারা দিন একসঙ্গে কারখানায় কাজ করেছিলেন। সোমবার সন্ধ্যায় বেরও হয়েছিলেন একসঙ্গে। এরপর স্ত্রী তানিয়া আক্তার চলে আসেন বাসায়। ঘরের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আর স্বামী আসাদুজ্জামান তোরাব (৩০) যান বেতনের টাকা এটিএম বুথ থেকে তুলতে। কারখানার এলাকার বুথে ভিড় বেশি হয়। তাই স্বস্তিতে টাকা তুলতে চলে যান ছয় কিলোমিটার দূরের একটি বুথে।

কিন্তু সেখান থেকে ফেরার যাত্রা যে তাঁর শেষ যাত্রা হবে, তা কি কেউ জানতেন? তাঁদের বহনকারী বাসটি বেপরোয়া গতিতে ধাক্কা দেয় চলন্ত ট্রেনের ইঞ্জিনকে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় আসাদুজ্জামানসহ তিনজনের। আসাদ আর তানিয়ার তিন বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। নোয়াখালীর হাতিয়ায় গ্রামের বাড়ি হলেও চট্টগ্রাম নগরের আকমল আলী সড়কের পকেট গেট এলাকায় ভাড়া বাসায় স্ত্রী–কন্যা নিয়ে থাকতেন আসাদ।

‘আমার স্বামী কই, তোমরা আমার স্বামীকে এনে দাও’ বলতে বলতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন আসাদুজ্জামানের স্ত্রী তানিয়া। জ্ঞান ফিরতেই খুঁজতে থাকেন জীবনসঙ্গীকে।

স্বামীর এমন পরিণতির কথা দূর কল্পনাতেও ছিল না তানিয়ার। হঠাৎ নেমে আসা এমন ভয়াবহতায় বিহ্বল হয়ে পড়েন এই তরুণী। প্রিয়জনের এমন করুণ বিদায়ের কথা ভাবতেই বিলাপ করছেন। ঘণ্টাখানেক আগেও একসঙ্গে কারখানায় কাজ করা, একসঙ্গে বেরিয়ে আসা, সবকিছু যেন মুহূর্তেই স্মৃতি হয়ে গেছে।

অসহনীয় এক বেদনায় ভেসে যাচ্ছিলেন তানিয়া। তাই আত্মীয়–স্বজন আর সহকর্মীদের শত সান্ত্বনাতেও থামছিল না আহাজারি। এর মধ্যেই ‘আমার স্বামী কই, তোমরা আমার স্বামীকে এনে দাও’ বলতে বলতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। জ্ঞান ফিরতেই খুঁজতে থাকেন জীবনসঙ্গী আসাদুজ্জামানকে।

দুর্ঘটনা কবলিত বাস

আসাদুজ্জামান ও তানিয়া চট্টগ্রাম নগরের ইপিজেডের ইয়াং ওয়ান নামের একটি কারখানায় চাকরি করতেন। আসাদ্দুজামান ছিলেন কোয়ালিটি সুপারভাইজার। আর তানিয়া অপারেটর। তাঁদের সঙ্গে একই কারখানায় কাজ করেন আবুল হাসনাত।

সহকর্মীর দুর্ঘটনার খবর শুনে রাতেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন আবুল হাসনাত। তাঁর গ্রামের বাড়িও নোয়াখালীর হাতিয়ায়। তাই দুজন ছিলেন ঘনিষ্ঠ। আসাদুজ্জামানের এমন মৃত্যু কোনোভাবেই মানতে পারছেন না হাসনাত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারা দিন একসঙ্গে অফিস করেছি। নিয়মিত দেখা–সাক্ষাৎ হয়। গ্রামের বাড়ি একই এলাকায়। কত কিছু নিয়ে তাঁর সঙ্গে আলোচনা হতো। সে–ও নানা পরামর্শের জন্য ছুটে আসত আমার কাছে। কিন্তু এখন সবকিছু অতীত হয়ে গেল।’

Also Read: চট্টগ্রাম শহরে রেলের ইঞ্জিনে বাসের ধাক্কা, নিহত ৩

ইয়াং ওয়ানের সুপারভাইজার আবুল হাসনাত বলেন, সন্ধ্যার পর কারখানা এলাকায় ব্যাংকের বুথে শ্রমিকদের প্রচণ্ড ভিড় হয়। এ জন্য টাকা তুলতে অনেক সময় লেগে যায়। তাই ভিড় এড়াতে আর সময় বাঁচাতে ছয় কিলোমিটার দূরে বিমানবন্দর সড়ক এলাকায় অবস্থিত একটি এটিএম বুথে যান আসাদুজ্জামান। সেখান থেকে টাকা তুলে বাসায় ফিরছিলেন। কিন্তু মাঝপথে এই দুর্ঘটনা। আসাদুজ্জামানের এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না।