Thank you for trying Sticky AMP!!

সংকট উত্তরণে নিজস্ব জ্বালানির ব্যবহারে জোর দিতে হবে

জ্বালানি তেলের সংকট

করোনাভাইরাস মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে পুরো বিশ্বের মতো গভীর জ্বালানিসংকটে পড়েছে বাংলাদেশ। দেশে চাহিদা মেটানোর মতো বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা আছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে জ্বালানির। এদিকে বিশ্ববাজারে গ্যাস, ডিজেল ও কয়লার মতো জ্বালানির দাম আরও বাড়তে পারে। তাই সংকট উত্তরণে নিজস্ব জ্বালানি ব্যবহারে জোর দিতে হবে।

আজ রোববার বাংলাদেশ এনার্জি সোসাইটির আয়োজনে ‘চলমান জ্বালানি সংকট: বাংলাদেশের করণীয়’ শীর্ষক ওয়েবিনারে উপস্থাপন করা মূল নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে।

ওয়েবিনারে বক্তারা বলেছেন, দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহে ঘাটতি হচ্ছে। গ্যাস না পেয়ে শিল্পকারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জনজীবনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সিস্টেম লস ও অপচয় কমিয়ে জ্বালানি সাশ্রয়ে উদ্যোগ নিতে হবে।

মূল নিবন্ধে বলা হয়, গ্যাসের অনুসন্ধান নানা কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ২০০৯ সালে ৮৯ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো গ্যাস থেকে। এখন তা ৫৫ শতাংশে নেমে গেছে। গ্যাসের জায়গা দখল করেছে ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলের মতো তরল জ্বালানি। গ্যাস বা কয়লার ওপর নির্ভরতা বাড়াতে পারলে তরল জ্বালানির ওপর নির্ভর করতে হতো না। বিদ্যুৎ উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে তরল জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে।

মূল নিবন্ধে আরও বলা হয়, গ্যাসের সিস্টেম লস ২ শতাংশের বেশি হওয়ার কথা নয়। বৈশ্বিকভাবে এটাই স্বীকৃত। দেশে এখন সিস্টেম লস হচ্ছে ১০ শতাংশ। অবৈধ সংযোগ আছে অনেক। এ অপচয়ের বড় অংশ কমানো সম্ভব। এ ছাড়া স্থলভাগে যতটা গ্যাস অনুসন্ধান করা গেছে, সমুদ্রে সেভাবে করা যায়নি। গ্যাসের উৎপাদন বাড়লেও তা ধরে রাখা যায়নি। গ্যাসের উৎপাদন দৈনিক ২৭০ কোটি ঘনফুটে গিয়ে আবার ২৩০ কোটিতে নেমে এসেছে। কয়লার দামও বিশ্ববাজারে বেড়েছে। তাই দেশীয় কয়লা উত্তোলনের বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা যেতে পারে।

প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী মনে করছেন, সমাধান করতে না পারলেও সবার সহযোগিতায় চলমান সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব। তিনি বলেন, একদিকে বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বেড়েছে, আরেক দিকে ডলারের বিপরীতে টাকার অবনমন হয়েছে। এতে জ্বালানি আমদানিতে লোকসান বেড়েছে।

ওয়েবিনারে বক্তারা বলেছেন, দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহে ঘাটতি হচ্ছে। গ্যাস না পেয়ে শিল্পকারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জনজীবনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সিস্টেম লস ও অপচয় কমিয়ে জ্বালানি সাশ্রয়ে উদ্যোগ নিতে হবে।

দেশে অনুসন্ধান বাড়ালেও বিপুল গ্যাস পাওয়ার তেমন সম্ভাবনা দেখছেন না জ্বালানি উপদেষ্টা। তিনি বলেন, দক্ষ ব্যবহারের মাধ্যমে জ্বালানির চাহিদা কমাতে হবে। বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারের চিন্তা করা যেতে পারে। তবে এখন বড় সমস্যা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি)। এলএনজি আমদানি করতেই হবে। তাই এটি আমদানির জন্য আরও অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ম. তামিম বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য অবকাঠামো গড়ে তোলা অনেক বিনিয়োগের বিষয়। এটি অল্প সময়ে করা কঠিন। শিগগিরই জ্বালানি তেলের দাম কমার সম্ভাবনাও খুব কম। কয়লা উত্তোলন নিয়ে কোনো পরিকল্পনাও দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশের জন্য সামনে বড় নিয়ামক হতে যাচ্ছে গ্যাস। উৎপাদন বাড়াতে পেট্রোবাংলা যে কর্মসূচি নিয়েছে, তা উচ্চাভিলাষী। এলএনজি আমদানি করা লাগবেই। তবে বর্তমান সংকটের ওপর ভিত্তি করে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তা ভুল হতে পারে।

আলোচনা শেষে সারসংক্ষেপে বলা হয়, পরিত্যক্ত গ্যাসকূপ সংস্কার, বন্ধ কূপ চালু ও নতুন কূপ খননের মাধ্যমে দেশে গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে হবে। সেচ, বাসাবাড়ি, শিল্পকারখানার ছাদ, রাস্তাঘাটে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার বাড়াতে হবে। সিস্টেম লস কমাতে পারলে খোলাবাজার থেকে এলএনজি আমদানির প্রয়োজন হবে না।

বিদ্যুৎ খাতের বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইপিপিএ) সভাপতি ইমরান করিম বলেন, বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদন তিন গুণ করা সম্ভব হতো না। ফার্নেস অয়েলে ৩০ শতাংশ শুল্ক কর দিতে হয়। এটি না থাকলে ভোক্তাদের কম দামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যেত।

ওয়েবিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন এনার্জি সোসাইটির সভাপতি ও সাবেক মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ। আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) জ্বালানি স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান হ‌ুমায়ূন রশীদ, সামিট গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ ফয়সাল করিম খান, জ্বালানি পরামর্শক খন্দকার আবদুস সালেক।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাবেক বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য দেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সাবেক চেয়ারম্যান এ এস এম আলমগীর কবির। আলোচনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) সাবেক চেয়ারম্যান মঈন উদ্দিন।