Thank you for trying Sticky AMP!!

মাংস খাওয়া না–খাওয়ার রাজনীতি ও অর্থনীতি

উৎপাদন বা মজুত বাড়লেই সবার খাওয়া বাড়ে না, বরং কমতে পারে।

ন্যায্যমূল্যে ওএমএসের চাল ও আটা নিতে দীর্ঘ সারিতে অপেক্ষা করছেন নারী-পুরুষেরা। সম্প্রতি কুমিল্লা নগরের সুজানগর এলাকায়

কলকাতায় ভাগায় ইলিশ মাছ কেনা নিয়ে বাংলদেশের মানুষের ঠাট্টা–তামাশা করার চল বহু পুরোনো। মূলত একটা ইলিশ মাছ আস্ত কিনতে পারার সক্ষমতায় গর্বিত এ দেশের শিক্ষিত মধ্যবিত্তের মধ্যে এ ধরনের রসিকতা করার প্রবণতা দেখা যায়। অথচ কলকাতার এ মাছ–মাংস ভাগায় কেনার ব্যবস্থাটি বরাবরই দারুণ রকমের গরিববান্ধব। খুব সম্ভবত সেই ব্রিটিশ আমল থেকে একের পর এক দুর্ভিক্ষের নির্মম অভিজ্ঞতা থেকে

খাদ্যপণ্য বেচাকেনার ক্ষেত্রে নানান রকমের জনবান্ধব তরিকা দেখা যায় পশ্চিমবঙ্গে। আস্ত মাছ বা আস্ত মুরগি কিনতে অসক্ষম নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো চার টুকরা মাছ কিনে অন্তত এক বেলার তরকারি রাঁধতে পারে। অথচ কলকাতার ‘ভাগা সিস্টেম’ নিয়ে রসিকতা করা এ দেশের মধ্যবিত্ত খুব সম্ভবত জানেন না, বর্তমানে বাংলাদেশের শহুরে অনেক শ্রমিক পরিবারের সন্তানদের একটি গোটা প্রজন্ম বেড়ে উঠেছে রুই, কাতলা, ইলিশের মতো মাছগুলো খেতে কেমন, তা না জেনে।

শ্রমিক ও মাংস

একটা আস্ত মুরগি বা একটা আস্ত ইলিশ কিনতে পারা এ দেশের শ্রমিক পরিবারগুলোর জন্য অনেক আগে থেকে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে, গরু খাসি তো অনেক দূরের ব্যাপার। মাস ছয়েক আগেও কায়িক পরিশ্রম করা মানুষ আমিষের চাহিদা মিটিয়েছেন ডিমে। কিন্তু এখন সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। প্রশ্ন উঠতে পারে, চাল কিনতেই তো হিমশিম খাচ্ছে মানুষ, নিয়মিত মাংস খাওয়া কি জরুরি? মাংস না খেলে কী হয়? নিয়মিত গরুর মাংস খাওয়া তো বেশ ক্ষতিকর, ডাক্তারেরাই বলেন। গরিব কি ভাত আর সবজি খেয়ে বাঁচতে পারে না?

পুষ্টিবিদেরা কিন্তু বলছেন, মানবদেহের জন্য দৈনিক ২ হাজার ৪০০ ক্যালরি আবশ্যক। এটা একেবারেই ন্যূনতম হিসাব। বিদেশের একজন নির্মাণশ্রমিক ঘণ্টায় ৩০০ ক্যালরির বেশি খরচ করেন। একজন কৃষক বা স্টিল কারখানার একজন শ্রমিক ঘণ্টায় ৪০০ ক্যালরি খরচ করেন। বলাই বাহুল্য, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং কর্মক্ষেত্রের বাস্তবতায় বাংলাদেশের শ্রমিকদের কায়িক পরিশ্রমের মাত্রা পশ্চিমা দেশের তুলনায় অনেক গুণ বেশি। এ দেশের কৃষি খাতে যান্ত্রিকীকরণ এখনো সেভাবে হয়নি। বীজতলা তৈরি, বীজ বোনা বা ধান কাটার মতো কাজগুলো এখনো বহু কৃষক হাতেই করেন। ইন্ডাস্ট্রিগুলোও এখানে কায়িক শ্রমনির্ভর।

বিদেশের বাসাবাড়িতে ‘হাউসকিপিং’ বা গৃহ সহকারীর কাজ করলে ওয়াশিং মেশিন বা ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের মতো নানাবিধ যন্ত্রের সাহায্য পাওয়া যায়। এ দেশের বাসাবাড়িতে কাজ করা বুয়া এখনো পিঠ কুঁজো করে ঘর মোছেন, বালতি ভরা পানি বহন করেন, গায়ের জোরে আছড়ে আছড়ে কাপড় কাচেন। মাটি কাটা, ধান কাটা, ইট ভাঙা বা ইট ওপরে তোলা, রিকশা চালানো বা ভারী ঠেলাগাড়ি টানার মতো কাজগুলোতে সাধারণ পেশার তুলনায় বহু গুণ বেশি শরীরী পরিশ্রমের। আর এ ধরনের ভারী পরিশ্রমের কাজে সাধারণত দৈনিক ৪০০০ ইউনিট পর্যন্ত ক্যালরি খরচ হয়। তাই শ্রমজীবী মানুষের খাদ্যতালিকায় শুধু ভাত আর সবজি থাকলে চলে না। আমিষ লাগবেই। আমিষের অভাব দীর্ঘদিন ধরে শুধু ভাতের মতো শর্করাজাতীয় উপাদান দিয়ে পূরণ করাও ক্ষতিকর।

খাদ্যতালিকা থেকে ‘রেড মিট’ বা মাংসজাতীয় খাবার বাদ দেওয়ার যে বর্তমান চল, তার একটি গভীর শ্রেণিচরিত্র আছে। যে শ্রমিক ঠেলা টানছেন সারা দিন, যে নারী ধান ঝাড়া, ধান শুকানোর কাজ করছেন, যে বুয়া সারা দিন উবু হয়ে বসে আটতলা পর্যন্ত সিঁড়ি মুছছেন, তাঁদের কারোরই নিরামিষভোজী হওয়ার বিলাসিতা নেই। কায়িক পরিশ্রম থেকে বিযুক্ত নব্য ধনী বা উচ্চবিত্তের মেনুতে মাংস না থাকলেও চলে, কিন্তু ঠেলা টানা বা রিকশা টানা লোকটিকে নিয়মিত মাছ–মাংস খেতেই হবে, নইলে তাঁর জীবনীশক্তি ফুরাবে। এই দেশের একজন রিকশাচালকের গড় আয়ু মাত্র ৪৫ বছর! চাহিদা অনুযায়ী মাছ–মাংস পেলে রিকশাচালকের আয়ুর এ দুরবস্থা হয়?

অথচ দেশে মাংস খাওয়ার পরিমাণ দিনে দিনে বাড়ছে (মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বেচাকেনা বৃদ্ধি থেকেই সেটা পরিষ্কার)। পত্রিকায় প্রচারিত হচ্ছে, দেশে গরু–ছাগলের অভাব নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, দেশে এখন গরুর সংখ্যা পৌনে তিন কোটির বেশি। ছাগলের সংখ্যা দেড় কোটির বেশি। এক যুগের ব্যবধানে গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ ও হাঁস–মুরগির সংখ্যা প্রচুর বেড়েছে। দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে মাছের চাষ। তাহলে এ বর্ধিত উৎপাদন কার জন্য?

কে খাচ্ছে মাছ-মাংস? একজন নির্মাণশ্রমিক বা একজন বুয়ার সঙ্গে কথা বলে দেখুন তো, শেষ কবে মাংস খেয়েছেন তাঁরা? গত এক দশকে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি নিয়েও বহু মাতামাতি হয়েছে। বলা হচ্ছে দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠে এসেছে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ। অথচ শ্রমিকের মাসিক খাদ্যতালিকা থেকে মাছ–মাংস স্রেফ নাই হয়ে গেল কেন? ভয়াবহ কায়িক পরিশ্রম করা কয়েক কোটি মানুষ মাসের পর মাস বাজার থেকে মাছ, মুরগি কিনে খেতে পারছেন না, মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় আমিষের ঘাটতি মেটাতে পারছেন না।

ঢাকায় ২০১৪ সালেও এক কেজি গরুর মাংসের দাম ছিল ৩০০ টাকা। এখন কেজিপ্রতি ৭০০ টাকা। খাসি ৯০০ টাকা। ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা। গরু, খাসি তো অনেক দূরে থাক’ মুরগিটাও কিনতে পারছেন না খেটে খাওয়া মানুষ। একটা সময় শ্রমিক পরিবারগুলো ঘন ঘন ডিমের তরকারি রাঁধত, এখন ডিমও নাগালের বাইরে। অথচ শ্রমিকের খাদ্যতালিকায় দৈনিক ২০ থেকে ৩০ শতাংশ প্রোটিন থাকা আবশ্যক। মারাত্মক কায়িক পরিশ্রম করা কয়েক কোটি শ্রমিকের দেহে প্রোটিনের এ বিপুল ঘাটতি জাতীয় সংকট নয় কেন? এর মধ্যে আবার সরকারের ২০১৬ সালের আয়–ব্যয়ের খানা জরিপ বলছে, সামগ্রিকভাবে মানুষের ক্যালরি গ্রহণ কমেছে। তাহলে এ যে উৎপাদন বেড়েছে, মাংস খাওয়া বেড়েছে, এরা কারা? অর্থাৎ এই বাড়তি মাংসটা আসলে খাচ্ছে কারা? ঠেলা টানা লোক বা কাজের বুয়া তো খাচ্ছেন না।

আসলে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির হিসাব দিয়ে যেমন সমাজের বঞ্চনা বোঝা যায় না, তেমনি মাংস উৎপাদন বৃদ্ধির হিসাব দিয়েও ঠেলাওয়ালা বা ঠিকা বুয়ার খাদ্যতালিকা থেকে মাংস গায়েব হয়ে যাওয়ার নির্মম বাস্তবতা বোঝা যায় না। বাস্তবতা হলো, কায়িক পরিশ্রম করা মানুষের পাতে এসব ‘বৃদ্ধি’র ভাগ পড়ছে না। শ্রমিকের ভাগের মাংসটা খেয়ে নিচ্ছে নিয়মিত ফাস্ট ফুডে যাওয়া দ্রুত বর্ধনশীল নব্য ধনী আর ঢাকার হোটেল–রেস্তোরাঁগুলোর অতিরিক্ত মাংসনির্ভর মেনু।

ভারতীয়দের মাংস খাওয়ার অভিজ্ঞতা

ভারতীয় অর্থনীতিবিদ উৎস পাটনায়েক ২০০৯ সালে দেখিয়েছিলেন, ভারতে মাংস খাওয়ার পরিমাণ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেলেও এ ‘বৃদ্ধি’ মূলত নব্য উচ্চবিত্তের মাংস খাওয়া বেড়ে যাওয়ার ফলাফল। একদিকে দ্রুত নগরায়ণ হয়েছে, আরেক দিকে একটি শ্রেণির হাতে প্রচুর পরিমাণে ‘ডিসপোজেবেল ইনকাম’ বা বাড়তি টাকা থাকার ফলে এককালীন নিরামিষভোজী ভারতীয়দের মধ্যে মাছ, মুরগি, মাটন খাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

কিন্তু মাংসের উৎপাদন এবং ভক্ষণ দ্রুত বৃদ্ধি পেলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্যতালিকায় নতুন করে কিছুই যুক্ত হয়নি। বরং গরিবের খাওয়ার পরিমাণ দিন দিন কমেছে। পাটনায়েক দেখিয়েছেন, দীর্ঘ সময় ধরে ভারতের মাথাপিছু আয় বাড়লেও মাথাপিছু শস্য গ্রহণের পরিমাণ বাড়েনি, বরং আশঙ্কাজনকভাবে কমছে! যেমন, ভারতীয়দের মাথাপিছু বার্ষিক খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ ১৫৫ কেজি থেকে ১২৯ কেজিতে নেমে এসেছে (১৮ বছরে)!

অর্থাৎ মাংস উৎপাদন দ্রুত বৃদ্ধির সঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠ দরিদ্র মানুষের খাওয়াদাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। বরং অতিরিক্ত মাংস সোজা চলে যাচ্ছে ধনীর প্লেটে। এদিকে ইন্ডিয়ান জার্নাল অব কমিউনিটি মেডিসিন বলছে, ভারতে ‘ওভারওয়েট’ বা অতিরিক্ত মেদবহুল মানুষের সংখ্যা সোয়া কোটি ছাড়িয়েছে!

ধনীরা অতিরিক্ত মাংস খেলে সমস্যা কী?

সমস্যা আছে। ভারতের মতো এ দেশেও ফাস্ট ফুডের দোকান বেড়েছে এবং একটি শ্রেণির হাতে খরচ করার মতো টাকা থাকার ফলে প্রয়োজনের তুলনায় বহু গুণ বেশি মাংস খাওয়ার চর্চা তৈরি হচ্ছে। এক কেজি গরুর মাংস উৎপাদন করতে প্রায় সাত কেজি ‘ফিড’ বা শস্যদানা প্রয়োজন হয়। আগের দিনে গরু–ছাগল মাঠে ছেড়ে দিলেই ঘাসের ব্যবস্থা হয়ে যেত।

আলাদা করে ফিড কিনতে হতো না। বর্তমানে উচ্চবিত্তের ফাস্ট ফুড সংস্কৃতির চাহিদা মেটাতে যে বিপুল পরিমাণ মাংস প্রয়োজন, তার জোগান দিতে গিয়ে আলাদা করে ব্যাপক হারে গম, ভুষি আর খইল উৎপাদন করতে হচ্ছে। অর্থাৎ গরু, ছাগল, হাঁস–মুরগির খাদ্য উৎপাদন করতে গিয়ে বাড়তি চাপ পড়ছে ফসলি জমিতে। বড় খামারিরা গরু মোটাতাজাকরণ করতে গিয়ে ফসলি জমি ঘাস উৎপাদনের জন্য লিজ নিচ্ছেন। ফিড কারখানাগুলোও ফসলি জমিতে ঘাস বা গমের চাষ করছে।

এমনিতেই জমির ভয়াবহ সংকট, এর মধ্যে বাড়তে থাকা বিত্তশালীর মাংসের চাহিদা মেটানোর চাপ। এদিকে আবার বাংলাদেশে ‘ওবেসিটি’ বা অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। যেমন সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, গত ১৪ বছরে নারীদের মধ্যে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির হার প্রায় তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে! পুরুষের ক্ষেত্রে বেড়েছে দেড় গুণ। বলা বাহুল্য, বেশি মাংস খাওয়ার সঙ্গে এই ওজন বৃদ্ধির সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ঠ।

মোটকথা, দেশে মাংসের উৎপাদন বাড়ার বিষয়টিকে সরলভাবে দেখার উপায় নেই। মাংস খাওয়া বেড়েছে মূলত একটি উচ্চবিত্ত শ্রেণির মধ্যে। সমস্যা হলো তাঁরা কায়িক পরিশ্রম করেন না এবং তাঁদের প্লেটে এত বিপুল পরিমাণ আমিষের প্রয়োজনও নেই।

আর যে শ্রেণিটি নিয়মিত অমানুষিক কায়িক পরিশ্রম করছেন, দেশে মাংস উৎপাদন বাড়লেও (এবং তাঁদের অনেকেই গরু–ছাগল পালনের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও) মাংস কিনে খাওয়া তাঁদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ মাংসের প্রয়োজন তাঁদেরই সবচেয়ে বেশি। তার মানে, যে এক দশকে মাছ-মাংসের উৎপাদন এত বাড়ল, বিশ্ব রেকর্ডও হয়ে গেল, সেই এক দশকেই মাছ–মাংস চলে গেল গরিবের ধরাছোঁয়ার বাইরে?

উৎপাদন বৃদ্ধির পরও দুর্ভিক্ষ কেন হয়?

অমর্ত্য সেন তাঁর বিখ্যাত গবেষণায় দেখিয়েছিলেন, ১৯৪৩ সালের সেই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে বাংলায় খাদ্যশস্যের কোনো সংকট ছিল না, সংকট ছিল খাদ্যবণ্টন এবং সরবরাহব্যবস্থায়। সেনের ভাষায়, তেতাল্লিশের ডিসেম্বরে খাদ্যের ফলন ছিল অন্যান্য বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি। কিন্তু সেই ডিসেম্বর মাসেই বাংলার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায়। সেন আরও দেখিয়েছিলেন, ১৯৪৩ সালের (দুর্ভিক্ষের বছর) মাথাপিছু খাদ্যপ্রাপ্যতাও ১৯৪১ সালের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। কিন্তু মৃত্যুর মড়ক ঠেকানো যায়নি। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের ক্ষেত্রেও অমর্ত্য সেনের পর্যবেক্ষণ একই—খাদ্যশস্যের পর্যাপ্ত মজুত ছিল। কিন্তু সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতা ছিল না চাল কিনে খাওয়ার।

সেন আরও দেখিয়েছেন, ১৯৪৩ সালের শেষের দিকে দুর্ভিক্ষ মোকাবিলা করার জন্য বিপুল পরিমাণ চাল আর গম আমদানি করা হয় বিদেশ থেকে। কিন্তু স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি আমদানির পরও ওই বছরের ডিসেম্বর মাসেই সবচেয়ে বেশি মানুষ খাদ্যের অভাবে মারা যায় (Amartya sen, Poverty and Famine. Clarendon press, Oxford. 1981 পৃ: ৬০)। অর্থাৎ আমদানি করা বিপুল খাদ্যশস্য দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সরকারের চরম গাফিলতি ছিল।

মোটকথা, উৎপাদন বা মজুত বাড়লেই সবার খাওয়া বাড়ে না। বরং কমতে পারে। কারণ, বড়লোকের পাগলা চাহিদার চাপ সামলাতে ‘ছোটলোকের’ শস্যের জমিতে টান পড়ে। গরু বেড়েছে, মুরগি বেড়েছে, ছাগল উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ, মাছ উৎপাদনে তৃতীয় অথচ কোথাকার ফলানো খাদ্য কোথায় যাচ্ছে, কে পাচ্ছে, কে পাচ্ছে না, যে পাচ্ছে না সে কেন পাচ্ছে না, যে পাচ্ছে তার আসলেও এতটা দরকার আছে কি না, সীমিত সম্পদের দেশে এসব রাজনৈতিক প্রশ্ন ওঠাতেই হবে।

মাহা মির্জা: উন্নয়ন অর্থনীতিবিষয়ক গবেষক