Thank you for trying Sticky AMP!!

পড়ে আছে অনুদানের স্বাস্থ্য সরঞ্জাম

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে শুল্ক ও বন্দরের মাশুল দেওয়ার বাজেট নেই। তাই পাঁচ মাস ধরে পড়ে আছে গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী।

চট্টগ্রাম বন্দর

বৈশ্বিক একাধিক সংস্থা ও তহবিল থেকে অনুদান হিসেবে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সরঞ্জাম পাঁচ মাস ধরে পড়ে আছে চট্টগ্রাম বন্দরে। এর ফলে দেশব্যাপী চলমান করোনার টিকা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এবং ম্যালেরিয়া ও কৃমি প্রতিরোধ কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু এসব সামগ্রী ছাড়িয়ে আনতে শুল্ক ও বন্দরের মাশুল বাবদ ২০ কোটি টাকা দরকার। এই টাকা তাদের বাজেটে নেই।

জনস্বার্থে এসব সামগ্রীর শুল্ক ও মাশুল মওকুফের জন্য দুই মাস ধরে চিঠি চালাচালি চললেও এখন পর্যন্ত জটিলতা নিরসনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘদিন বন্দরে পড়ে থাকায় এসব সামগ্রীর মান খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দরে আটকে থাকা এসব সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে ৫ লাখ ৮৬১টি কীটনাশকযুক্ত মশারি (ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে ব্যবহার হয়), ২ কোটি ৫৪ লাখ ৯৯ হাজার ২০০টি করোনা টিকার সিরিঞ্জ, ২ লাখ ৫৫ হাজার পিস সেফটি বক্স ও ২ কোটি ৪ হাজার মেবেন্ডাজল ট্যাবলেট।

এর মধ্যে কীটনাশকযুক্ত মশারি দিয়েছে বিশ্বজুড়ে এইডস, ম্যালেরিয়া ও যক্ষ্মা প্রতিরোধে ২০০২ সালে গঠিত হয়েছিল গ্লোবাল ফান্ড।

টিকার সিরিঞ্জ এসেছে গ্যাভি-কোভেক্সের সহায়তায় ইউনিসেফের মাধ্যমে। মেবেন্ডাজল ট্যাবলেট দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। মেবেন্ডাজল ট্যাবলেট কৃমি নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয়। সাধারণত অক্টোবর ও ফেব্রুয়ারিতে শিশুদের এই ওষুধ দেওয়া হয়। কীটনাশকযুক্ত মশারি ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকায় দেওয়া হয়। বিশেষ করে পার্বত্য জেলায় এমন মশারি বিতরণ করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত এপ্রিল ও মে মাসে পৃথক চালানে এসব সামগ্রী চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও কেন্দ্রীয় ওষুধাগারের (সিএমএসডি) কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁদের ধারণা ছিল অনুদানের সামগ্রীর শুল্ক দেওয়া লাগবে না। তা ছাড়া জনস্বার্থে জরুরি এসব সামগ্রী শুল্ক ছাড় পাওয়ার কথা।

কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, এনবিআরের শুল্ক এবং চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল পরিশোধ করতে প্রায় ২০ কোটি টাকা লাগবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক আহমেদুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, এই খাতে যা বরাদ্দ ছিল, তা এরই মধ্যে খরচ হয়ে গেছে। এ জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে বাড়তি টাকা চাওয়া হয়েছে।

এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র বলছে, সরকার-নির্ধারিত কিছু খাত ছাড়া সব পণ্যেই শুল্ককর পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক। অনুদানের উপকরণে শুল্ক ছাড় দেওয়ার কথা কোথাও বলা নেই। বিশেষ বিবেচনায় শুল্ক মওকুফ করতে হলে এনবিআর থেকে আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। সে ক্ষেত্রে এনবিআরের কাছে আগে আবেদন করতে হবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষও বলছে, বন্দরের মাশুল মওকুফ করার এখতিয়ার তাদের নেই। চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, অনুদানের পণ্য বন্দরের মাশুল ছাড়ের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হয়। বন্দর থেকে তথ্য নিয়ে তারপর মাশুল মওকুফ করে থাকে মন্ত্রণালয়। কিন্তু এ বিষয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ কোনো নির্দেশনা পায়নি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয় গত ১১ অক্টোবর মাশুল মওকুফ চেয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে একটি চিঠি দিয়েছে। আরেকটি চিঠি দিয়েছে এনবিআরের চেয়ারম্যানের কাছে। চিঠিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, বন্দরে আটকে থাকা জরুরি স্বাস্থ্যসামগ্রীর অভাবে দেশব্যাপী চলমান করোনা টিকা কর্মসূচি কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। একই সঙ্গে ম্যালেরিয়া ও কৃমি প্রতিরোধ কার্যক্রমেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, জরুরি স্বাস্থ্য সরঞ্জাম খালাস করতে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট), কমিশন, ব্যবস্থাপনা, বন্দরের মাশুল, পরিবহন মাশুল বাবদ যে টাকা প্রয়োজন, তা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে চাওয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে টাকা পেলে তা দ্রুত পরিশোধ করা হবে। দেশব্যাপী জরুরি স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে আটকে থাকা উপকরণ দ্রুত ছাড় করা প্রয়োজন। টাকা পরিশোধের আগে যাতে উপকরণ খালাসের ব্যবস্থা করা হয় চিঠিতে তা উল্লেখ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্যবিদ ও সরকারের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক বে-নজীর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, পাঁচ মাস ধরে চট্টগ্রাম বন্দরে মূল্যবান স্বাস্থ্য সরঞ্জাম পড়ে থাকাটা দুর্ভাগ্যজনক। জনস্বার্থের দিক বিবেচনা করে এনবিআর ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় কিছুটা অথবা পূর্ণ শুল্ক ছাড় দিতে পারে। এ ছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে কিছু থোক বরাদ্দ থাকে। যেখান থেকে চাইলে তারা জরুরিভাবে বরাদ্দ দিতে পারে। তিনি বলেন, এভাবে দিনের পর দিন যদি চিকিৎসা সরঞ্জাম বন্দরে পড়ে থাকে, তাহলে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে ভুল বার্তা যাবে। ভবিষ্যতে তারা আর অনুদানের চিকিৎসা সরঞ্জাম না-ও পাঠাতে পারে।