Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রতিবন্ধকতা থাকলেও এগিয়ে যাচ্ছেন ট্রান্সজেন্ডাররা

দেশের ট্রান্সজেন্ডার বা রূপান্তরকামী মানুষেরা যোগ্যতা বলেই নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন। তবে তাঁরা বলছেন, তাঁদের যেতে হবে আরও বহুদূর।

সমাবর্তনের গাউন ও টুপিতে হো চি মিন ইসলাম

সম্প্রতি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের গাউন ও টুপিতে হো চি মিন ইসলাম ফেসবুকে হাসিমুখের ছবি পোস্ট করেছেন। সেই পোস্টে শুভকামনা জানিয়েছেন অনেকেই। ট্রান্সজেন্ডার বা রূপান্তরকামী পরিচয়েই বিশ্ববিদ্যালয়টির জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ থেকে জনস্বাস্থ্যের ওপরে আন্তর্জাতিক স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) করেছেন হো চি মিন। সমাবর্তনে তিনিই ছিলেন একমাত্র ট্রান্সজেন্ডার। হো চি মিন ইসলামের সঙ্গে একই বিষয়ে মাস্টার্স করেছেন আরেক ট্রান্সজেন্ডার তাসনুভা আনান। তিনি দেশের বাইরে থাকায় সমাবর্তনে অংশ নিতে পারেননি।

ট্রান্সজেন্ডার অংকিতা ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ব্যবস্থাপনা বিভাগে এক্সিকিউটিভ এমবিএ করছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সার্বিক সহায়তা পাচ্ছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগে কর্মরত। সারাবন তহুরা পড়াশোনা করছেন রাজধানীর প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁর পড়াশোনার ৭০ শতাংশ খরচ মওকুফ করে দিয়েছে।

এই কমিউনিটির মানুষেরা বলছেন, জন্মের সময়ের দৈহিক গঠনের সঙ্গে হরমোনের গঠনের মিল ছিল না তাঁদের। তাঁদের ভাষায়, ভুল শরীরে ভুল মানুষের জন্ম হয়েছে। মানসিকভাবে ছেলে থেকে মেয়ে বা মেয়ে থেকে ছেলে পরিচয়ে তাঁরা পরিচিত হতে চেয়েছেন অথবা চিকিৎসাবিদ্যার মিশেলে তাঁরা নতুন এক মানুষ হিসেবে জন্ম নিয়েছেন।

হো চি মিন ইসলাম ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালে সিনিয়র স্টাফ নার্স। আর তাসনুভা দেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশনের প্রথম সংবাদ পাঠক। এর পাশাপাশি তিনি মডেলিং ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। অধিকারকর্মী ও সফল নারী হিসেবে ‘অনন্যা শীর্ষ দশ সম্মাননা ২০২০’ পেয়েছেন। শুধু দেশে নয়, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সিলাম গ্যালারিতে তিনি ‘প্লিৎজ নিউইয়র্ক সিটি ফ্যাশন উইক’–এ মডেল হিসেবে র‍্যাম্পে হেঁটেছেন।

Also Read: আন্তর্জাতিক কোর্সটিতে তাঁরাই প্রথম ‘ট্রান্সজেন্ডার’

সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া বা নিজেদের উপস্থিতি জানান দেওয়া হো চি মিন ইসলামদের নামের তালিকাটা বড় হচ্ছে। এ ধরনের বাস্তবতায় আজ শুক্রবার দেশে হিজড়া সংস্কৃতি মেনে চলা ও রূপান্তরকামী মানুষ পালন করছেন আন্তর্জাতিক ট্রান্সজেন্ডার ভিজিবিলিটি দিবস বা আন্তর্জাতিক রূপান্তরকামী দৃশ্যমানতা দিবস। ২০০৯ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের রূপান্তরকামী আন্দোলনকর্মী রাচেল ক্র্যান্ডেলের উদ্যোগে দিবসটি পালন শুরু হয়েছিল।

বাংলাদেশের রূপান্তরকামী (শারীরিক ও মানসিকভাবে) মানুষেরা বলছেন, তাঁরা নিজেদের অবস্থান জানান দিতে পারছেন, তবে সংখ্যাটা এখনো অনেক কম। প্রতি পদে পদে প্রতিবন্ধকতা, তাই যেতে হবে আরও বহুদূর।

উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন তাঁরা

নিজের শক্তিতেই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তাসনুভা

গত বছর বেসরকারি একটি এয়ারলাইনসের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে কেবিন ক্রু পদে চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন মেঘা শর্মা। তবে তাঁর শিক্ষাগত সনদে তিনি সুবল শীল। নানা জটিলতায় মেঘা শর্মা কেবিন ক্রু হতে পারেননি কিন্তু তিনি নিজ যোগ্যতায় আবেদন করেছিলেন।

জামালপুরের আরিফ বর্তমানে আরিফা ইয়াসমিন ময়ূরী। একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন। ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে তড়িৎকৌশলে ডিপ্লোমা পাস করার পরও শুধু হিজড়া বলে কোনো চাকরি পাননি তিনি। তারপর উদ্যোক্তা পরিচয়ে সরকারের জয়িতা পুরস্কারও পেয়েছিলেন।

Also Read: মূলধারায় একজন শিল্পী তাসনুভা

রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে পার্বতী আহমেদ

২০১৮ সালে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন রাজবাড়ীর তানিশা ইয়াসমীন চৈতি। তিনিও এখন একজন উদ্যোক্তা। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার লোচনপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ঋতুর ছবি জায়গা পেয়েছে সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলন পাঠ্যপুস্তকে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রথমবারের মতো রাজবাড়ী ছাত্র ইউনিয়নের জেলা সংসদের সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন ট্রান্সজেন্ডার শিশির বিন্দু। বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বইমেলায় হিজড়াদের বিক্রয়কর্মী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।

২০১৫ সালের ৩০ মার্চ ব্লগার ওয়াশিকুরকে হত্যার পর ধাওয়া খেয়ে পালাতে থাকা দুই জঙ্গি আরিফুল ইসলাম ও জিকরুল্লাহকে শুধু দুই হাত দিয়ে আটকে দিয়েছিলেন লাবণ্য হিজড়া।

বগুড়ার হো চি মিন ইসলাম, বাগেরহাটের কামাল হোসেন বা বর্তমানের তাসনুভা আনানসহ এই কমিউনিটির মানুষেরা বলছেন, জন্মের সময়ের দৈহিক গঠনের সঙ্গে হরমোনের গঠনের মিল ছিল না তাঁদের। তাঁদের ভাষায়, ভুল শরীরে ভুল মানুষের জন্ম হয়েছে। মানসিকভাবে ছেলে থেকে মেয়ে বা মেয়ে থেকে ছেলে পরিচয়ে তাঁরা পরিচিত হতে চেয়েছেন অথবা চিকিৎসাবিদ্যার মিশেলে তাঁরা নতুন এক মানুষ হিসেবে জন্ম নিয়েছেন।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘হিজড়া’ পরিচয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করতে পারবেন এই মানুষেরা। নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার মনোনয়নপত্রে ‘লিঙ্গ’ পরিচয়ে সংশোধন এনে ‘পুরুষ’ ও ‘মহিলা’র পাশাপাশি ‘হিজড়া’ যুক্ত করার মাধ্যমে এ সুযোগ তৈরি হয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ক্ষমতাবলে বিধিমালায় এই সংশোধন এনেছে নির্বাচন কমিশন।

হো চি মিন ইসলাম নিজের অভিজ্ঞতায় বলেন, ‘অনেক রিকশাচালক তুমি বলে সম্বোধন করেন। কেনাকাটা করতে দোকান বা শপিং মলে ঢুকলেও মানুষ ভয় পান, ভাবেন তাঁদের কাছ থেকে টাকা তুলতে গেছি। এক ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারিনি, তবে আরেক ব্যাংক থেকে লোন পেতে বেশি সমস্যা হয়নি। তাই অধিকার বাস্তবায়নে যেতে হবে আরও বহুদূর।’ ট্রান্সজেন্ডারদের সুরক্ষায় নীতিমালা ও আইন প্রণয়ন ছাড়া অধিকার বাস্তবায়নের পথ খুব সুগম হবে না বলেই মনে করছেন হো চি মিন ইসলাম।

অংকিতা ইসলাম বললেন, ‘আমরা খানিকটা এগিয়েছি, কিন্তু বেশির ভাগ নাটক, সিনেমায় হিজড়া বা ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিদের হাসির খোরাক বা নেতিবাচকভাবেই উপস্থাপন করা হচ্ছে। নিজের পরিচিতি জানান দিতে চাইলেই এই মানুষেরা আর পরিবারে টিকতে পারছে না।’ তবে ব্যাংকে চাকরি বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার অভিজ্ঞতায় অংকিতা ইসলাম বললেন, চারপাশের মানুষের কাছ থেকে আশাতীত সাহায্য–সহযোগিতা পাচ্ছেন।

প্রতিবন্ধকতা পিছু ছাড়ছে না

সমাজসেবা অধিদপ্তর ২০১৩ সালের হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন নীতিমালায় হিজড়াদের যে সংজ্ঞা দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, চিকিৎসাবিজ্ঞান অনুসারে, ক্রোমোজোমের ত্রুটির কারণে জন্মগত যৌনপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি, যাঁদের দৈহিক বা জেনেটিক কারণে নারী বা পুরুষ কোনো শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করা যায় না, সমাজে তাঁরা হিজড়া হিসেবে পরিচিত। নীতিমালা অনুযায়ী, সমাজে যিনি হিজড়া হিসেবে পরিচিত এবং যিনি নিজেকে হিজড়া পরিচয় দিতে ইতস্তত বোধ করেন না, তাঁকে বোঝাবে। এই কমিউনিটির মানুষেরা এ সংজ্ঞা সেভাবে মেনে নেননি। ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি এক গেজেটের মাধ্যমে হিজড়া জনগোষ্ঠীকে হিজড়া লিঙ্গ হিসেবে চিহ্নিত করে স্বীকৃতি দেয়।

‘আমরা খানিকটা এগিয়েছি, কিন্তু বেশির ভাগ নাটক, সিনেমায় হিজড়া বা ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিদের হাসির খোরাক বা নেতিবাচকভাবেই উপস্থাপন করা হচ্ছে। নিজের পরিচিতি জানান দিতে চাইলেই এই মানুষেরা আর পরিবারে টিকতে পারছে না।’
অংকিতা ইসলাম

তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, হিজড়া একটি ট্র্যাডিশন বা সংস্কৃতি। এ সংস্কৃতি বা হিজড়াগিরি করে যাঁরা জীবিকা নির্বাহ করেন না, তাঁরা স্বীকৃতির বাইরেই রয়ে গেছেন। সংজ্ঞাগত ঝামেলার কারণে ‘নকল’ হিজড়া হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় সমাজসেবা অধিদপ্তরে ১২ জন হিজড়া চাকরির জন্য মনোনয়ন পেয়েও চাকরি পাননি। ২০১৫ সাল থেকে এ জটিলতা শুরু হলেও তার সমাধান হয়নি এখনো।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজসেবা অধিদপ্তর ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে ‘হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রম’ বাস্তবায়ন করছে। কর্মক্ষম হিজড়াদের ৫০ দিনের প্রশিক্ষণ ও প্রশিক্ষণ শেষে অফেরতযোগ্য ১০ হাজার করে টাকা দেওয়া হতো। ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে এ কার্যক্রম বন্ধ আছে। বাস্তবায়িত কার্যক্রমের আওতায় হিজড়া শনাক্তকরণ ও পরিচয়পত্র দেওয়া, প্রশিক্ষণের পরে পুনর্বাসনসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ থাকলেও তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। বয়স্ক হিজড়াদের বিশেষ মাসিক ভাতা ৬০০ টাকা, উপবৃত্তির ক্ষেত্রে প্রাথমিকে ৭০০ টাকা, মাধ্যমিকে ৮০০ টাকা, উচ্চমাধ্যমিকে ১ হাজার টাকা এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ১ হাজার ২০০ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিযোগ, ভাতাভোগীদের খুঁজেই পান না কার্যক্রম বাস্তবায়নকারীরা।

পরিবারকে এগিয়ে আসতে হবে

অনন্যা বণিক

গৌতম বণিকের অনন্যা বণিক হয়ে ওঠার গল্পটা করুণ। তিনি বললেন, ‘আমার জীবন থেকে গৌতম বণিক মরে গেছে।’ অনন্যা বললেন, মেয়েদের মতো সাজগোজ করেন বা নাচেন বলে লেদমেশিনের দোকান থেকে তাঁর জন্য বেড়ি বানিয়ে আনা হয়েছিল। বেড়ি পায়ে থাকা অবস্থায় শুধু শৌচাগার পর্যন্ত যেতে পারতেন। তখন তাঁর বয়স ছিল ১৫ বা ১৬ বছর। ১৯৯২ সালে বাবা এবং ২০১০ সালে মা মারা যান। তাঁর চার ভাই কলকাতায় চলে গেছেন। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে অনন্যা ডিগ্রি পাস করেন।

হিজড়াদের নিয়ে কর্মরত এনজিও বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির কাছ থেকে সার্বিক সহায়তা পাওয়ার পাশাপাশি অনন্যা বুলবুল ললিতকলা একাডেমি থেকে নাচের ওপর ডিপ্লোমা করেছেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের একজন নৃত্যশিল্পী তিনি। ধামরাইয়ে উত্তরণ নৃত্যকলা একাডেমি নামের একটি প্রতিষ্ঠান চালানোর পাশাপাশি চারটি বিউটি পারলার চালাচ্ছেন।

অনন্যা বলেন, ‘আমার পরিবার গৌতমকে ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে চরম নির্যাতন করেছে আমার সঙ্গে। অথচ পরিবারের সহায়তা পেলে আমি এখন দেশের প্রতিষ্ঠিত নৃত্যশিল্পীদের একজন হতে পারতাম।’

তারপরও স্বপ্নের পরিসরটা বড় হচ্ছে

শুধু কর্মসংস্থানের দাবি নয়, জাতীয় সংসদে নিজেদের প্রতিনিধিত্ব দেখতে চান, এমন দাবিতেও পথে নামছেন এই কমিউনিটির মানুষেরা। গত বছরের জনসংখ্যা ও আবাসন শুমারি-২০২২–এর প্রাথমিক প্রতিবেদন বলছে, দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে হিজড়া ১২ হাজার ৬২৯ জন। নির্বাচন কমিশনের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা বলছে, হিজড়া ভোটার ৮৩৭ জন। ভোটার তালিকা বিধিমালা ২০১২–এর সংশোধনীতে লিঙ্গ হিসেবে পুরুষ, নারীর পাশাপাশি হিজড়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘হিজড়া’ পরিচয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করতে পারবেন এই মানুষেরা।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘হিজড়া’ পরিচয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করতে পারবেন এই মানুষেরা। নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার মনোনয়নপত্রে ‘লিঙ্গ’ পরিচয়ে সংশোধন এনে ‘পুরুষ’ ও ‘মহিলা’র পাশাপাশি ‘হিজড়া’ যুক্ত করার মাধ্যমে এ সুযোগ তৈরি হয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ক্ষমতাবলে বিধিমালায় এই সংশোধন এনেছে নির্বাচন কমিশন। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়।

হিজড়া পরিচয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিষয়ে গেজেট প্রকাশে ভূমিকা রেখেছিল হিজড়া জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করা সুস্থ জীবন নামের সংগঠনটি।

সুস্থ জীবনের সভাপতি পার্বতী আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, আগে সাংগঠনিক দক্ষতা কম ছিল। এখন দক্ষতা বেড়েছে। ফলে নিজেদের অধিকার আদায়ের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোয় কথা বলতে পারছেন।

পার্বতী আহমেদের আগের নাম ছিল ওহিদুল ইসলাম। জাতীয় পরিচয়পত্রে আগে এ নাম থাকায় তিনি পুরুষ হিসেবে ভোট দিতেন। তবে জাতীয় পরিচয়পত্র এবং শিক্ষাগত সনদ সংশোধন করে তাঁর পরিচয় এখন পার্বতী আহমেদ। বেশ গর্ব করেই বললেন, ‘এখন আমি আমার এ নামে নারী হিসেবেই ভোট দিতে পারব। নির্বাচনও করতে পারব।’

বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক আইনজীবী সারা হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, হিজড়া, ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য নানান উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তারপরও এই জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক পরিস্থিতির তেমন উন্নয়ন হয়নি। পথেঘাটে অনেককেই হিজড়াগিরি করতে হচ্ছে বলে মানুষও বিরক্ত হচ্ছেন। হিজড়াদের চাঁদাবাজি বন্ধে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এক সার্কুলারও জারি করেছে। কিন্তু বুঝতে হবে, এই মানুষেরা কেন হিজড়াগিরি করছে। ঔপনিবেশিক আমলের দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারাসহ বিভিন্ন আইনের জন্যও এই জনগোষ্ঠী হয়রানির শিকার হচ্ছে। তাই সরকারি স্বীকৃতির পাশাপাশি এই মানুষেরা যাতে চিকিৎসাসহ সব ধরনের সেবা পেতে পারে, সে ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।