Thank you for trying Sticky AMP!!

সীমা অক্সিজেন লিমিটেডের কারখানায় আহত একজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন গাউসিয়া কমিটির স্বেচ্ছাসেবীরা

সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণে হতাহতদের পাশে গাউসিয়া কমিটি

করোনাকালে রোগীদের সেবা ও লাশ দাফনে এগিয়ে এসে সুনাম কুড়িয়েছিলেন গাউসিয়া কমিটির স্বেচ্ছাসেবীরা। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের সময়ও ৪৩ জনের লাশ ও আহত অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে উদ্ধার করে সংগঠনটি। সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিজেন লিমিটেডের কারখানায় হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে আবারও প্রশংসায় ভাসছেন গাউসিয়া কমিটির স্বেচ্ছাসেবীরা।

গত শনিবার বিকেলে সীমা অক্সিজেন লিমিটেডের কারখানায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণে ৬ জন নিহত ও ২৫ জন আহত হন। এর মধ্যে নিহত ব্যক্তিদের ৪ জন এবং আহত ব্যক্তিদের ১২ জনকে হাসপাতালে নিয়ে যান গাউসিয়া কমিটির সদস্যরা। নিহত ছয় ব্যক্তির মধ্যে পাঁচজনের লাশের গোসল ও দাফনের ব্যবস্থাও করে সংগঠনটি।

বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত সীমা অক্সিজেন লিমিটেডের কারখানা অবস্থিত সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারি ইউনিয়নে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনার পর খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে নিজেদের সংগঠনের একাধিক অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন গাউসিয়া কমিটির সদস্যরা। বিএম ডিপোর কারখানায় বিস্ফোরণের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কারণে অনেকেই কারখানায় ঢুকতে ভয় পাচ্ছিলেন। এর মধ্যেই গাউসিয়া কমিটির স্বেচ্ছাসেবীরা সাহসিকতার সঙ্গে উদ্ধারকাজ করে গেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কারখানাটির শ্রমিকদের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারা সংগঠনটির ভূমিকার প্রশংসা করছেন। গাউসিয়া কমিটির তৎপরতার কারণে আহত ব্যক্তিদের খুব দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়েছে।

সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা নুরুল আলম দুলাল প্রথম আলোকে বলেন, গাউসিয়া কমিটির কারণে তাঁদের উদ্ধার অভিযান অনেক সহজ হয়েছে। সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবীদের আরও প্রশিক্ষিত করতে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণের বিষয়টি সংগঠনটির নেতাদের জানানো হয়েছে। তাঁরাও প্রশিক্ষণ নিতে রাজি। প্রশিক্ষণ শেষে অংশগ্রহণকারীদের সনদ দেওয়া হবে। তিনি বলেন, দুর্ঘটনার খুব অল্প সময়ের মধ্যেই গাউসিয়া কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থলে কাজ শুরু করেছেন। তাঁদের মতো স্বেচ্ছাসেবী বাড়ানো গেলে যেকোনো দুর্ঘটনা সহজে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।

গাউসিয়া কমিটির তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক মামুনুর রশিদ জানান, দুর্ঘটনার আধঘণ্টার মধ্যেই তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধারকাজ শুরু করেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সংগঠনের এক সদস্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে থাকা তাঁদের একটি গ্রুপে বার্তা দেন। বার্তা দেখতে পেয়ে স্বেচ্ছাসেবীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে হাজির হন। চট্টগ্রাম নগর থেকে সংগঠনের তিনটি অ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়।

গাউসিয়া কমিটির সীতাকুণ্ড উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী বলেন, ২০২০ সালে তাঁদের স্বেচ্ছাসেবীরা করোনায় মৃত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে লাশ দাফনের কাজ শুরু করেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের লাশ দাফন করেন তাঁরা। ২০২০ সাল থেকে এ পর্যন্ত শুধু সীতাকুণ্ডেই ২২৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার ও দাফন করেছেন তাঁরা। এর মধ্যে ২০টি অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির লাশ। এ ছাড়া, সীতাকুণ্ডে এ পর্যন্ত ৪০০ মানুষকে তাঁরা অক্সিজেন সেবা দিয়েছেন। তাঁদের কাছে ৩৫টি অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। তিনি বলেন, ধর্ম-বর্ণ পরিচয় নির্বিশেষে তাঁরা সেবা দেন। মানুষের কল্যাণে কাজ করে যেতে চান তাঁরা।

সংগঠন সূত্র জানায়, ১৯৮৬ সালে চট্টগ্রামের আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের মাধ্যমে গাউসিয়া কমিটি প্রতিষ্ঠা হয়। এই সংগঠনের তত্ত্বাবধানে দেশে ২০০-এর বেশি মাদ্রাসা পরিচালিত হচ্ছে।