Thank you for trying Sticky AMP!!

‘জীবনকে বুঝতে গণিত বুঝতে হবে’

গণিত উৎসবের বিজয়ী সুমাইয়া জামানের হাতে মেডেল

জীবনকে বুঝতে হলে গণিত বুঝতে হবে বলে মনে করেন গাজীপুর মহিলা সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম। তাঁর মতে, গণিতের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে মানবসভ্যতারও উন্নতি হয়েছে।

গতকাল সোমবার গাজীপুরের বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উচ্চবিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো আঞ্চলিক গণিত উৎসবে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে আমিনুল ইসলাম এ কথা বলেন। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘শৈশবে আমাদের সামনে গণিতকে উপস্থাপন করা হয় ভীতিকর বিষয় হিসেবে।

আর এর প্রভাব থেকে যায় সারা জীবন। জীবনকে নিয়মমাফিক পরিচালনার জন্য ন্যূনতম গণিতের জ্ঞান অপরিহার্য। গণিত ছাড়া কোনো মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না। তাই গণিতকে ভয় পেলে চলবে না। গণিতকে আমাদের জয় করতে হবে।’

উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো আঞ্চলিক গণিত উৎসব। উৎসব শেষে অতিথিদের সঙ্গে বিজয়ীরা। গতকাল গাজীপুরের বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উচ্চবিদ্যালয়ে

সকাল সাড়ে আটটার দিকে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জাতীয় সংগীত পরিবেশনার সঙ্গে জাতীয় পতাকা, আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড ও বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে উৎসবের শুরু হয়।

‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’ স্লোগান সামনে রেখে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি এ উৎসবের আয়োজন করে। এতে সহযোগিতা করে প্রথম আলো গাজীপুর বন্ধুসভা। অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

এর আগে উৎসবে অংশ নিতে শীতের সকালের কুয়াশা উপেক্ষা করে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জড়ো হয় গাজীপুর ও আশপাশের এলাকার শিক্ষার্থীরা। তাদের অনেকের সঙ্গে আসেন অভিভাবকেরাও।

উৎসবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক জীবন চন্দ্র দাস। আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড ও বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন যথাক্রমে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের গাজীপুর শাখার ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম ও প্রথম আলোর গাজীপুর প্রতিনিধি মাসুদ রানা।

গাজীপুরের রানী বিলাসমণি (বালক) উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী হামিদুল ইসলাম এবার প্রথমবার গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নেয়। সে বলে, ‘গণিতের প্রশ্নগুলো অনেক ভালো ছিল। এবার নির্বাচিত হতে পারিনি, তবে পরীক্ষার ধরনটা বোঝা গেছে। ভবিষ্যতেও এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করব। তখন অবশ্যই সিলেক্ট (নির্বাচিত) হব।’

গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষক খায়রুল বাশার জানান, তাঁদের কলেজ থেকে অনেক শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন (নিবন্ধন) করেছে। তাদের মধ্য থেকে পাঁচজন নির্বাচিত হয়েছে। এটা খুবই আনন্দের বিষয়। গণিতের ভীতি কাটাতে এই উৎসব খুবই কার্যকর বলে মন্তব্য করেন তিনি।

গাজীপুর মহিলা সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম ছাড়াও অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের অধ্যাপক অসীম বিভাকর ও সহযোগী অধ্যাপক বদরুন নেসা এবং বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক জীবন চন্দ্র দাস। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর গাজীপুর সংবাদদাতা আল আমিন ও শ্রীপুর প্রতিনিধি সাদিক মৃধা।

গণিত উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করে সহকারী প্রধান শিক্ষক জীবন চন্দ্র দাস বলেন, ‘গণিত অলিম্পিয়াডের মতো একটি বড় আয়োজনের জন্য আমাদের স্কুলটি বেছে নেওয়ায় আমি আনন্দিত ও গণিত অলিম্পিয়াডের কাছে কৃতজ্ঞ। আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে এই আয়োজন থেকে শিক্ষা নেবে এবং তারাও গণিতের ওপর আরও আগ্রহী হবে।’

অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে জীবন চন্দ্র দাসকে একটি ক্রেস্ট তুলে দেন গাজীপুর বন্ধুসভার সভাপতি নাঈমা সুলতানা।

অতিথিরা শিক্ষার্থীদের গণিত ও বিজ্ঞান নিয়ে নানা প্রশ্নের উত্তর দেন। শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের ফাঁকে ফাঁকে চলে গান ও কবিতা আবৃত্তি।

উৎসবে কিশোর আলোর স্টলও ছিল। অনেকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মাসিক পত্রিকাটি কেনেন।

গাজীপুর প্রথম আলো বন্ধুসভার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হৃদয় হোসেন ও সাংগঠনিক সম্পাদক উম্মে কুলসুমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক গাজীপুর শাখার ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক ও প্রথম আলো গণিতের জন্য একসঙ্গে কাজ করছে। আন্তর্জাতিকভাবে খুদে শিক্ষার্থীরা পরিচিতি লাভ করছে। এটা আমাদের কাছে অনেক বড় পাওয়া।’

গণিত উৎসব উদ্বোধনের পর সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিদ্যালয়ের আটটি কক্ষে গণিতের পরীক্ষা শুরু হয়। চলে ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট। পরীক্ষার পর শিক্ষার্থী প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেয়। পাশাপাশি চলে খাতা মূল্যায়নের কাজ। লিখিত পরীক্ষায় বিজয়ী শিক্ষার্থীদের ঢাকায় জাতীয় গণিত উৎসবে যোগ দেওয়ার সনদ ও টি-শার্ট দেওয়া হয়।