Thank you for trying Sticky AMP!!

শিক্ষায় নৈতিকতা নেই বলেই শিক্ষকেরা লাঞ্ছিত হচ্ছেন: অধ্যাপক আবদুল মান্নান

সেমিনারে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান। আজ দুপর ১২টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের মিলনায়তনে

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেছেন, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা নীতি নৈতিকতার কোনো শিক্ষা দেওয়া হয় না। তা যদি হতো, ছাত্রের হাতে শিক্ষককে মার খেয়ে মরতে হতো না। কিংবা তথাকথিত কোনো জনপ্রতিনিধিদের হাতে শিক্ষক প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত হতেন না। একজন শিক্ষককে জুতার মালা পরিয়ে পুলিশের সামনে দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, এমন দৃশ্য কোনো সভ্য দুনিয়াতে পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশেই এসব ঘটছে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাচিন্তা ও আজকের বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সেমিনারে এক প্রবন্ধ উপস্থাপন করে তিনি এসব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের মিলনায়তনে এ সেমিনার হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহ।

অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, বঙ্গবন্ধু গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে যোগ্য ব্যক্তিদের পদায়ন করতেন। বর্তমানের মতো তখন আমলা বা প্রশাসকদের লাগামহীন দূরত্ব ছিল না। আমলারা যখন দেশে আমলাতন্ত্র শুরু করেন, তখন দেশের সর্বনাশ শুরু হয়। সেটি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের ২৩ বছরে দেখেছেন, উপলব্ধি করেছেন। পাকিস্তানের বর্তমান অবস্থার প্রধান কারণ দেশটির সামরিক, বেসামরিক আমলাদের রাষ্ট্রীয় কাজে অযৌক্তিকভাবে হস্তক্ষেপ ও তাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার মানসিকতা।

মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান বলেন, একাধিক প্রজন্ম বেড়ে উঠছে একাত্তরে বাঙালি কার সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল এটি না জেনে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যে সব সামরিক ও বেসামরিক সরকার এসেছে, প্রত্যেক সরকারই একেকটি শিক্ষা কমিশন গঠন করেছে। কিন্তু পরিস্থিতির কোনো উন্নতি করতে পারেনি।

এখন সব স্তরের শিক্ষা হয়েছে উঠেছে পরীক্ষাকেন্দ্রিক। জ্ঞানচর্চা বা কর্মদক্ষতাকেন্দ্রিক নয়। এর ফলে গত চার দশকে বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিকমানের জ্ঞান সৃষ্টি হয়নি। কোনো পণ্ডিত আন্তর্জাতিক মহলে পরিচিত লাভ করেনি। এখন প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ইংরেজি বিভাগ আছে। আছে রসায়ন, অর্থনীতির মতো বিভাগও। কিন্তু এসব উঁচুমানের গবেষক তৈরি হয় না। বর্তমানে যাঁরা পড়েন, তাঁদের অধিকাংশের লক্ষ্য থাকে আমলা বা প্রশাসক হওয়া। কারণ, এসব পেশায় সুযোগ-সুবিধা আকাশচুম্বী।

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাপকে যুগোপযোগী করতে তুলতে তলে শিক্ষা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো শিক্ষাবিদদের কাছে ছেড়ে দিতে হবে বলে মনে করেন অধ্যাপক আবদুল মান্নান। তিনি বলেন, শিক্ষাক্রমে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবর্তন আনতে হবে। এখন বিজ্ঞানের আর কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির যুগ। যুগোপযোগী বৃত্তিমূলক কারিগরি শিক্ষায় তরুণ সমাজকে শিক্ষিত করতে হবে, তা না হলে দেশের তরুণ সমাজ দেশে ও বিদেশে কায়িক শ্রম ছাড়া আর কিছুই দিতে পারবে না।

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতার। মুখ্য আলোচক ছিলেন চিটাগং ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক মাহফুজুল হক। ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী তাসলিমা নাসরিন ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজিম আফরিনের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য বেনু কুমার দে ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী।