Thank you for trying Sticky AMP!!

রোহিঙ্গাদের দুর্দশার বর্ণনায় নিজের শরণার্থী জীবনের কথা বললেন মিশেল ব্যাশেলেত

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেত

সম্প্রতি বাংলাদেশ ঘুরে যাওয়া জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুর্দশা তুলে ধরতে গিয়ে নিজের শরণার্থী জীবনের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, রাখাইন রাজ্যে এখন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সহিংসতা চলছে, যা মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের শামিল।

৩১ আগস্ট জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের পদে মেয়াদ শেষ হচ্ছে মিশেল ব্যাশেলেতের। এ উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার জেনেভায় সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। বিদায়ী এই সংবাদ সম্মেলনে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে নিজের কার্যক্রম সম্পর্কে আলোচনা করেন ব্যাশেলেত। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বুরকিনা ফাসো, নাইজার, আফগানিস্তান, চীন, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, পেরু এবং বাংলাদেশ সফর করেছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

১৪ থেকে ১৭ আগস্ট বাংলাদেশ সফর করে যাওয়া মিশেল ব্যাশেলেত এদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কিছু উল্লেখ করেননি। রোহিঙ্গাদের নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘গত সপ্তাহে আমি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। সেখানকার একজন শিক্ষক আমাকে বলেছেন, মিয়ানমারে প্রতি ক্লাসে তিনি খুবই কৃতিত্বপূর্ণ ফল অর্জন করেন এবং সেদেশে একজন চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। অথচ দেশ থেকে পালিয়ে গত পাঁচ বছর তাঁকে শরণার্থী শিবিরে কাটাতে হয়েছে। কারণ, তিনি একজন রোহিঙ্গা। তাঁর বৌদ্ধ বন্ধুরা এখন চিকিৎসক। নিজের স্বপ্নের কথা মনে করে এখনো মাঝেমধে৵ কান্না করেন তিনি।’

এ প্রসঙ্গে আলোচনায় মিশেল ব্যাশেলেত বলেন, ‘একজন শরণার্থী হিসেবে আমার অভিজ্ঞতা ছিল এর চেয়ে অনেক বেশি স্বস্তিদায়ক। শিক্ষা চালিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি আমার জীবনযাপনের মানও ছিল ভালো। কিন্তু মাতৃভূমির জন্য আকুলতা, ঘরে ফিরতে উন্মুখ বহু রোহিঙ্গার যে আকাঙ্ক্ষা, তা আমার মধ্যে গভীরভাবে অনুরণিত হয়েছে। দুঃখজনকভাবে, স্বেচ্ছায়, মর্যাদার সঙ্গে ও স্থায়ীভাবে তাঁদের স্বভূমিতে ফিরে যাওয়ার জন্য যে অবস্থা হওয়া দরকার তা এখনো হয়নি।’

মিশেল ব্যাশেলেত চিলির সাবেক প্রেসিডেন্ট। সত্তরের দশকের প্রথম দিকে তাঁর বাবা ছিলেন দেশটির খাদ্য বিতরণ দপ্তরের দায়িত্বে। ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বরে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশটির ক্ষমতা দখল করেন অগাস্টো পিনোশে। এরপর প্রথমে মিশেল ব্যাশেলেতের বাবা এবং পরে মা–মেয়েকে গ্রেপ্তার করা হয়। কারাবন্দী অবস্থায় নির্যাতনের শিকার হওয়ার এক পর্যায়ে ১৯৭৫ সালে দেশ ছেড়ে অস্ট্রেলিয়ায় এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন মিশেল ব্যাশেলেত। পরে জার্মানি গিয়ে লেখাপড়া করেন। চার বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৭৯ সালে চিলিতে ফিরেছিলেন তিনি।

২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন–পীড়নের মুখে রাখাইন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিল সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এর পাঁচ বছর পূর্তির দিনে সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার বলেন, মিয়ানমারে মানবাধিকার বিপর্যয় আরও খারাপের দিকে রয়েছে। সামরিক জান্তা বিভিন্ন প্রদেশে এখনো সামরিক অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রতিক সহিংসতার উল্লেখ করে ব্যাশেলেত বলেন, সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির যোদ্ধাদের মধ্যকার লড়াইয়ের শিকার হচ্ছে রোহিঙ্গারা। আবার অভিযান চালিয়ে সরাসরি তাদের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।

মিয়ানমারের জনগণের ওপর সহিংসতা বন্ধ, বেসামরিক শাসনে ফেরা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সহিংতার জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করতে চাপ প্রয়োগের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মিশেল ব্যাশেলেত।