Thank you for trying Sticky AMP!!

ছাত্রলীগের পদ পেতে এসব করতে হয়, পা টেপানোর ছবি নিয়ে আরেক নেতা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হকের পা টেপানোর ছবিটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হকের পা টেপানোর ছবি ঘুরেফিরে বারবার আলোচনায় আসছে। ক্ষোভের কথা জানাচ্ছেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরাই। পা টেপানোর ছবি নিয়ে এক নেতা যেমন বলেছেন, এ থেকে বোঝা গেল, ছাত্রলীগের পদে আসতে হলে এ ধরনের তেলবাজির কাজ করে আসতে হয়।

গতকাল সোমবার ওই ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। তাতে দেখা যায়, রেজাউল হক বিছানায় শুয়ে মুঠোফোন দেখছেন। তাঁর দুই পাশে বসে পা টিপছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপকর্মসূচি ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক শামীম আজাদ ও উপক্রীড়া সম্পাদক শফিউল ইসলাম। রেজাউল হকের দাবি, তিনি অসুস্থ থাকায় ওই দুই নেতা তাঁকে সেবা করছিলেন।

ছবিটি ফেসবুকে শেয়ার করে অনিক সূত্রধর নামের এক ছাত্রলীগ কর্মী লিখেছেন, ‘রেজাউল হকের পেছনে স্লোগান দিতে হয় না, এটাই হয়তো সবচেয়ে সৌভাগ্যের বিষয়।’ নিয়াজ আবেদীন পাঠান নামের আরেকজন লিখেছেন, ‘যোগ্যতার চেয়ে বেশি কিছু পেয়ে গেলে হয়তো এমনই হয়।’

যা বলছেন বর্তমান নেতারা
ছবিটি নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতারা ক্ষোভ জানিয়েছেন। সংগঠনটির সহসভাপতি প্রদীপ চক্রবর্তী বলেছেন, ‘যাঁরা আমাদের সঙ্গে রাজনীতি করেন, তাঁরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। যোগ্যতা নিয়েই তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সবারই আত্মসম্মান আছে। একজন শিক্ষার্থীকে দিয়ে এ ধরনের কাজ করানো কোনোভাবেই কাম্য নয়।’

প্রদীপ চক্রবর্তী বলেন, ‘পা টেপা দুজন কমিটিতে পদ পেয়েছেন। অনেক যোগ্য ব্যক্তি পাননি। এতে বোঝা গেল, ছাত্রলীগের পদে আসতে হলে এ ধরনের তেলবাজির কাজ করে আসতে হয়। অন্যদিকে এ কমিটির মেয়াদ শেষ। প্রায় চার বছর ধরে রেজাউল হক পদে আছেন। ক্যাম্পাসে এখন যোগ্য নেতৃত্ব দরকার। কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে এ কমিটি বাতিল করে নতুন নেতৃত্ব দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াছ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এ ঘটনা নিয়ে খুবই বিব্রত। দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছ থেকে এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ ঘটনা সংগঠনের ভাবমূর্তিকে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করেছে। এর আগেও এসব ঘটনা ঘটেছে।’

সহসভাপতি আবু বকর তোহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা শিষ্টাচারবহির্ভূত কাজ। রেজাউল হক যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন, তখন অনেক শিক্ষার্থী স্কুলেই ভর্তি হননি। তাঁর সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বয়সের ফারাক অনেক। সাধারণ শিক্ষার্থীসহ অন্য নেতা–কর্মীরা অনেক আগে থেকেই তাঁর প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে আসছেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উচিত এসব ঘটনা বিবেচনা করে নতুন কমিটি দেওয়া।’

সাবেক নেতারাও ক্ষুব্ধ
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ফজলে রাব্বি। তিনি ২০১৫ সালের ২০ জুলাই থেকে ২০১৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘রেজাউল হকের ছাত্রত্ব শেষ প্রায় ১০ বছর আগে। যদি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধ থাকে, তাহলে এখনই তাঁর উচিত বর্তমান ছাত্রদের হাতে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া। বাড়িতে গিয়ে ব্যক্তিগত জীবন শুরু করা। কারণ, রেজাউলের কর্মকাণ্ডে সংগঠনের ভাবমূর্তি একেবারে তলানিতে এসেছে। এমন কোনো অপকর্ম নেই, যেটিতে রেজাউল হক সম্পৃক্ত নন।’

ফজলে রাব্বির আগে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এম এ খালেদ। তিনি ২০১১ সালের ২৫ জুন থেকে ২০১৫ সালের জুলাই পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ঘটনা। ছাত্রলীগের সভাপতির কাছে এ ধরনের ঘটনা কাম্য নয়। যদিও রেজাউল নিজেকে অসুস্থ দাবি করে সেবা নিয়েছেন—এমনটা বলেছেন। তবু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে দিয়ে এ ধরনের সেবা নেওয়া যৌক্তিক নয়।’

বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭ বছর
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের ছয় শিক্ষাবর্ষের মধ্যে স্নাতক ও দুই শিক্ষাবর্ষের মধ্যে স্নাতকোত্তর পাস করতে হবে। অর্থাৎ একজন শিক্ষার্থী সব মিলিয়ে আট বছর ক্যাম্পাসে থাকতে পারবেন। অথচ রেজাউল হক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগে ভর্তি হন প্রায় ১৭ বছর আগে, ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষে। তিনি স্নাতক পাস করেন ২০১০ সালে। স্নাতকোত্তর পাস করেছেন ২০১৩ সালে।

রেজাউল হক ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পান ২০১৯ সালে ১৪ জুলাই। সভাপতির মেয়াদ এক বছর হলেও তিনি এখনো এই পদে রয়ে গেছেন। তাঁর শিক্ষাবর্ষের অন্য শিক্ষার্থীরা অন্তত ৯ বছর আগে স্নাতকোত্তর শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েছেন। তাঁদের কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছেন। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির দুই সদস্যও তাঁর চেয়ে বয়সে ছোট।

Also Read: ছাত্রলীগ সভাপতি বিছানায় শুয়ে, পা টিপছেন দুই নেতা