Thank you for trying Sticky AMP!!

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন সংগঠনটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। রিপোর্টার্স ইউনিটি, ঢাকা, ২৮ জানুয়ারি

অপশক্তির দাবি মেনে কোনো রচনা পরিবর্তন না করার দাবি

সাম্প্রদায়িক অপশক্তির দাবি মেনে কোনো রচনা বা বিষয় প্রত্যাহার কিংবা পরিবর্তন না করার দাবি জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। তবে পাঠ্যপুস্তকে মুদ্রণ ও তথ্যগত যেসব ভ্রান্তি আছে, তা দ্রুত নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।

রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আজ রোববার ‘স্কুল পাঠ্যপুস্তকের বিষয় নিয়ে মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সাম্প্রতিক ষড়যন্ত্র’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এই দাবি জানানো হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।

নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে প্রণীত সপ্তম শ্রেণির ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইয়ের একটি অধ্যায়ে হিজড়া জনগোষ্ঠী সম্পর্কে জনসচেতনতামূলক একটি পাঠ রয়েছে। এ নিয়ে বিতর্ক চলছে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক একজন খণ্ডকালীন শিক্ষক এক অনুষ্ঠানে ওই বইয়ের পাতা ছিঁড়ে ফেলার পর বিষয়টি নতুন করে সামনে আসে। ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

আজ সংবাদ সম্মেলনে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, সপ্তম শ্রেণির বইটিতে ‘শরীফার গল্প’ নামে একটি রচনা রয়েছে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সম্পর্কে যথাযথ ধারণা দেওয়ার জন্য। ১৯ জানুয়ারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব এক সেমিনারে আলোচনার একপর্যায়ে রচনাটি ছিঁড়ে ফেলে গণমাধ্যমের সামনে যে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন, সেটিকে হালকাভাবে দেখার কোনো কারণ নেই। তাঁর এই কর্মকাণ্ডের পর ঝিম মেরে বসে থাকা বিভিন্ন মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সংগঠন মাঠে নেমে পড়েছে।

শাহরিয়ার কবির বলেন, ’৭১-এর গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সহযোগীরা যেভাবে নতুন শিক্ষাক্রমের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছে, তা কঠোরভাবে দমন করতে হবে। তা না হলে দেশ ও জাতির সামনে বিপদ অপেক্ষা করছে। তিনি বলেন, কোনো অবস্থায় মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির দাবি মেনে কোনো রচনা বা বিষয় প্রত্যাহার বা পরিবর্তন করা যাবে না। শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘আমরা আশা করব, পাঠ্যপুস্তকে মুদ্রণ ও তথ্যগত যেসব ভ্রান্তি আছে, তা দ্রুত নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষকসহ সচেতন নাগরিক সমাজের সবাইকে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির অপচেষ্টা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান জানান।

Also Read: কী আছে আলোচিত শরীফার গল্পে

আসিফ মাহতাবের আচরণের সমালোচনা করেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। তিনি বলেন, আসিফ মাহতাবের বক্তব্য অশিক্ষকসুলভ এবং অবশ্যই সংবিধানবিরোধী। তাঁর উপযুক্ত শাস্তি না হলে এ ধরনের প্রবণতা বাড়তে পারে।

মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলনের সভাপতি বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, সংবিধান তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি দিয়েছে। তিনি (আসিফ মাহতাব) যে কাজটি করেছেন, তা সংবিধানবিরোধী, রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক অপরাধ। এ কারণে তাঁকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব শিক্ষক ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপিকা মাহফুজা খানম বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমাদের শিক্ষার্থীদের সমৃদ্ধ করার জন্য শিক্ষকেরা কাজ করবেন, এমনটাই কাম্য। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার জন্য অসাম্প্রদায়িক শিক্ষাক্রম করতে হবে।’

সপ্তম শ্রেণির ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইটি বৈচিত্র্যপূর্ণ বলে মনে করেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহসভাপতি শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ। তিনি বলেন, বিভিন্ন সম্প্রদায়, গোত্র ও জাতির কথা এসেছে এই বইয়ে। এর প্রেক্ষাপটে তৃতীয় লিঙ্গের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যেন স্কুল থেকেই শিক্ষার্থীরা তাদের সম্পর্কে জানতে পারে।

Also Read: ‘শরিফার গল্প’ পর্যালোচনায় কমিটি করল শিক্ষা মন্ত্রণালয়