Thank you for trying Sticky AMP!!

দেশে পাঁচটি মৃত্যুর একটি হৃদ্‌রোগে

মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর শীর্ষে হৃদ্‌রোগ। সরকারকে ঠিক জায়গায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

দেশে মৃত্যুর প্রধান কারণ হৃদ্‌রোগ। মোট মৃত্যুর ২১ শতাংশ ঘটছে হৃদ্‌রোগের কারণে। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুর প্রধান কারণ নিউমোনিয়া। মৃত্যুর এই তথ্য বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস)।

পরিসংখ্যান ব্যুরো গত জানুয়ারিতে তাদের নিয়মিত প্রকাশনা ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২২’ বা এসভিআরএস ২০২২ প্রকাশ করেছে। তাতে জন্ম, মৃত্যু, গড় আয়ু, মৃত্যুহার, শিক্ষা, বেকারত্ব—এই ধরনের বেশ কিছু বিষয়ে সর্বশেষ জাতীয় পর্যায়ের তথ্য আছে। এসভিআরএসের তথ্য নীতিনির্ধারক, গবেষক, শিক্ষক, দাতা সংস্থা ও সাংবাদিকদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব পায়।

‘আমরা বেশ আগে থেকেই বলে আসছি যে হৃদ্‌রোগ বাংলাদেশের মানুষের ওপর প্রবলভাবে জেঁকে বসেছে। এসভিআরএসের সর্বশেষ পরিসংখ্যান আমাদের আশঙ্কারই বাস্তব রূপ। তামাকের ব্যবহার, কায়িক পরিশ্রম কম করা, ওজন বৃদ্ধি, অস্বাস্থ্যকর খাদ্য, লবণ বেশি খাওয়া এবং বায়ুদূষণের কারণে দেশে হৃদ্‌রোগ বাড়ছে, হৃদ্‌রোগে মৃত্যু বাড়ছে। এখন সরকারকে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, ঠিক কোন বিষয়ে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব হবে।’
অধ্যাপক সোহেল রেজা চৌধুরী, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের রোগতত্ত্ব গবেষণা বিভাগের প্রধান

পরিসংখ্যান ব্যুরো মৃত্যুর প্রধান ১৫টি করণ উল্লেখ করেছে। এই তালিকার শীর্ষে আছে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু বা হঠাৎ হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু। মোট মৃত্যুর ১৭ দশমিক ৪৫ শতাংশের কারণ হার্ট অ্যাটাক। অন্যদিকে তালিকার ৮ নম্বরে আছে নানা ধরনের হৃদ্‌রোগ। মোট মৃত্যুর ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশের পেছনে আছে এই নানা ধরনের হৃদ্‌রোগ।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, হার্ট অ্যাটাক ও নানা ধরনের হৃদ্‌রোগে ২১ দশমিক ১২ শতাংশ মৃত্যু হচ্ছে। অর্থাৎ দেশে প্রতি পাঁচটি মৃত্যুর একটি হচ্ছে হৃদ্‌রোগে। এই পরিসংখ্যান একটি বিপজ্জনক বার্তা দিচ্ছে বলে জনস্বাস্থ্যবিদ ও হৃদ্‌রোগবিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

মৃত্যুর প্রধান কারণ

হার্ট অ্যাটাকের পর তালিকার দ্বিতীয় স্থানে আছে শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগ। দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগসহ শ্বাসতন্ত্রজনিত নানা রোগে ৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ মৃত্যু ঘটে। এর পরে আছে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা মস্তিষ্কের রক্তনালিতে রক্ত জমাট বাঁধার কারণে মৃত্যু। এটি ‘ব্রেন স্ট্রোক’ নামে বেশি পরিচিত। ব্রেন স্ট্রোকে মারা যান ৯ দশমিক ১৫ শতাংশ মানুষ।

তালিকার ১৫টি কারণের মধ্যে আরও আছে অ্যাজমা, বিভিন্ন ধরনের জ্বর, যকৃৎ ক্যানসার, নিউমোনিয়া, হার্ট অ্যাটাক ছাড়াও অন্যান্য হৃদ্‌রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তের ক্যানসার, কিডনি রোগ, সড়ক দুর্ঘটনা ও আত্মহত্যা।

কোন রোগে শহর ও গ্রামে কত শতাংশ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, তারও উল্লেখ আছে এসভিআরএসের প্রতিবেদনে। প্রতিবেদন বলছে, হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু গ্রামের (১৫.৭০ শতাংশ) চেয়ে শহরে (২৪.০৯) বেশি। আবার শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগে মৃত্যু গ্রামের (১০.০৯) চেয়ে শহরে (৭.৯৩) কম।

শিশুমৃত্যু

প্রতিবেদনে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর প্রধান ১০টি কারণ উল্লেখ আছে। এই তালিকার শীর্ষে আছে নিউমোনিয়া। শিশুমৃত্যুর ২৯.৬৩ শতাংশই ঘটছে নিউমোনিয়ায়। দ্বিতীয় প্রধান কারণ জ্বর। নানা ধরনের জ্বরে ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ মৃত্যু হচ্ছে। এরপর আছে শ্বাসতন্ত্রের রোগ।

পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, হঠাৎ হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে বা হার্ট অ্যাটাকে পাঁচ বছরের কম বয়সী ২ দশমিক ৮৩ শতাংশ শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। এ কারণটি আছে তালিকার ৭ নম্বরে।

শিশুমৃত্যুর অন্য প্রধান কারণগুলো হচ্ছে পানিতে ডুবে, অপুষ্টি, জন্ডিস, টাইফয়েড বা প্যারা টাইফয়েড, জটিল ডায়রিয়া এবং অন্যান্য রোগ।

বিবিএস কী বার্তা দিল

সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, দেশে হৃদ্‌রোগে ২১ শতাংশ মৃত্যু ঘটছে। শিশুরাও হৃদ্‌রোগে মারা যাচ্ছে। মৃত্যুর এই পরিসংখ্যান থেকে এটা স্পষ্ট যে দেশে হৃদ্‌রোগে বহু মানুষ আক্রান্ত, জাতীয়ভাবে এই রোগের বোঝা অনেক বড়।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলেন, হৃদ্‌রোগ একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ। কিছু হৃদ্‌রোগের চিকিৎসা দীর্ঘদিন চালিয়ে যেতে হয়। কিছু হৃদ্‌রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল।

বহুদিন ধরে হৃদ্‌রোগ নিয়ে গবেষণা করছেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের রোগতত্ত্ব গবেষণা বিভাগের প্রধান, অধ্যাপক সোহেল রেজা চৌধুরী। বিবিএসের নতুন পরিসংখ্যান সম্পর্কে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বেশ আগে থেকেই বলে আসছি যে হৃদ্‌রোগ বাংলাদেশের মানুষের ওপর প্রবলভাবে জেঁকে বসেছে। এসভিআরএসের সর্বশেষ পরিসংখ্যান আমাদের আশঙ্কারই বাস্তব রূপ। তামাকের ব্যবহার, কায়িক পরিশ্রম কম করা, ওজন বৃদ্ধি, অস্বাস্থ্যকর খাদ্য, লবণ বেশি খাওয়া এবং বায়ুদূষণের কারণে দেশে হৃদ্‌রোগ বাড়ছে, হৃদ্‌রোগে মৃত্যু বাড়ছে। এখন সরকারকে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, ঠিক কোন বিষয়ে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব হবে।’