Thank you for trying Sticky AMP!!

এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসের সহায়তায় অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লিনিক্যাল এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট অ্যান্ড ডায়াবেটোলজিস্ট ইন বাংলাদেশ (এসেডবি) আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে চিকিৎসক ও অতিথিরা। রোববার রাজধানীর বনানীতে এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসের কার্যালয়ে

নিরাপদে রোজা রাখতে ডায়াবেটিস রোগীদের যা যা মানতে হবে

ডায়াবেটিস রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে খাবারের সঙ্গে ওষুধ ও ইনসুলিনের সমন্বয় করে রোজা রাখলে নিরাপদে রোজা রাখতে পারবেন। রোজার প্রস্তুতি নিতে আগেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। রমজান মাস শুরু হওয়ার আগে থেকেই নফল রোজা রাখার মাধ্যমে এই প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে।

রোববার এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসের সহায়তায় অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লিনিক্যাল এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট অ্যান্ড ডায়াবেটোলজিস্ট ইন বাংলাদেশ (এসেডবি) আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে এসব পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। রাজধানীর বনানীতে এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসের কার্যালয়ে এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়।

গোলটেবিল বৈঠকে চিকিৎসকেরা বলেন, দেশে ডায়াবেটিস রোগী আছেন দেড় কোটির মতো। রোজার সময় তাঁদের অনেকেই রক্তে শর্করার (সুগার) মাত্রা পরীক্ষা করান না। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া রোজা রাখার কারণে রক্তে শর্করার স্বল্পতা (হাইপোগ্লাইসেমিয়া), শর্করার আধিক্য (হাইপারগ্লাইসেমিয়া), ডায়াবেটিস কিটোএসোডোসিস ও পানিশূন্যতার মতো জটিলতায় ভোগেন। অথচ রোজার সময়ে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কী কী করণীয়, তা জানলে তাঁরা এসব জটিলতা থেকে মুক্ত হতে পারেন।

ডায়াবেটিস রোগীদের সাহ্‌রি না খেয়ে রোজা রাখার ব্যাপারে সতর্ক করেন চিকিৎসকেরা। যাঁদের ওজন বেশি, তাঁদের ইফতারের পর হালকা ব্যায়াম করার পরামর্শ দিয়ে চিকিৎসকেরা বলেন, রক্তে শর্করার স্বল্পতা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ইফতারে ১–২টি খেজুর খেয়ে বিরতি দিয়ে পরে ফল, সবজির স্যুপ দিয়ে বাকি ইফতার করতে হবে। সাহ্‌রিতে আমিষযুক্ত খাবার বেশি খেতে হবে। ইফতার থেকে সাহ্‌রি পর্যন্ত প্রচুর পানি পান করতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে রোজা রাখার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন পরিচালক (এনসিডিসি) মোহাম্মদ রোবেদ আমিন বলেন, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগের বিষয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সরকার কয়েক বছর ধরে পদক্ষেপ নিচ্ছে। টাইপ–১ ডায়াবেটিসের জন্য ইনসুলিন জীবনদায়ী। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিনা মূল্যে ইনসুলিন দেওয়া হয়।

বৈঠকের সঞ্চালক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও এসেডবির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন বলেন, রমজানের আগে নফল রোজা রেখে ডায়াবেটিস রোগীরা রোজার প্রস্তুতি নিতে পারেন। এতে বোঝা যাবে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক মো. আনিসুজ্জামান সিকদার বলেন, রক্তের শর্করা পরীক্ষা বিষয়ে মসজিদের ইমামদেরও ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের প্রধান ইন্দ্রজিৎ প্রসাদ বলেন, ডায়াবেটিস রোগীরা কখন কী খাবেন, রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়ার লক্ষণ কী, শর্করার মাত্রা কমলে কী করবেন—এসব নিয়ে আলাদা ব্যবস্থাপত্র আছে। সেই ব্যবস্থাপত্র নিয়ে রোজার আগেই প্রস্তুতি নিতে হবে।

রোজার সময় ডায়াবেটিস রোগীদের ওষুধ ও ইনসুলিন সমন্বয় করা অত্যন্ত জরুরি বলে উল্লেখ করেন ঢাকা মেডিকেলের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মঈনুল ইসলাম ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আতিকুর রাহমান। তাঁরা বলেন, ওষুধ ও খাবারের সমন্বয় না করার কারণে ডায়াবেটিস রোগীরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। রোজা রাখলে সকালের ওষুধ ও ইনসুলিন নিতে হবে ইফতারের পর। রাতেরটা নিতে হবে সাহ্‌রির সময়। আরও বেশি লাগলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসের নির্বাহী পরিচালক মো. মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ে ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানেরও দায়িত্ব রয়েছে। এসকেএফের কারখানায় ২০১২ সাল থেকে বিশ্বমানের ইনসুলিন তৈরি হচ্ছে। এখন থেকে ৩২টি দেশে এসকেএফের কারখানায় প্রস্তুত ইনসুলিন রপ্তানি হবে।

বিভিন্ন হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের চিকিৎসকেরা গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের মাহমুদুল হক, এসেডবির সহসভাপতি মো. রুহুল আমিন, হলি ফ্যামিলির মীর মোশাররফ হোসেন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আনোয়ারুল কবির, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের এ কে এম আমিনুল ইসলাম, বিএসএমএমইউর মোর্শেদ আহমেদ খান, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের এম এ হালিম খান, ঢাকা মেডিকেল কলেজের মোবারক হোসেন।

অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসের হেড অব মেডিকেল অ্যাফেয়ার্স মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন। আরও উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউর অধ্যাপক নুসরাত সুলতানা ও এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শাহজামাল খান।