Thank you for trying Sticky AMP!!

সৈকতে ডিম পেড়ে আবার সাগরে ফিরে যাচ্ছে মা কাছিম

কক্সবাজার সৈকতের হ্যাচারিতে ফুটছে বিপন্ন কাছিমের ডিম

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের হ্যাচারিতে ডিম ফুটে কাছিমের বাচ্চার (ছানা) জন্ম হচ্ছে। আগামী এপ্রিল মাসে জেলার হ্যাচারিগুলোতে ১২ হাজার বাচ্চা জন্ম নেবে। পরের মে মাসে জন্ম নেবে আরও ১৫ হাজার। বর্তমানে ১২টি হ্যাচারিতে সংরক্ষিত আছে ২৯ হাজার ৯৫৪টি ডিম। কাছিম রক্ষায় সরকারি–বেসরকারি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসায় এমন সংরক্ষণ সম্ভব হয়েছে।

গত ১ জানুয়ারি থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত তিন মাসের বেশি সময়ে কাছিমের ৩০ হাজারের মতো ডিম সংগ্রহ করেন কক্সবাজার জেলার পরিবেশকর্মীরা। গভীর সমুদ্র থেকে সৈকতে এসে ডিমগুলো পেড়েছিল ২৪২টি মা কাছিম। সব কটি অলিভ রিডলে (জলপাই রং) প্রজাতির। তবে এর পাশাপাশি ডিম পাড়তে সৈকতে এসে মারা পড়ে ২০০টির মতো কাছিম। সমুদ্রবিজ্ঞানী ও পরিবেশবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িতদের দেওয়া তথ্য অনুয়ায়ী সাগরে পুঁতে রাখা মাছ ধরার জালে আটকা পড়ে এসব কাছিম মারা গেছে। এগুলো সৈকতে ডিম পাড়ার সুযোগ পেলে আরও অন্তত ১২ হাজার বাচ্চা পাওয়া যেত।

ডিম ফুটছে ১২ হ্যাচারিতে

সৈকতের বালিয়াড়ির গর্তে কাছিমের ডিম

কক্সবাজার উপকূলের বিপন্ন কাছিম সংরক্ষণে কাজ করছে বেসরকারি সংস্থা নেকম ও কোডেক। কাছিমের ডিম থেকে ছানা ফোটানোর জন্য নেকমের ছয়টি, কোডেকের পাঁচটি ও সরকারের সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের একটি হ্যাচারি রয়েছে। জেলার সৈকতের এই ১২টি হ্যাচারিতে ২৪২টি কাছিমের ২৯ হাজার ৯৫৪টি ডিম সংরক্ষিত আছে। এর মধ্যে ১৬ মার্চ প্রথম টেকনাফের লম্বরী সৈকতে কোডেকের একটি হ্যাচারিতে জন্ম নেয় ৩৪টি ছানা। ১৮ মার্চ বিকেলে ছানাগুলো সাগরে অবমুক্ত করা হয়।  

২০ বছরের বেশি সময় ধরে সৈকতে কাছিমের প্রজনন ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করছেন নেকমের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থাপক মো. আবদুল কাইয়ূম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সূর্যের তাপে বালুর নিচে রাখা ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে (জন্ম নিতে) সময় লাগে ৫৫ দিন থেকে ৭০ দিন। এ হিসাবে আগামী ২০ এপ্রিলের মধ্যে অন্তত ১২ হাজার এবং ১৫ মের মধ্যে আরও ১৫ হাজার কাছিমের বাচ্চা জন্ম নিতে পারে। প্রজননকালে হ্যাচারিতে কিছু ডিম নষ্ট হয়ে যায়।

বালুচরে জন্ম, বসবাস গভীর সমুদ্রে

কক্সবাজার সৈকতে কাছিমের ডিম সংরক্ষণ ও প্রজননের জন্য গড়ে তোলা একটি হ্যাচারি

কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের প্যাঁচার দ্বীপ সৈকতে ১ জানুয়ারি রাতে ডিম পাড়তে আসে অলিভ রিডলে প্রজাতির একটি মা কাছিম। ৭৬টি ডিম পেড়ে কাছিমটি পুনরায় গভীর সাগরে ফিরে যায়। ডিমগুলো সংরক্ষণ করা হয় নেকমের একটি প্রজনন হ্যাচারিতে। বৃহস্পতিবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বালুর নিচে সারবদ্ধ গর্তে রাখা হয়েছে আরও ১৯টি কাছিমের ২ হাজার ৩১৯টি ডিম। আগামী ১৫ এপ্রিলের মধ্যে ৬০ শতাংশ ডিম থেকে বাচ্চা জন্ম নিতে পারে।

গবেষকদের মতে, মা কাছিম বারবার ডিম পাড়তে একই স্থানে আসে। এমনকি জন্ম নেওয়া স্ত্রী কাছিমগুলো পূর্ণবয়স্ক হলে প্রজনন ঋতুতে ডিম পাড়তে জন্মভূমি কক্সবাজারে ছুটে আসবে। বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান গবেষক সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার বলেন, গভীর সমুদ্র থেকে ছুটে আসা মা কাছিম নির্জন সৈকতে বালুচরে উঠে প্রথমে ডানা দিয়ে বড়সড় গর্ত খোঁড়ে। তারপর সেই গর্তে ৬০ থেকে ১২০টি পর্যন্ত ডিম ছেড়ে বালু দিয়ে গর্তটি চাপা দেয়। তারপর ধীরে ধীরে আবার সাগরে নেমে যায়। প্রজনন মৌসুমে তারা দল বেঁধে বালুকাময় সৈকতে জড়ো হয় এবং বাসা (গর্ত) খুঁড়ে ডিম পাড়ে। প্রায় ১৯ বছর সাগরে বিচরণ শেষে যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয়, তখন স্ত্রী কাছিম ডিম পড়ার জন্য জন্মভূমিতে (সৈকতে) ফিরে আসে।

ডিম থেকে ফোটা কাছিমছানা সাগরের দিকে ছুটছে

সামুদ্রিক কাছিম উপকূলের ময়লা–আবর্জনা ও ক্ষতিকর জেলিফিশ খেয়ে সমুদ্রের পরিবেশ রক্ষা করে। কাছিম কমে গেলে উপকূলে মাছ কমে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। সমুদ্রের পরিবেশ রক্ষায় গবেষকেরা কাছিম রক্ষার ওপর গুরুত্ব দেন।

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের ডিএফও মো. আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন, ‘কাছিম ময়লা–আবর্জনা ও আগাছা খেয়ে সাগর পরিষ্কার রাখে। পাশাপাশি জেলিফিশ খেয়ে সমুদ্রের জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য বজায় রাখতে ভূমিকা রাখে। অথচ আমরা নিরীহ এবং উপকারী প্রাণীটি প্রতিনিয়ত নিধন করে চলেছি।’