Thank you for trying Sticky AMP!!

নানা বয়সী বইপ্রেমীরা একুশের বইমেলায় আসেন

বইমেলা এবার ৩১ দিনের

দিনে দিনে মেলার মেয়াদ যখন শেষ প্রান্তে, তখনই এল প্রকাশক ও গ্রন্থানুরাগীদের মন খুশি করা খবর। অমর একুশে বইমেলার মেয়াদ বাড়ানো হলো দুই দিন। অধিবর্ষ হওয়ায় এবার ফেব্রুয়ারি মাস ২৯ দিনের। সেই দিনটি বৃহস্পতিবার। পরে দুই দিন শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। বরাবরই ছুটির দিনে মেলায় লোকসমাগম বেশি হয়, বাড়ে বেচাবিক্রি। এ কারণে প্রকাশকেরা মেলার মেয়াদ দুই দিন বাড়ানোর আবেদন করেছিলেন।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা প্রথম আলোকে জানান, বাংলা একাডেমি প্রকাশকদের আবেদন নিয়মানুযায়ী সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। প্রধানমন্ত্রী প্রকাশকদের আবেদনে সাড়া দিয়ে মেলার মেয়াদ দুই দিন বৃদ্ধির অনুমোদন দিয়েছেন। ফলে এখন বইমেলা চলবে আগামী শনিবার ২ মার্চ পর্যন্ত।

‘বইমেলায় না এলে বাঁচা অর্থহীন’

অমর একুশের বইমেলায় না এলে বেঁচে থাকা অর্থহীন বলে মনে হয় বিশিষ্ট ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটনের কাছে। দীর্ঘকাল তিনি কানাডাপ্রবাসী। প্রাণের মেলা, বইমেলার টানে প্রতিবছর দেশে আসেন। গতকাল তাঁর সঙ্গে কথা হলো চন্দ্রাবতী একাডেমির স্টলে। সেখানেই তিনি বললেন, ‘মেলায় আমাদের লেখক, বুদ্ধিজীবী, সমাজচিন্তকদের চিন্তার প্রতিফলন প্রকাশিত হয়। সারা বছর তাঁরা দেশ, সমাজ, গণতন্ত্র, পরিবেশ, অর্থনীতিসহ যাবতীয় বিষয়ে যে ভাবনাচিন্তা করেন, সেসবই বই আকারে মেলায় আমাদের হাতে আসে। সৃজনশীলতার প্রকাশ হিসেবে পাই উপন্যাস, কবিতা, ছড়া—এসব। মেলায় এলে আত্মপরিচয়ের সংকট কাটিয়ে ওঠা যায়, বাঙালি হিসেবে নতুন করে উদ্দীপ্ত হওয়া যায়।’ তবে মেলায় যেসব নিম্নমানের বই প্রকাশিত হয়, যেসব বই সমাজ-জনমানসকে কলুষিত করে, সেসব বইয়ের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে তিনি অভিমত দেন। এবার চন্দ্রাবতী একাডেমি থেকে এসেছে তাঁর ছড়ার বই খরগোশটা গিটার বাজায়, কিন্ডার বুকস থেকে এসেছে আধখানা ভূত।

হুমায়ুন আজাদ স্মরণ

প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদ স্মরণে গতকাল বিকেল পাঁচটায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে তথ্যকেন্দ্রের সামনে লেখক-পাঠক ফোরাম স্মরণসভার আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট প্রকাশক ওসমান গনি। প্রধান অতিথি ছিলেন একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা; বক্তৃতা করেন কবি মোহন রায়হান, আসলাম সানী, প্রকাশক মাজহারুল ইসলামসহ অনেকে। তাঁরা হুমায়ুন আজাদের কাঙ্ক্ষিত অসাম্প্রদায়িক সমাজ-রাষ্ট্র গঠনের সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।

নতুন বই

মেলায় গতকাল নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে ৯৫টি। প্রথমা প্রকাশনের প্যাভিলিয়নে ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন জানান, জিয়াউদ্দিন এম চৌধুরীর লেখা দুই জেনারেলের হত্যাকাণ্ড: ১৯৮১-র ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান বইটি প্রচুর বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া আবীর শওকত হায়াতের ক্যারিয়ার ম্যানেজমেন্ট, আবুল মনসুর আহমদের আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর, আনু মুহাম্মদের অর্থশাস্ত্র: ইতিহাস দর্শন রাজনীতি, সৈয়দ শামসুল হকের উপন্যাস তিন পয়সার জ্যোৎস্না, বিশ্বজিৎ চৌধুরীর উপন্যাস অভিযুক্ত বেশ ভালো চলেছে।

অন্য নতুন বইয়ের মধ্যে অন্য প্রকাশ এনেছে ফরিদুর রেজা সাগরের কিশোর অ্যাডভেঞ্চার হাফ ডজন ছোটকাকু তারপরও হাফ ডজন ছোটকাকু, অ্যাডর্ন এনেছে সিরাজউদ্দিন সাথীর রাজনীতিবিষয়ক মাওলানা ভাসানী ও বেহাত বিপ্লব, চর্চা গ্রন্থপ্রকাশ এনেছে ইদ্রিস কাজলের প্রবন্ধ হুমায়ূন চরিত্রের মনস্তত্ত্ব, সৌম্য প্রকাশনী এনেছে আকিমুন রহমানের গল্প চুরি ফজিলতনামা বা অপূর্ণ কিচ্ছা, পুথিনিলয় এনেছে পূরবী বসুর গল্প রং-বেরঙের পাখি উড়ে গেলে, ঐতিহ্য এনেছে তালুকদার মনিরুজ্জামানের জীবনীবিষয়ক সংক্ষিপ্ত আত্মকথন, পঙ্খিরাজ এনেছে রফিকুল হক দাদুভাইয়ের শিশুতোষ গল্প সোনাপাখি জয়িতা, প্রতিভা এনেছে আমিরুল ইসলামের ছড়া যা দেখি তাই ছড়া হয়ে যায়, কথাপ্রকাশ এনেছে প্রশান্ত মৃধার প্রবন্ধ দড়াটানা ঘাট: সাহিত্যের ইশারা কিংবা হাতছানি।

সোহরাওয়ার্দী ও বাংলায় মুসলমানের রাষ্ট্রসাধনা

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। তিনি অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এবং অখণ্ড পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। বাংলায় মুসলমানের রাষ্ট্রসাধনারও প্রধান এক নেতা। কিন্তু তিনি বাংলাভাষীদের একাডেমিক জগতে ততটা উপস্থিত নন; মুসলমানের রাষ্ট্রসাধনার প্রশ্নেও তিনি প্রায় উদাসীনতার শিকার। আলতাফ পারভেজ তাঁর সোহরাওয়ার্দী ও বাংলায় মুসলমানের রাষ্ট্রসাধনা বইয়ে সেই শূন্যতা পূরণের চেষ্টা করেছেন। বইটি এবার মেলায় এনেছে বাতিঘর।

আলতাফ পারভেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছেন দর্শন বিষয়ে। ছাত্রজীবনে যুক্ত ছিলেন সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে। এখন দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস নিয়ে কাজ করেন। প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার-এ লেখালেখিতে তিনি নিয়মিত।