Thank you for trying Sticky AMP!!

ছাপা অক্ষরে প্রকাশিত যেকোনো বই এবার দৃষ্টি ও পঠনপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ব্যবহার উপযোগী করা সম্ভব হবে

যেকোনো বই দৃষ্টিপ্রতি ব্যক্তিদের উপযোগী করা যাবে

ছাপা অক্ষরে প্রকাশিত যেকোনো বই এবার দৃষ্টি ও পঠনপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ব্যবহার উপযোগী করা সম্ভব হবে। কপিরাইট জটিলতার কারণে দেশি-বিদেশি লেখকদের বই দেশের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ব্যবহার উপযোগী করা যাচ্ছিল না। এই বাধা দূর হয়েছে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মারাক্কেশ চুক্তি অনুসমর্থন করায়।

প্রতিবছর বিশ্বে লাখো বই প্রকাশিত হয়, যার মধ্যে ১ থেকে ৭ শতাংশ বই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, স্বল্প দৃষ্টি ও পঠনপ্রতিবন্ধী মানুষের ব্যবহার উপযোগী। দৃষ্টি ও পঠনপ্রতিবন্ধীদের জন্য ব্যবহার উপযোগী বই প্রণয়ন এবং এক দেশের ব্যবহার উপযোগী আধেয় (কনটেন্ট) অন্য দেশের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ব্যবহারের সুযোগ দিতে উদ্যোগ নেয় জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থা ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি অর্গানাইজেশন (ডব্লিউআইপিও)। মরক্কোর মারাক্কেশ শহরে ২০১৩ সালের জুন মাসে ডব্লিউআইপিওর কূটনৈতিক সম্মেলনে ‘মারাক্কেশ চুক্তি’ চূড়ান্ত করা হয়।

প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জন্য সুযোগ বাড়াতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মারাক্কেশ চুক্তি অনুসমর্থন করছে। বাংলাদেশের আগে এই চুক্তিতে প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা অনুস্বাক্ষর করেছে। মারাক্কেশ চুক্তি প্রথম কপিরাইট চুক্তি, যা মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে করা হয়েছে।

মারাক্কেশ চুক্তি কী
মারাক্কেশ চুক্তির মাধ্যমে  দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীসহ সব ধরনের পঠনপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ব্রেইল, অডিও অথবা বড় হরফে বই এবং দলিলাদি মুদ্রণ করা সম্ভব হয়। এ ক্ষেত্রে লেখকের অনুমতির প্রয়োজন হয় না। তবে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে এ কাজ করতে পারবে না।

বাংলাদেশের মারাক্কেশ চুক্তিতে অনুসমর্থনের বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা হয়েছে। ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে জাতিসংঘ ঘোষিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার সনদ বাস্তবায়নে গঠিত ‘জাতীয় পরিবীক্ষণ কমিটির’ সভাতে মারাক্কেশ চুক্তি অনুসমর্থন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়াও প্রতিবন্ধীবিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনায় মারাক্কেশ চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

গত ২৬ সেপ্টেম্বর জেনেভায় অবস্থিত ডব্লিউআইপিও সদর দপ্তরে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মোস্তাফিজুর রহমান সংস্থাটির মহাপরিচালক ড্যারেন টাংয়ের হাতে মারাক্কেশ চুক্তিতে বাংলাদেশের অনুস্বাক্ষরের দলিল হস্তান্তর করেন। দেশের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর পড়ার সুযোগকে অবারিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ১১৬তম দেশ হিসেবে এই চুক্তি অনুসমর্থন করেছে।

বাংলাদেশের এই চুক্তিতে অনুসমর্থনের বিষয়ে কাজ করেছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও আইসিটি বিভাগের বাস্তবায়নাধীন অ্যাসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রকল্পের ন্যাশনাল কনসালট্যান্ট (অ্যাকসেসিবিলিটি) ভাস্কর ভট্টাচার্য। তিনি নিজেও একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি।

ভাস্কর ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, মারাক্কেশ চুক্তি অনুসমর্থন দেশের পঠনপ্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য এক যুগান্তকারী অর্জন। এর মাধ্যমে সব ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি শিক্ষার সমান সুযোগ পাবে। এই চুক্তি অনুসমর্থনের ফলে জাতিসংঘের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সনদ ও জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ত্বরান্বিত হবে।

চুক্তিতে যে লাভ হবে
মারাক্কেশ চুক্তিতে অনুসমর্থনের ফলে দেশের প্রায় সাড়ে তিন লাখ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তির ডব্লিউআইপিওর ‘অ্যাক্সেসিবল বুক কনসোর্টিয়াম’–এর ৮ লক্ষাধিক বই পড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই সুযোগের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যে এটুআইয়ের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

রাশেদুজ্জামান চৌধুরী একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি। রাশেদ কাজ করেন বেসরকারি সংস্থা ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশনে (ইপসা)। তিনি বলেন, ‘এত দিন কপিরাইট বাধার কারণে অনেক বই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের ব্যবহার উপযোগী করা যেত না। ফলে বইয়ের চাহিদা এবং ব্যবহার উপযোগী করার সুযোগ থাকলেও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা বঞ্চিত হচ্ছিলেন। এখন দেশ-বিদেশের যেকোনো বিখ্যাত লেখকের বই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের ব্যবহার উপযোগী করা যাবে।’

Also Read: আমাদের জন্য দুই-একটা বই করলে ক্ষতি হতো না

মারাক্কেশ চুক্তির শর্ত অনুযায়ী বাংলাদেশের কপিরাইট আইনে পরিবর্তন আনতে হবে। যাতে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য ব্যবহার উপযোগী বই তৈরির ক্ষেত্রে কপিরাইট কোনো বাধা না হয় বা কপিরাইটের শর্তাবলি শিথিল করা হয়। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কপিরাইটের বিষয়টি দেখভাল করে। ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে কপিরাইট আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, মারাক্কেশ চুক্তিতে অনুসমর্থনের মধ্য দিয়ে দেশের দৃষ্টি ও পঠনপ্রতিবন্ধীদের বাধামুক্ত তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত হয়েছে। একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী আইন ‘কপিরাইট আইন ২০২২’ প্রণীত হতে যাচ্ছে। অতি দ্রুত আইনটি বিল আকারে পাসের লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হবে। কপিরাইট আইন পাসের মাধ্যমে মারাক্কেশ চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন হবে। আইনটির ৫১ ধারা ও ৭০ (২) উপধারায় এ–সংক্রান্ত অনুচ্ছেদ সন্নিবেশিত হয়েছে।

দেশের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য কয়েক বছর ধরে মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক ও অ্যাক্সেসিবল ডিকশনারি তৈরি করছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ও এটুআই। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বছরের শুরুতে ব্রেইল পদ্ধতির পাঠ্যপুস্তক বিতরণ ও আইসিটি ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মারাক্কেশ চুক্তিতে অনুসমর্থনের ফলে সব ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিক্ষায় সমান সুযোগ তৈরি হবে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৪ নম্বর অভীষ্ট সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতের লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ একধাপ এগিয়ে যাবে।

আরও পড়ুন: ব্রেইল-পাঠ্যবই, যে সংকটের শেষ নেই