Thank you for trying Sticky AMP!!

অনলাইনের সুসময়, পণ্য বিক্রির চাপ

প্রতীকী ছবি

করোনাভাইরাস সুসময় নিয়ে এসেছে অনলাইন-ভিত্তিক পণ্য বিক্রেতাদের জন্য। আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে অনেকে বিপণিবিতান ও বাজারে না গিয়ে অনলাইনে পণ্য কেনা বাড়িয়েছেন। হঠাৎ বাড়তি চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন বিক্রেতারা।

প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে যারা এত দিন অনলাইনে সামান্য পণ্য সরবরাহ করত, তারাও এখন সক্ষমতা বাড়িয়েছে। কেউ কেউ নতুন করে অনলাইনে বিক্রি শুরু করেছে। কারও কারও দোকান বন্ধ থাকলেও বাসায় পণ্য পৌঁছে দিচ্ছে।

দেশে গত ৮ মার্চ করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর অনলাইনে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনাকাটার চাপ শুরু হয়। ২৬ মার্চ সাধারণ ছুটি শুরুর পর অনলাইনে বেচাকেনা বেশ ভালো হয়েছে। এখন শুরু হয়েছে পবিত্র ঈদুল ফিতরের পোশাক কেনাকাটা। তার সঙ্গে মুঠোফোন, মুঠোফোনের সরঞ্জাম, টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর, ওয়াশিং মেশিন, গৃহস্থালীর বিভিন্ন উপকরণ অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে অনেক বেশি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এবার ঈদে মোট কেনাবেচায় একটি উল্লেখযোগ্য হিস্যা দখল করবে অনলাইন।

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সভাপতি শমী কায়সার গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, করোনাভাইরাসের আতঙ্ক ক্রেতাদের কেনাকাটা ও লেনদেনের মাধ্যমে একটা বড় পরিবর্তন আনছে। আগে বেশির ভাগ মানুষ শুধু কাপড়চোপড় ও ফ্যাশনসামগ্রী অনলাইনে কিনতেন। এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, ওষুধ, ইলেকট্রনিক পণ্য ইত্যাদি কেনাকাটা বেড়েছে। আগে টাকা পরিশোধ করা হতো ডেলিভারি পারসনের (যিনি পৌঁছে দিয়ে যান) কাছে নগদে। এখন ডিজিটাল লেনদেন বেড়েছে।

ই-ক্যাবের হিসাবে, তাদের সদস্যসংখ্যা ১ হাজার ২০০। বছরে বিক্রির পরিমাণ আট হাজার কোটি টাকার মতো। অবশ্য এর বাইরে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছোট ছোট পণ্য বিক্রেতা রয়েছে। আবার দোকানমালিকেরা অনেকেই অনলাইনে পণ্য বিক্রি করেন। তাঁদের অনেকেই আবার সুপরিচিত অনলাইন মার্কেট প্লেস বা কেনাবেচার মাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত।

>

ক্রেতা কয়েক গুণ বেড়েছেন
হঠাৎ বাড়তি ক্রয়াদেশ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন অনলাইনভিত্তি পণ্য বিক্রেতারা

এমনই একটি বড় মার্কেট প্লেস দারাজ কর্তৃপক্ষ প্রথম আলোকে জানায়, সাধারণ ছুটির মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বিক্রি দু-তিন গুণ বেড়েছে। বিলাসপণ্য ও ইলেকট্রনিক পণ্যের বিক্রি কমেছে। তাদের ৬০ শতাংশ ক্রেতা জেলা শহরের। বাকি ৪০ শতাংশ মফস্বলের। ক্রেতাদের বেশির ভাগের বয়স ১৮ থেকে ৪৫ বছর।

দারাজ বলছে, তাদের ঈদ ক্যাম্পেইন (ঈদ শপিং ফেস্ট) মাত্র গতকাল মঙ্গলবার শুরু হয়েছে। ফলে কয়েক দিন পরে বোঝা যাবে ঈদের কেনাকাটার প্রবণতা কী রকম।

পোশাকের ব্র্যান্ড আড়ং ও ইয়েলো জানিয়েছে, অনলাইনে তাদের বিক্রি বেড়েছে বহুগুণ। আড়ংয়ের প্রধান পরিচালক কর্মকর্তা আশরাফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত বছর এই সময়ে আমরা দিনে দেড় শর মতো ক্রয়াদেশ পেতাম। এখন সেটা দেড় হাজারে উন্নীত হয়েছে।’ তিনি বলেন, এর কারণ করোনাভাইরাস।

ইয়েলোর হেড অব রিটেইল হাদী এস এ চৌধুরী বলেন, তাঁদের অনলাইনে বিক্রি অন্তত ছয় গুণ বেড়েছে। এ কারণে সময়মতো পণ্য পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ছয় দিনের আগে পণ্য পৌঁছে দিতে পারছে না। তিনি জানান, ইয়েলো নিজেরা অনলাইনে কিছু পণ্য সরবরাহ করে। বাকিটা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পৌঁছায়।

বাড়তি চাপের কারণে বিপাকে থাকার কথা বলছে অন্যরাও। তারা বলছে, তাদের যে পরিমাণ ক্রয়াদেশ আসছে, সে অনুযায়ী সরবরাহকারী কর্মী নেই। ফলে খুব কমসংখ্যক প্রতিষ্ঠানই ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পণ্য পৌঁছে দিতে পারছে। কুরিয়ার সার্ভিসগুলোও চাপ নিতে পারছে না। আবার অনেক এলাকায় সরবরাহকারীকে ঢুকতে দেন না এলাকার নিরাপত্তাকর্মীরা। দারাজ জানিয়েছে, রাইডার বা ডেলিভারিম্যানরা সবাই এখনো পুরোপুরি কাজে ফেরেননি। যে কারণে সীমিত জনবল নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। সরবরাহের সময় এ কারণে কিছুটা বাড়তি লাগছে।

অনলাইনে বিক্রি বেড়েছে মুঠোফোন ও ইলেকট্রনিক পণ্যও। ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদনকারী ওয়ালটনের অনলাইনে বিক্রি পাঁচ গুণ বেড়েছে বলে জানালেন প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ তানভীর রহমান।

তবে স্যামসাং ব্র্যান্ডের পণ্য উৎপাদনকারী ফেয়ার ইলেকট্রনিকসের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে অনলাইনে পণ্য বিক্রির বাজার খুব ছোট। ফলে এটা যদি শতভাগ বৃদ্ধি পায়, তারপরও তা চোখে পড়ে না। তিনি বলেন, ‘এবার আমরা একটা ব্যবস্থা করেছি, অনলাইনে কিনলে স্থানীয় স্যামসাং পণ্য বিক্রেতা ক্রেতার কাছে পণ্য পৌঁছে দেবে। অথবা ক্রেতা গিয়ে সেখান থেকে নিয়ে আসবেন। এটা গত রোববার পর্যন্ত বেশ ভালো চলেছে। এখন দোকান থেকেই পণ্য বিক্রি হচ্ছে।’

ডেলিভারি পারসন বা সরবরাহকারী কর্মীর অভাব, কুরিয়ার সার্ভিসের ওপর চাপ, পণ্যের অভাব ও দোকান খুলতে না পারায় কারও কারও অনলাইনে বিক্রি বন্ধও আছে। ই-ক্যাবের সভাপতি শমী কায়সার বললেন, ই-কমার্সভিত্তিক ব্যবসায়ীর ২৬ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা। তারা খুব সমস্যায় আছে। এ বিষয়ে সরকারের কাছে কিছু নীতিসহায়তা দরকার।

আজিজ মার্কেট খুলেছে

ঢাকায় বই ও পোশাকের জন্য সুপরিচিত বিপণিবিতান আজিজ সুপার মার্কেট খুলেছে। গতকাল মঙ্গলবার সেখানকার বই ও পোশাকের দোকানগুলোতে বেচাকেনা শুরু হয়।

যদিও সরকার গত রোববার থেকেই দোকানপাট খোলার সুযোগ দিয়েছে। আজিজ মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির সভাপতি নাজমুল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশের পক্ষ থেকে যেসব সুরক্ষাব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, সেটার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নেওয়ার পরই দোকানপাট খুলেছি।’ তিনি জানান, ক্রেতাদের প্রত্যেকের মুখে মাস্ক থাকা বাধ্যতামূলক। বিক্রেতারাও মাস্ক পরছেন। ভিড় হলে মানুষ যাতে শৃঙ্খলা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কেনাকাটা করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে আজিজ মার্কেটের ভেতরে ও বাইরে বৃত্ত এঁকে দেওয়া হয়েছে। ঢুকতে হচ্ছে এক দিক দিয়ে। বের হতে হচ্ছে আরেক দিক দিয়ে।

গতকাল বেলা দুইটার দিকে গিয়ে দেখা যায়, মার্কেটে ঢোকার মুখে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী (পিপিই) পরা নিরাপত্তাকর্মীরা সবাইকে হাত ধুতে বাধ্য করছেন। এরপর জীবাণুনাশক চেম্বারের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে, যেখানে শরীরে জীবাণুনাশক ছিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে।