Thank you for trying Sticky AMP!!

আবার ক্রয়াদেশ হারানোর শঙ্কা

শরৎ ও শীতের ক্রয়াদেশ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিদেশি ক্রেতারা। লকডাউনে কারখানা বন্ধ হলে ক্রয়াদেশ মিলবে না, বলছেন ব্যবসায়ীরা।

পোশাক কারখানার শ্রমিক

করোনার সংক্রমণ রোধে আগামী বুধবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য সর্বাত্মক লকডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। জরুরি সেবা ছাড়া সবকিছু বন্ধ রাখার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন একাধিক মন্ত্রী। সেটি হলে শিল্পকারখানাও বন্ধ থাকবে। এমন ইঙ্গিত পেয়ে নতুন করে ব্যবসা হারানোর দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তৈরি পোশাকশিল্প মালিকেরা।

পোশাক রপ্তানিকারকেরা বলেছেন, এ সময় শরৎ ও শীত মৌসুমের পোশাকের ক্রয়াদেশ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিদেশি ক্রেতারা। এখন লকডাউনের কারণে কারখানা বন্ধ হলে সেই ক্রয়াদেশ পাওয়া যাবে না। ক্রয়াদেশ চলে যাবে প্রতিযোগী দেশগুলোয়। আবার চলমান ক্রয়াদেশের পণ্য সরবরাহ করার জন্যও বাড়তি সময় দেবেন না ক্রেতারা। ফলে ক্রয়াদেশ বাতিল, মূল্যছাড় বা আকাশপথে পণ্য পাঠানোর মতো নির্দেশনা দেবেন তাঁরা। সেটি হলে নতুন করে আবার পোশাক খাত কঠিন বিপদে পড়বে। তা ছাড়া কারখানা বন্ধ হলেই শ্রমিকেরা গ্রামের বাড়ির দিকে ছুটবেন। তাতে করোনা সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।

এদিকে লকডাউনে কারখানা বন্ধ রাখার পরিকল্পনা জানার পর থেকেই সরকারের সঙ্গে দেনদরবার শুরু করেছে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর নেতারা। আজ রোববার বিকেলে বিষয়টি নিয়ে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের সঙ্গে তাঁদের একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। তারপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে মন্তব্য করেন বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।

করোনার প্রথম ধাক্কায় গত বছরের এ সময়ে ৩১৮ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানির ক্রয়াদেশ প্রাথমিকভাবে বাতিল ও স্থগিত হয়েছিল। পরে নানামুখী চাপের কারণে অধিকাংশ ক্রেতাই পণ্য নিতে সম্মত হন। তবে অর্থ পরিশোধে ছয় মাসের বেশি সময় চান। চলতি বছর পরিস্থিতি পুরোপুরি ভিন্ন। ইতিমধ্যে অনেক ক্রেতাই পোশাকশিল্প মালিকদের আগেভাগেই বলছেন, লকডাউনের কারণে সময়মতো পণ্য রপ্তানি না হলে তাঁরা দায়দায়িত্ব নেবেন না।

বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রামের ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ (গতকাল) সারা দিনে ২০ জন ক্রেতার সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁরা প্রত্যেকেই বলেছেন, লকডাউনে কারখানা বন্ধ হলে তাঁরা কোনো দায়দায়িত্ব নেবেন না।’ তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ কয়েক মাস পর ১২ এপ্রিল লকডাউন তুলে নিচ্ছে যুক্তরাজ্য। দেশটির ক্রেতারা নতুন ক্রয়াদেশ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ ছাড়া আগামী শরৎ ও শীতের ক্রয়াদেশ আসার ভরা মৌসুম এখন। বাচ্চাদের স্কুলের পোশাকের বিপুল ক্রয়াদেশও আসার সময়। ইস্টার সানডের ছুটি শেষে সেটি নিয়েই কাজ করছেন ইউরোপসহ অন্যান্য দেশের ক্রেতারা। এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কারখানা বন্ধ থাকলে কেউ ক্রয়াদেশ দেবেন না। পরিস্থিতির কবে উন্নতি হবে, সেটিও অনিশ্চিত। ফলে ক্রেতারা তাঁদের ব্যবসা নিশ্চিত করতে আমাদের প্রতিযোগী দেশে ক্রয়াদেশ দেবেন।’

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে গত বছরের মার্চে একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত করা হয়। অন্যদিকে দেশেও ভাইরাসটির সংক্রমণ রোধে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার পর মাসখানেক কারখানা বন্ধ থাকে। সে কারণে গত বছরের এপ্রিলে মাত্র ৩৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়, যা গত দুই দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। পরের মাসে রপ্তানি হয় ১২৩ কোটি ডলারের পোশাক। তারপর ধীরে ধীরে খাতটি ঘুরে দাঁড়াতে থাকে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ২ হাজার ৩৪৯ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে আড়াই শতাংশ কম।

পোশাকশিল্পের কয়েকজন উদ্যোক্তা জানান, বর্তমানে অধিকাংশ কারখানা ৭০-৮০ শতাংশ সক্ষমতায় চলছে। কিছু কারখানার অবস্থা খারাপ থাকলেও অনেক কারখানাতেই আগামী কয়েক মাস ভরপুর কাজ রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষস্থানীয় এক বিদেশি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ প্রধান প্রথম আলোকে বলেন, মানবাধিকার ইস্যুতে চীনের তুলার ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অনেক ক্রেতার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। মিয়ানমারে চলছে অস্থিরতা। তাতে বাংলাদেশ অন্যদের তুলনায় ভালো ক্রয়াদেশ পাচ্ছিল। গতবারের লোকসান কাটিয়ে ওঠার জন্য মুখিয়ে আছেন বিদেশি ক্রেতারা। ফলে তাঁরা যেকোনো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে খুব বেশি চিন্তাভাবনা করবেন না, যেটি বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে না।

এদিকে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ কমার কোনো লক্ষণ নেই। গতকালও ৭৭ জন নিহত ও ৫ হাজার ৩৪৩ জন নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় নতুন করে কঠোর লকডাউনের দিকে যাচ্ছে সরকার।

জানতে চাইলে প্লামি ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘তৈরি পোশাকের ক্রেতা ও আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো লকডাউন মুডে নেই। ফলে ক্রয়াদেশ আসার এই ভরা মৌসুমে লকডাউনে গেলে আমরা একা হয়ে যাব। ক্রেতারা এটির সুযোগ নেবেন।’ তিনি আরও বলেন, গত বছর কারখানা বন্ধের পর লাখ লাখ শ্রমিক গ্রামের দিকে চলে গিয়েছিলেন। এবার সেটি হলে সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বাড়বে। তার চেয়ে কারখানার ভেতরে থাকলে শ্রমিকেরা নির্দিষ্ট জায়গার ভেতরে থাকবেন।